crowd

বেপরোয়া ভিড় শেষ রবিবারেও, বাড়িয়ে দিচ্ছে সংক্রমণের ভয়

এ দিন সকালে ভিক্টোরিয়া চত্বরে গিয়ে দেখা গেল টিকিটের লম্বা লাইন। লাইন ছাড়িয়ে গিয়েছে বেশ কয়েকশো মিটার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২১ ০৬:৩৩
Share:

উৎসবমুখর: কোভিড-বিধির তোয়াক্কা না করে বড়দিনের পরের দিনও ভিড় উপচে পড়ল আলিপুর চিড়িয়াখানা। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

চিকিৎসকদের সচেতনতা-বার্তায় কাজ হল না। সচেতন নাগরিকদের বড় অংশের উদ্বেগেরও কোনও প্রভাব পড়ল না। গত দু’দিনের ধারা বজায় রেখে শহরের উৎসবমুখর জায়গাগুলিতে ঠাসা ভিড় দেখা গেল বছরের শেষ রবিবারেও। বাদ গেল না বাজার এবং শপিং মলগুলিও। যা দিনের শেষে প্রশ্ন তুলে দিল, অন্য বহু রাজ্য পারলেও পশ্চিবঙ্গ পারবে কবে? এই একই ধারা কি চলবে বছরের প্রথম দিন পেরিয়ে যাওয়ার পরেও? চিকিৎসকদের কেউ কেউ আবার প্রশ্ন তুললেন, এক-একটি বেপরোয়া উৎসব যাপনের জেরে আর কত বার করোনার মতো ভাইরাসকে সংক্রমণের সুযোগ করে দেব আমরা?

Advertisement

এ প্রশ্নের কোনওটিরই অবশ্য যুক্তিযুক্ত উত্তর পাওয়া যায়নি পথে বেরিয়ে পড়া উৎসবমুখী জনতার কাছে। দিনভর ঘুরে দেখা গেল, বড়দিনে যেখানে ভিড়ের ‘হটস্পট’ ছিল মূলত পার্ক স্ট্রিট এবং ধর্মতলা চত্বর, সেখানে এ দিন ওই সব জায়গাগুলিকে সমানে টক্কর দিল চিড়িয়াখানা, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, জাদুঘর, নিক্কো পার্ক, ইকো পার্ক, প্রিন্সেপ ঘাটের মতো একাধিক জায়গা। কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন সব চেয়ে বেশি ভিড় দেখা গিয়েছে চিড়িয়াখানা এবং ময়দান চত্বরে। শহরের এই অংশের ভিড়ের চাপ সামলাতে কিছুটা যান নিয়ন্ত্রণও করতে হয় পুলিশকে। কিন্তু কোভিড-বিধি অমান্য করার মানসিকতায় কোনও নিয়ন্ত্রণই এ দিন চোখে পড়েনি।

এ দিন সকালে ভিক্টোরিয়া চত্বরে গিয়ে দেখা গেল টিকিটের লম্বা লাইন। লাইন ছাড়িয়ে গিয়েছে বেশ কয়েকশো মিটার। টিকিটের লাইনে মাস্ক ছাড়াই দাঁড়িয়ে আছেন একের পর এক কমবয়সিরা। একই রকম ভিড় ভিক্টোরিয়ার ভিতরেও। সেই ভিড়েরই ছবি দেখা গেল জাদুঘর, চিড়িয়াখানা ও ময়দান চত্বরেও। এ দিন চিড়িয়াখানায় গিয়ে দেখা গেল, কার্যত ঠেলাঠেলি করে চলছে জিরাফ দেখা। দূরত্ব-বিধির বালাই তো নেই-ই, অনেকেই মাস্কহীন। সুকান্ত মজুমদার নামে এমনই এক জনকে প্রশ্ন করতে তিনি উত্তর দিলেন, ‘‘আসলে মুখে মাস্ক থাকলে জন্তুরা ভয় পাচ্ছে। কাছে আসতে চাইছে না। তাই মাস্ক খুলে রেখেছি।’’ শ্বাস নেওয়ার কষ্টের কথা শোনালেন হাতির খাঁচার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সুপ্রিয়া সরকার। তাঁর কথায়, ‘‘সারা দিন ধরে ঘোরাঘুরি করছি তো, মাস্ক পরলেই শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। তাই একটু মাস্ক খুলেছি।’’

Advertisement

বিকেলের পর থেকেই ভিড়ের একই ছবি দেখা গিয়েছে পার্ক স্ট্রিট এলাকাতেও। বিকেলের পরে এই এলাকার ফুটপাত কার্যত আমজনতার দখলে চলে যায়। ভিড় ফুটপাত ছাপিয়ে নেমে আসে রাস্তায়। বিকেল থেকেই কার্যত তিলধারণের জায়গা ছিল না অ্যালেন পার্কে। সন্ধ্যার পরে ভিড় সামলাতে নাজেহাল হতে হয় পুলিশকে। অধিকাংশ মানুষের মুখেই এ দিনও মাস্কের বালাই ছিল না। অনেকে আবার মাস্ক খুলে হাতে ঝুলিয়েই ঘুরে বেড়ালেন। সন্ধ্যায় পার্ক স্ট্রিটে দাঁড়িয়ে ঈশিতা চৌধুরী নামে এক তরুণী বললেন, ‘‘কাল সারা রাত ঘুরে বেড়িয়েছি। এ দিন সন্ধ্যাতেও একই ভাবে ঘুরব। সোমবার থেকে করোনা নিয়ে ভাবব।’’

চিকিৎসক অনির্বাণ নিয়োগী বললেন, ‘‘এই ভাবে দায়িত্বজ্ঞানহীন ঘোরাঘুরি নিজেদের তো বটেই, সমাজের জন্যও বিপদ ডেকে আনছে। কেউ নিজে সতর্ক না হলে প্রশাসনের উচিত কড়া হাতে এই ধরনের জমায়েত বন্ধ করা।’’ চিকিৎসক কুণাল সরকারের আবার বক্তব্য, ‘‘জনসমর্থনের সঙ্গে দায়িত্ববোধও বাড়ে। যে বিপুল জনসমর্থন এই প্রশাসনের সঙ্গে রয়েছে, সে দিক থেকে উচিত ছিল
আরও কড়া হাতে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া। আর সাধারণ মানুষকে বলার, ওমিক্রনে কিছু হবে না এই ধারণা সত্যি হলে ভাল। কিন্তু উল্টো কিছু হলে কী ফল হবে, সেটা নিয়ে এ বার ভেবে দেখুন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement