দাপট: সভা উপলক্ষে লাগানো হয়েছে দেদার মাইক। রবিবার, ময়দানে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক-সহ সব ধরনের বোর্ডের পরীক্ষা শুরুর তিন দিন আগে থেকে পরীক্ষা শেষ না-হওয়া পর্যন্ত খোলা জায়গায় কোনও মাইক্রোফোন, লাউডস্পিকার, সাউন্ড বক্স ব্যবহার করা যাবে না। শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ আইনের ক্ষমতাবলে এমনই নির্দেশিকা জারি করেছিল রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। তাতে আরও বলা হয়েছে, পরীক্ষা চলাকালীন এ রকম কোনও সভা বা অনুষ্ঠানের
জন্য জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, সংশ্লিষ্ট জেলা পুলিশ এবং কলকাতা পুলিশও যেন অনুমতি না দেয়। এমনকি, ওই সময়ে নিয়ম ভেঙে সভা অথবা অনুষ্ঠান করা হলে সঙ্গে সঙ্গে আয়োজকের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করার কথাও বলা রয়েছে ওই নির্দেশিকায়।
কিন্তু সেই নির্দেশিকাকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রবিবার শহিদ মিনার ময়দানে ‘অমিত-বিক্রমে’ সভা করল বিজেপি, যেখানে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলেও চলছে আইসিএসই এবং সিবিএসই বোর্ডের পরীক্ষা। কিছু দিন পরে শুরু হচ্ছে উচ্চ মাধ্যমিকও। পরীক্ষার সময়ে মাইক বাজানো নিয়ে শব্দ-আইনের বিধিনিষেধ সত্ত্বেও কী ভাবে এই সভা হল, তা নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে কলকাতা পুলিশ এবং রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। এমনকি প্রতি বছর কালীপুজো-দীপাবলির সময়ে শব্দবিধি ভাঙা নিয়ে সরব হয় যে সমস্ত সংস্থা, চুপ রয়েছে তারাও।
শব্দবিধি নিয়ন্ত্রণের সেই নির্দেশিকার প্রতিলিপি।
বিজেপির যদিও দাবি, এই সভার জন্য রাজ্য সরকার মৌখিক ভাবে তাদের অনুমতি দিয়েছে। সভায় মাইক লাগানোর দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার এক মুখপাত্রও বলছেন, ‘‘নিয়ম মেনেই অডিয়ো ব্যবস্থায় সাউন্ড লিমিটর লাগানো হয়েছে।’’ কিন্তু সাউন্ড লিমিটর তো পরের ধাপ। যে সময়ে সভার আয়োজন করাটাই নিষিদ্ধ, সেখানে কী ভাবে অমিতের এই সভা করা হল, সেই প্রশ্ন তুলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিশ্বনাথ চক্রবর্তী। তাঁর বক্তব্য, ‘‘পরীক্ষার মরসুমে এ রকম সভা হতে পারবে না, এই আইন তো রয়েছে। রাজ্য সরকার সেই আইন মেনেই সভা না-হওয়াটা নিশ্চিত করতে পারত।’’ আর এক রাজনৈতিক বিশ্লেষকের কথায়, ‘‘এখানে রাজনীতির কোনও বিষয় নেই। শব্দ-আইনেই এই সভার আয়োজন নিয়মবিরুদ্ধ।’’
রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের আবার বক্তব্য, সভার অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি পুলিশের এক্তিয়ারভুক্ত। ২০১৩ সালে ওই নির্দেশিকায় সামান্য পরিবর্তন করে পরীক্ষা চলাকালীন আবাসিক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এলাকায় বাজানো যাবে না বলা হয়েছিল। কিন্তু গত কালীপুজোর সময় শব্দবিধি ভাঙার ক্ষেত্রে ‘এনভায়রনমেন্ট প্রোটেকশন অ্যাক্ট’-এর ১৫ নম্বর ধারা অনুযায়ী আধিকারিকদের স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এফআইআর দায়ের করার ক্ষমতা দিয়েছিল পর্ষদ। সেই ক্ষমতাবলেই অমিত-সভায় শব্দবিধি মানার বিষয়টি কি পর্ষদ এ দিন দেখেছে? সে ব্যাপারে উত্তর দেননি পর্ষদের কর্তারা। পরিবেশমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র শুধু বলছেন, ‘‘সভায় শব্দবিধি মানা হয়েছে কি না, তা রাজ্য সরকার খতিয়ে দেখবে।’’
মাইক্রোফোন, লাউডস্পিকার-সহ যে কোনও অডিয়ো ব্যবস্থায় সাউন্ড লিমিটর লাগানো নিয়ে জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ এই সভায় মানা হয়েছে কি না, সে প্রসঙ্গে পর্ষদের মতোই নিরুত্তর কলকাতা পুলিশও। পরিবেশকর্মীদের একাধিক সংগঠন, যারা কালীপুজোর সময়ে শব্দবিধি লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে সক্রিয় থাকে, তারাও পরীক্ষার সময়ে এই সভা করা নিয়ে কোনও প্রশ্ন তোলেনি।
কেন? বিজেপি নেতাদের একাংশ নিজেদের মধ্যে রসিকতা করে বলছেন, ‘অমিত-বিক্রমের’ কারণেই এই নীরবতা। এক বিজেপি নেতার কথায়, ‘‘খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসেছেন। সভা কে আটকাবে?’’