মেহুল চোকসী। —ফাইল চিত্র।
ঋণখেলাপি মামলায় পলাতক হিরে ব্যবসায়ী মেহুল চোকসীকে দেশে ফেরাতে চাইছে ভারত। গত শনিবার বেলজিয়ামে গ্রেফতার হয়েছেন তিনি। সূত্রের খবর, ভারতের অনুরোধেই তাঁকে গ্রেফতার করেছেন সে দেশের কর্তৃপক্ষ। তাঁর প্রত্যর্পণের বিষয়ে ইতিমধ্যে আইনি পরামর্শও নিতে শুরু করেছে ভারত সরকার। এরই মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে ভারত এবং বেলজিয়ামের মধ্যে প্রত্যর্পণ চুক্তি নিয়েও। সাধারণত প্রত্যর্পণের বিষয়গুলি নির্ভর করে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির উপরে। সে ক্ষেত্রে চোকসীকে দেশে ফেরানোর ক্ষেত্রে এই চুক্তি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
ইউরোপীয় এই দেশটির সঙ্গে ১৯০১ সালে একটি চুক্তি হয়েছিল ব্রিটেনের। পরে ১৯৫৮ সালে সেই চুক্তির সঙ্গে ভারতকেও যুক্ত করা হয়। পরে ২০২০ সালে ভারত সরকারের মন্ত্রিসভা বেলজিয়ামের সঙ্গে নতুন করে প্রত্যর্পণ চুক্তিতে অনুমোদন দেয়। সেই চুক্তি অনুসারে ভারত এবং বেলজিয়াম উভয়েই কিছু ক্ষেত্রে অভিযুক্তদের প্রত্যর্পণের বিষয়ে সম্মত হয়। আবার কিছু ক্ষেত্রে প্রত্যর্পণের অনুরোধ খারিজও করা হতে পারে।
চুক্তি অনুসারে, কোনও অপরাধের জন্য দুই দেশেই এক বছরের জেল বা তার চেয়েও বেশি শাস্তির নিদান থাকলে সেই অভিযুক্ত বা আসামিকে প্রত্যর্পণ করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে কর, রাজস্ব বা অর্থনৈতিক কোনও অপরাধও চুক্তির অন্তর্ভুক্ত। চোকসীর ক্ষেত্রে ভারতে প্রতারণা, দুর্নীতি এবং ষড়যন্ত্রের অভিযোগ রয়েছে। তবে কিছু ক্ষেত্রে প্রত্যর্পণের অনুরোধ বাতিলও করা হতে পারে। যেমন, রাজনৈতিক কোনও কারণ জড়িত থাকলে এমন হতে পারে। যদিও কোন কোন ক্ষেত্রে অপরাধগুলিকে রাজনৈতিক অপরাধ বলে গণ্য করা হবে না, তা-ও উল্লেখ করা হয়েছে ওই চুক্তিতে। এ ছাড়া কোনও সামরিক অপরাধের ক্ষেত্রেও প্রত্যর্পণের অনুরোধ খারিজ হয়ে যেতে পারে। ধর্ম, লিঙ্গ, জাতপাতের ভিত্তিতে কাউকে শাস্তি দিতে চাইলে সে ক্ষেত্রেও আবেদন খারিজ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
এক দিকে যখন ভারত সরকার চোকসীকে দেশে ফেরাতে চাইছে, তখন পলাতক হিরে ব্যবসায়ীর আইনজীবী প্রত্যর্পণ আটকানোর চেষ্টা শুরু করেছেন। চোকসীর আইজীবী বিজয় আগরওয়াল জানিয়েছেন, গ্রেফতারির বিরুদ্ধে তাঁরা আদালতের দ্বারস্থ হবেন এবং ভারতে প্রত্যর্পণের বিরোধিতা করবেন। আইনজীবীর দাবি, ভারতে ফেরানো হলে চোকসীর ‘মানবাধিকার’-এর উপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। পলাতক ব্যবসায়ীর আইনজীবী জানিয়েছেন, তিনি মূলত দু’টি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে প্রত্যর্পণের বিরোধিতা করবেন। প্রথমত, মামলাটি রাজনৈতিক বলে দেখানোর চেষ্টা করবেন তিনি। দ্বিতীয়ত, ভারতে চোকসীর চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়েও উদ্বেগের কথা জানাবেন।
সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকার আর্থিক তছরুপের অভিযোগ রয়েছে চোকসীর বিরুদ্ধে। ভারতে হিরের ব্যবসা ছিল তাঁর। ২০১৮ সালে তাঁর বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করে পিএনবি। অভিযোগের ভিত্তিতে চোকসী এবং তাঁর সংস্থা গীতাঞ্জলি জেম্সের বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্ত শুরু হয়। পরে তদন্তে নামে ইডিও। পিএনবির অভিযোগ, জাল নথি এবং চিঠি দেখিয়ে টাকা নিয়েছিলেন তিনি। যার জেরে ওই ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের বিপুল ক্ষতি হয়। ইডি পরে জানায়, বেআইনি ভাবে বিদেশি অ্যাকাউন্টে টাকা স্থানান্তর করেছেন চোকসী। পিএনবি মামলায় মুম্বইয়ের আদালত গত ফেব্রুয়ারিতে চোকসীর সংস্থার ১৩টি সম্পত্তি নিলামে তোলার নির্দেশ দিয়েছিল।