Durga Puja 2023

দুপুর থেকেই জনপ্লাবন, মেঘলা আকাশও দমাতে পারল না ভিড়কে

ভিড়ের নিরিখে উত্তরের তুলনায় দক্ষিণ ছিল কিছুটা এগিয়ে। অষ্টমীর বেলা যত গড়িয়েছে, মণ্ডপে মণ্ডপে মানুষের ঢলও নেমেছে তত। দীর্ঘ লাইন পেরিয়ে মণ্ডপে ঢুকতে কখনও এক ঘণ্টা, কখনও বা আরও বেশি সময় লেগেছে।

Advertisement

চন্দন বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০২৩ ০৭:৩৩
Share:

বিকেল পেরিয়ে অষ্টমীর সন্ধ্যায় ভিড় যত বাড়ল, ততই থমকাল শহরের গতি। —ফাইল চিত্র।

এ যেন সপ্তমীর রাতকে হারিয়ে নতুন রেকর্ড গড়ার পালা! কেউ সকাল সকাল অষ্টমীর অঞ্জলি সেরে বেরিয়ে উত্তর, দক্ষিণ চষে ফেলার পরে মধ্য রাতে বাড়ি ফিরলেন। কেউ আবার দিনভর ঘুরে বাড়ি ঢুকলেন পরের দিন ভোরে। সকাল থেকে আকাশের মুখ ভার থাকলেও উৎসবমুখী জনতাকে তা দমাতে পারল না। বিকেল পেরিয়ে অষ্টমীর সন্ধ্যায় ভিড় যত বাড়ল, ততই থমকাল শহরের গতি।

Advertisement

ভিড়ের নিরিখে ষষ্ঠীকে হারিয়ে সপ্তমী যদি ছ’গোল দিয়ে থাকে, অষ্টমী তা হলে নিঃসন্দেহে ডজন পার করেছে। যদিও রবিবার, অষ্টমীর সকালের চিত্র দেখে ভিড়ের সেই আন্দাজ পাওয়া যায়নি। সকালের দিকে রাস্তাঘাট ছিল আর পাঁচটা ছুটির দিনের মতোই। রাস্তায় গাড়ির গতিও ছিল স্বাভাবিক। তবে, মণ্ডপের ছবিটা ছিল ভিন্ন। সেখানে শাড়ি আর পাঞ্জাবিতে অঞ্জলি দেওয়ার দীর্ঘ লাইন। দুপুর পেরোতেই দ্রুত পরিস্থিতি বদলে যায়। শহরের বিভিন্ন রেস্তরাঁর বাইরে দেখা যায় লম্বা লাইন। পাশাপাশি, ভিড় বাড়তে থাকে মণ্ডপে মণ্ডপে। ধীরে ধীরে রাস্তার দখল নিতে থাকে পুজোমুখী জনতা। দক্ষিণের ভিড় সামলানো এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘বিকেল তিনটে বাজতেই দেখি, পিল পিল করে লোক আসছে! চার দিকে জনসমুদ্র।’’

ভিড়ের নিরিখে উত্তরের তুলনায় দক্ষিণ ছিল কিছুটা এগিয়ে। অষ্টমীর বেলা যত গড়িয়েছে, মণ্ডপে মণ্ডপে মানুষের ঢলও নেমেছে তত। দীর্ঘ লাইন পেরিয়ে মণ্ডপে ঢুকতে কখনও এক ঘণ্টা, কখনও বা আরও বেশি সময় লেগেছে। উত্তরের হাতিবাগান সর্বজনীন, টালা প্রত্যয়, বাগবাজার থেকে শুরু করে দক্ষিণের একডালিয়া এভারগ্রিন, সুরুচি সঙ্ঘ, বাদামতলা আষাঢ় সঙ্ঘ, সিংহী পার্ক, চেতলা অগ্রণী, মুদিয়ালি, দেশপ্রিয় পার্ক, ত্রিধারা সম্মিলনী— সর্বত্রই কার্যত আলোর ঝলকানির সঙ্গে রাস্তায় কালো মাথার ভিড় দেখা গিয়েছে। এ দিন সন্ধ্যায় ত্রিধারার লাইনে দাঁড়িয়ে এক তরুণী বললেন, ‘‘এটা লাইন? সেই কখন থেকে দাঁড়িয়ে আছি। শেষ আর হচ্ছে না।’’

Advertisement

একই ছবি ছিল গড়িয়াহাট সংলগ্ন সিংহী পার্কেও। ওই পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা জয়ন্ত গুছাইত বললেন, ‘‘ভোররাতেও লাইন শেষ হচ্ছে না। যে পরিমাণ ভিড় হবে ভেবেছিলাম, তার থেকে কয়েক গুণ বেশি মানুষ আসছেন। সামলাতে সামলাতে অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।’’ পাশের দেশপ্রিয় পার্কে গিয়ে দেখা গেল, জমিয়ে আড্ডা চলছে সেখানে। অষ্টমীর আড্ডায় জমজমাট ম্যাডক্স স্কোয়ারও। পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা অনিমেষ চট্টোপাধ্যায় বললেন, ‘‘অন্যান্য দিন রাতেই মূলত আড্ডা হয়। আজ সারা দিন রোদের তেজ কম থাকায় সকাল থেকেই মাঠে ভিড়। দলে দলে এসে মাঠে বসে আড্ডা দিচ্ছেন। রাতের দিকে পরিস্থিতি এমন হচ্ছে যে, মাঠের জায়গা বাড়াতে পারলে ভাল হয়।’’

অষ্টমীর সকাল থেকে বাগবাজার সর্বজনীনের পুজো দেখার লম্বা লাইন দেখা গিয়েছিল। সন্ধ্যায় আরতির সময়ে কার্যত তিল ধারণেরও জায়গা ছিল না মণ্ডপের সামনে। তবে, কুমোরটুলি পার্কের ছবিটা ছিল ভিন্ন। ভিড় সে ভাবে টানতে না পারার আক্ষেপ যাচ্ছে না এই পুজোর উদ্যোক্তাদের। অন্যতম উদ্যোক্তা অনুপম দাস বললেন, ‘‘প্রতি বার যেখানে তিল ধারণেরও জায়গা থাকে না, সেই তুলনায় এ বার লোকজন কই! দক্ষিণের কয়েকটি পুজোই এ বছর সব শেষ করে দিল।’’ মাঠেই কর্তব্যরত ট্র্যাফিক পুলিশের এক কর্মী বললেন, ‘‘দক্ষিণে ডিউটি করতে গিয়ে তো কালঘাম ছুটে যাচ্ছে শুনছি। এখানে তা-ও শান্তি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement