Kolkata Metro

বিধি শিকেয় তুলে মেট্রোর ভিড় আগের মেজাজেই

প্ল্যাটফর্মে প্রবেশের আগে স্যানিটাইজ়ারের ব্যবহারও করছেন না অধিকাংশ যাত্রী। মেট্রোর আরপিএফ কর্মীরাও এ নিয়ে যাত্রীদের কিছু বলছেন না বলে অভিযোগ।

Advertisement

ফিরোজ ইসলাম 

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৬:৪৭
Share:

বেলাগাম: কোথায় দূরত্ব-বিধি! ঠাসাঠাসি করে আসন দখলে রেখেই মেট্রো যাত্রা চলছে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

সতর্কতার কোনও পরোয়াই করছেন না মেট্রোযাত্রীদের একাংশ। ভিড় যত বাড়ছে, দূরত্ব-বিধি মানার অভ্যাসও ততই যেন পাল্লা দিয়ে কমছে। কামরায় উঠেই আসন দখলের লড়াইয়ে নেমে পড়ছেন যাত্রীদের অনেকে। এমনকি, প্রবীণদের আসনও মুক্ত থাকছে না। মহিলা যাত্রীদের সংখ্যা বাড়তে থাকায় অধিকাংশ কামরায় তাঁদের আসনও প্রায় কানায় কানায় ভর্তি থাকছে। ভিড়ের চাপে অনেককেই সীমিত পরিসরে ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়াতে হচ্ছে। বেপরোয়া যাত্রীদের একাংশের এ হেন আচরণের ফলে প্রায়ই বিভিন্ন ট্রেনে বচসার উপক্রম হচ্ছে। দূরত্ব-বিধি মানার ব্যাপারে কেউ তৎপর হলে যাত্রীদেরই একাংশ তাঁকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ। যাত্রীদের অনেকেরই দাবি, পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক। তাই করোনা-বিধি মানার প্রয়োজন নেই।

Advertisement

প্ল্যাটফর্মে প্রবেশের আগে স্যানিটাইজ়ারের ব্যবহারও করছেন না অধিকাংশ যাত্রী। মেট্রোর আরপিএফ কর্মীরাও এ নিয়ে যাত্রীদের কিছু বলছেন না বলে অভিযোগ। এমনকি, কামরার ভিতরে মাস্কও খুলে ফেলছেন কেউ কেউ। সমস্যার কথা আরপিএফ বা মেট্রোকর্মীদের জানালে তাঁরাও বুঝে উঠতে পারছেন না, কী করণীয়। ঠারেঠোরে কার্যত মানিয়ে নেওয়ার পরামর্শই দিচ্ছেন তাঁরা। যাত্রীদের একটি অংশের এ হেন আচরণে ক্ষুব্ধ অনেকেই মেট্রোর আসনে দূরত্ব-বিধি মেনে বসার জন্য দেওয়া ক্রস চিহ্নের স্টিকার তুলে দিতে বলছেন। তাঁদের প্রশ্ন, বিধি না-মানা লোকজনের সংখ্যাই যেখানে বেশি, সেখানে বিধি রেখে লাভ কী ? এমনকি, পরিস্থিতি এমনই পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, ই-পাস উঠে যাওয়ার খবর পেয়ে যাত্রীদের একাংশ স্টেশনের টিকিট কাউন্টারে গিয়ে টোকেন দাবি করছেন। স্মার্ট কার্ড ছাড়া মেট্রোয় যাতায়াত সম্ভব নয় জানালে তাঁরা পাল্টা বলছেন, পরিস্থিতি তো দিব্যি স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে।

দিন কয়েক আগে গীতাঞ্জলি মেট্রো স্টেশন থেকে এসপ্লানেডে আসছিলেন একটি ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থার কর্মী রাজীব বর্মণ। মাস্টারদা সূর্য সেন এবং পরে নেতাজি স্টেশন থেকে পর পর কয়েক জন উঠে সব ক’টি আসনেই বসে পড়েন। রাজীবের আসনে সাত জন এবং মুখোমুখি আসনে আরও ছ’জন বসে পড়েন। প্রতিবাদ করতে গিয়ে কার্যত কোণঠাসা হয়ে পড়েন তিনি। বচসায় উদ্যত যাত্রীদের এক জন নিজেকে রেলকর্মী বলে পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘‘ও সব নিয়ম উঠে গিয়েছে। ই-পাস নেই, তাই নিয়ম ফলাবেন না। আমি রেলে চাকরি করি।’’ কামরায় উপস্থিত যাত্রীদের একাংশও ওই ব্যক্তিকে সমর্থন করেন। বাধ্য হয়ে চুপ করে যান রাজীববাবু। পরে ক্ষুব্ধ ওই যাত্রী বলেন, ‘‘বিধি রক্ষার ক্ষমতা যখন নেই, তখন পোস্টার দিয়ে বিধি মানতে বলা কেন? যাঁরা মেট্রো কর্তৃপক্ষের নির্দেশকে সম্মান করছেন, তাঁদেরই অপমানিত হতে হচ্ছে। সব দেখেও কর্তৃপক্ষ নীরব।’’

Advertisement

টালিগঞ্জের বাসিন্দা নীলোৎপল গুহও এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘নির্দেশ মানতে গিয়ে এমন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হচ্ছে, যেন অপরাধ করে ফেলেছি। এ ভাবে চললে বিধি মানার স্টিকার লাগিয়ে রাখার কী মানে?’’ বছর তেত্রিশের আর এক মেট্রোযাত্রী দেবারতি কুণ্ডু ময়দান এলাকার একটি বেসরকারি বিমা সংস্থার কর্মী। তিনি বললেন, ‘‘ভিড়ে ঠাসা কামরায় যাত্রীদের একাংশের এই ধরনের আচরণের জেরে বিধি মানার নির্দেশ অর্থহীন হয়ে পড়েছে। অথচ, ভিড়েই সব থেকে বেশি সতর্ক থাকা দরকার।’’

মেট্রো স্টেশনে কেন্দ্রের উদ্যোগে করোনার প্রতিষেধক দেওয়া নিয়ে সম্প্রতি পোস্টার লাগানো শুরু হয়েছে। অথচ, তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে দূরত্ব-বিধি মানার ঘোষণা ক্রমশ পিছনের সারিতে যেতে বসেছে। মেট্রোয় যাত্রী-সংখ্যাও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে। ইতিমধ্যেই ওই সংখ্যা প্রায় ২ লক্ষ ১৫ হাজার ছুঁয়ে ফেলেছে। মেট্রো কর্তৃপক্ষও আয় বাড়াতে বিধি নিয়ে শিথিলতা দেখাচ্ছেন বলে অভিযোগ যাত্রীদের। দেশ জুড়ে করোনা সংক্রমণ কমলেও দূরত্ব-বিধি মানার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। এমনকি, মেট্রোর আধিকারিকেরাও সে কথা মানছেন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মেট্রোর এক কর্তা বলেন, ‘‘যাত্রীদের একাংশের বেপরোয়া আচরণ দুর্ভাগ্যজনক। এখনও সবাইকে বিপন্মুক্ত বলার সময় আসেনি। ফলে বিধি অমান্য করার সুযোগ নেই।’’ কিন্তু বেড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে? জানেন না মেট্রোকর্তারাও। শুধুই প্রচারে জোর দেওয়ার কথা বলছেন তাঁরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement