ফাইল চিত্র।
ডিজ়েলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে রাস্তায় সরকারি বাসের সংখ্যা এমনিতেই কমতে শুরু করেছিল। এ বার রক্ষণাবেক্ষণ খাতে বরাদ্দ না মেলায় অচিরেই পরিষেবায় তার আঁচ পড়তে পারে বলে আশঙ্কা। একাধিক সরকারি পরিবহণ নিগমের বাস পরিচ্ছন্ন রাখা-সহ জরুরি রক্ষণাবেক্ষণের কাজে নিযুক্ত বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার বকেয়া কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে। পরিস্থিতি এমনই যে, ইঞ্জিন এবং গাড়ির ব্রেক রক্ষণাবেক্ষণের মতো অতি জরুরি কাজেও অর্থের সংস্থান নেই। যার ফলে একাধিক বেসরকারি সংস্থা কাজ বন্ধের কথা জানিয়েছে। সঙ্কট চলতে থাকলে সরকারি বাসের সংখ্যা তলানিতে ঠেকতে পারে।
অতিমারি পরিস্থিতিতে আর্থিক সঙ্কটের কারণে গত বছর পরিবহণ খাতে বাজেট বরাদ্দ কাটছাঁট করা হয়েছিল। নিগমগুলির পরিকল্পনা খাতে সারা বছরের বরাদ্দের কার্যত অর্ধেক টাকা মিলেছিল। ওই খাতের টাকাই রক্ষণাবেক্ষণে ব্যবহৃত হয়। প্রতি তিন মাস অন্তর যে অর্থ দেওয়া হয়, সেই টাকার শেষ দুই কিস্তি মেলেনি। এক মাসের বেশি কেটে গেলেও নতুন অর্থবর্ষের প্রথম কিস্তির টাকা এখনও ঢোকেনি। ফলে সঙ্কট তীব্র হচ্ছে। শুধু রাজ্য পরিবহণ নিগমেরই রক্ষণাবেক্ষণ খাতে বকেয়া সাত কোটি টাকায় ঠেকেছে। বকেয়ার পাহাড় জমছে কলকাতা রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম, ট্রাম কোম্পানি এবং ভূতল পরিবহণ নিগমের ক্ষেত্রেও। পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, সরকারি বাস চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় ডিজ়েলের খরচ যাত্রী-ভাড়ার টাকায় জোগাতে হয়। বাসভাড়া না বাড়ানোয় নিগমগুলির আয় সে ভাবে বাড়েনি। অথচ ডিজ়েলের দাম লাফিয়ে বাড়তে থাকায় নিগমগুলির তেল কেনার ক্ষমতা কমছে। গুরুত্বপূর্ণ ডিপোয় পাঁচ দিনে এক ট্যাঙ্কার তেল দেওয়া হচ্ছে। অন্যত্র এক সপ্তাহ বা আরও দেরিতে ট্যাঙ্কার পৌঁছচ্ছে। ব্যস্ত সময়ে কমবেশি ৪০০ বাস রাস্তায় নামলেও দুপুরে সেই সংখ্যা এক-তৃতীয়াংশে ঠেকছে। বিকেলে বাস কিছুটা বাড়লেও সন্ধ্যার পরে সেই সংখ্যা কমছে।
রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পর পর বাস বসে যেতে শুরু করলে পরিষেবা মুখ থুবড়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন আধিকারিকেরাই। ব্রেকের যন্ত্রাংশের সরবরাহ কমছে। গরমে এসি বাস চালিয়ে বাড়তি আয় হয় নিগমের। কিন্তু, সেগুলিরও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ। ৭৫টি বৈদ্যুতিক বাস চালিয়েও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাচ্ছে না বলে দাবি। পরিবহণ দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘সরকারি বাসের উপরে যাত্রীদের অনেকেই নির্ভরশীল। টাকার অভাবে পরিকাঠামো দিন দিন রুগ্ণ হওয়ায় পরিষেবার উপরে চাপ বাড়ছে।’’ বরাদ্দ কবে মিলবে? দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘তোড়জোড় শুরু হয়েছে। দ্রুত তা এসে পৌঁছবে।’’