ফাইল ছবি
বঙ্গজীবনে এমন উত্তেজনার ইতিহাস সম্ভবত নেই। সীমিত ওভারের রুদ্ধশ্বাস ক্রিকেটে ‘আস্কিং রেট’-এর জটিল অঙ্ক দেখা গিয়েছে। তবে এমন অঙ্ক পাঠ্যসূচিতে ছিল না।
রাত জেগে ইডি-র টাকা উদ্ধারের শেষতম খবর নিয়ে ভ্যাবাচ্যাকা বাঙালি একটা পর্যায়ে প্রবাদপ্রতিম কেশবচন্দ্র নাগকেও স্মরণ করেছে।
নব কেসি নাগের নতুন অঙ্ক, দশ জন ব্যাঙ্ককর্মী দিনে একুশ কোটি টাকা গণনা করিতে পারে। প্রথম দিন সাত জন ব্যাঙ্ক কর্মী কিছু টাকা গণনা আরম্ভ করিল। তৃতীয় দিন উহাদের মধ্যে তিন জন পদত্যাগ করিল। পঞ্চম দিন আবার নতুন দুই জন যোগদান করিল। অষ্টম দিন পর্যন্ত গণনা হওয়া টাকার পরিমাণ কত?
উত্তর যা-ই হোক, বাঙালির এই অবস্থাটা ব্যাখ্যা করে সমাজমাধ্যমে কার্ল মার্ক্সের বিখ্যাত উদ্ধৃতিও শোনা যাচ্ছে। প্রথম বার যা ট্র্যাজেডি মনে হয়েছিল, পরের বার তা প্রহসন (ফার্স) বলে। প্রথম বার ঘরময় ছড়ানো নগদ ২২ কোটি দর্শনের বিস্ময়ের পরে ফের বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাটে প্রায় ২৮ কোটির খবর জেনেছে বাঙালি। আরও কত ফ্ল্যাটে তল্লাশি বাকি, কে জানে। সব দেখে প্রাথমিক বিস্ময়ের পরে রাগ, কৌতুক, বিবমিষা— অনুভূতির খিচুড়ি। কেউ কেউ বলছেন, তেত্রিশ কোটি দেবদেবীকে (যদিও সংস্কৃতে প্রকৃত অর্থে কোটি মানে ৩৩ প্রকার বা ৩৩ গুণসম্পন্ন) কবেই ছাপিয়ে গিয়েছে বেআইনি আয়ের টাকা, এ বার কি তা দেশের জনসংখ্যাও টপকে যাবে?
শুধু পার্থ চট্টোপাধ্যায় নন, শাসক দলের প্রতি ক্ষোভও মালুম হচ্ছে। প্রায় পুরোটা ডুবে থাকা দু’টি হিমশৈলের চুড়োর ছবিতে লেখা হয়েছে টালিগঞ্জ এবং বেলঘরিয়া। এবংহিমশৈলের জলের নীচে থাকা অংশটিকে বলা হচ্ছে ‘কালীঘাট’। কারও মন্তব্য, লোকে টাকা জমিয়ে ফ্ল্যাট কেনে, এরা তো ফ্ল্যাট কিনেছে টাকা রাখার জন্য। এমনও বলা হচ্ছে, এত দিন মহারাষ্ট্রে শিবসেনার বিধায়ক কেনার টাকার অঙ্ক শুনে পিলে চমকাচ্ছিল, রাজ্যের মন্ত্রীর ‘নোটেগাছ’টিতে বাঙালি হিসেবে মান বাঁচল।
সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বলছিলেন, ‘‘এত টাকা দেখে সত্যিই বাঙালিকে অচেনা লাগে। চারপাশে টাকার লোভ নতুন নয়। তবু টাকাই জীবনের সব নয়, এ-ও তো বার বার লিখেছি।’’ শীর্ষেন্দুর একটি পুরনো গল্পের উদ্ধৃতিও ‘ভাইরাল’ এই টাকা-চর্চার দিনে। ‘লোকটা গরিব, বুঝলেন! খুবই গরিব। যাচ্ছেতাই রকমের গরিব মশাই...আসলে টাকা ছাড়া লোকটার আর কিছু নেই।’