প্রতীকী ছবি।
হাওড়ার আন্দুল রোডের একটি বাড়িতে ঢুকে এক গৃহবধূর উপরে ভয়াবহ রকমের যৌন নির্যাতন ও ডাকাতির ঘটনায় তিন দিন পেরিয়ে গেলেও অভিযুক্তদের ধরতে পারেনি পুলিশ। কেন পারেনি, সেই প্রশ্ন তুলছেন হাওড়ার বাসিন্দারা। তদন্তকারীরা নিজেদের মতো করে তার ব্যাখ্যা দিলেও গোটা ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে যে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
পুলিশের বক্তব্য, সিসি ক্যামেরায় তিন দুষ্কৃতীর ছবি ধরা পড়লেও তা পরিষ্কার আসেনি। তাই নির্যাতিতার দেওয়া বিবরণ শুনে শনিবার শিল্পীকে দিয়ে অভিযুক্তদের ছবি আঁকিয়েছেন তদন্তকারীরা। সেই ছবি রাজ্যের সমস্ত থানায় পাঠানো হচ্ছে দুষ্কৃতীদের খুঁজে বার করার জন্য। সেই সঙ্গে যে ঘরে এই ঘটনা ঘটেছে, এ দিন সেখান থেকে কিছু নমুনা সংগ্রহ করেছেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা।
দিনের বেলায় ঘন বসতিপূর্ণ ওই রকম একটি এলাকায় এতটা দুঃসাহসিক অপরাধ করার সাহস দুষ্কৃতীরা কী করে পেল, সেটাই এখন ভাবাচ্ছে পুলিশকে। তদন্তকারীদের সন্দেহ, চন্দননগরের একটি ডাকাত দল এই ঘটনার পিছনে থাকতে পারে। কারণ, তাদেরও অপরাধের ধরন অনেকটা এ রকম। এলাকার বাসিন্দাদের প্রশ্ন, দিনেদুপুরে এই ধরনের জঘন্য অপরাধ করার পরেও বহিরাগত তিন দুষ্কৃতী কী করে বেমালুম গায়েব হয়ে যেতে পারে? পুলিশই বা তিন দিন পরেও তাদের টিকি ছুঁতে পারল না কেন? তা হলে কি পুলিশের ‘নেটওয়ার্ক’ বলতে কিছুই নেই ওই এলাকায়?
শুধু এই ঘটনা নয়, সাঁকরাইলে গত চার মাসে যে ভাবে একের পর এক অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, তাতে প্রমাণ হয়ে গিয়েছে যে, গোটা এলাকাই অপরাধীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। যেমন, গত ২৭ অক্টোবর রাতে এক চিকিৎসককে অপহরণ করে চার দুষ্কৃতী। তার পরে ৩০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ চায়। ওই ঘটনার মূল অভিযুক্ত এখনও অধরা। সেই অপহরণের পরের দিনই নাজিরগঞ্জের চাঁদমারি এলাকায় এক বৃদ্ধাকে শাবল দিয়ে মাথা থেঁতলে খুন করা হয়। ওই ঘটনাতেও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এর পরে ২৩ নভেম্বর নাজিরগঞ্জেই বাড়ির সামনে খুন হন ওয়াজুল হক নামে এক তৃণমূল নেতা। সেই ঘটনায় কয়েক জন সন্দেহভাজনকে ধরা হলেও মূল অভিযুক্ত এখনও ফেরার।
তবে ওই সমস্ত ঘটনাকেও ছাপিয়ে গিয়েছে গত ২০ জানুয়ারি সাঁকরাইলের চুনাভাটিতে এক পঞ্চায়েত সদস্যের বাড়িতে ডাকাতি ও তাঁর পুত্রবধূর উপরে যৌন নির্যাতনের চাঞ্চল্যকর ঘটনা। অভিযোগ, ওই ঘটনার তদন্তে প্রথম দিন থেকেই পুলিশের মধ্যে একটা গা-ছাড়া মনোভাব দেখা গিয়েছে। এমনকি, ঘটনার দিন নির্যাতিতাকে স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরে পরিবারের লোকজন তড়িঘড়ি বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে গেলেও পুলিশ তাঁকে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে মেডিক্যাল পরীক্ষার ব্যবস্থা করেনি। ফলে তদন্ত অনেকটাই দায়সারা গোছের হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন ফরেন্সিক তদন্ত ও পুলিশের শিল্পীকে দিয়ে ছবি আঁকানোর পরে ওই পরিবারটি বাড়িতে তালা দিয়ে কোথাও চলে গিয়েছে। কিন্তু কোথায় গিয়েছে, তা জানা যায়নি।
এ দিন হাওড়া সিটি পুলিশের ডিসি (দক্ষিণ) প্রতীক্ষা ঝারখারিয়া বলেন, ‘‘সিসি ক্যামেরার একটা ফুটেজ পেয়েছিলাম। কিন্তু তাতে দুষ্কৃতীরা এতটাই দূরে ছিল যে, পরিষ্কার করে চেনা যায়নি। তাই মহিলার বিবরণ শুনে পুলিশের শিল্পীকে দিয়ে ছবি আঁকানো হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত ঘটনার তদন্ত এর বেশি এগোয়নি।’’