বালি কেদারনাথ আরোগ্য ভবন। নিজস্ব চিত্র
রোগে জর্জরিত হলেও খুঁড়িয়ে চলছিল। জরাগ্রস্ত অবস্থায় মুখ থুবড়ে বড় বিপদের আশঙ্কায় আপাতত স্থগিত হল তার ‘পথ চলা’।
সম্প্রতি বালির শতাব্দীপ্রাচীন মাতৃসদনে অন্তর্বিভাগের পরিষেবা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেল। হাওড়া পুরসভা নির্দেশিকা জারি করে জানিয়ে দিয়েছে, পুরসভা পরিচালিত কেদারনাথ আরোগ্য ভবন নামের ওই মাতৃসদনে এখন আর কোনও প্রসূতিকে ভর্তি নেওয়া হবে না। পুরসভার কমিশনার তথা প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারপার্সন বিজিন কৃষ্ণ বলেন, ‘‘হাসপাতালের আমূল সংস্কার প্রয়োজন। বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট (ডিপিআর) পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরে পাঠানো হয়েছে। খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ছ’কোটি টাকা।’’
পুরসভা সূত্রের খবর, খসড়া প্রস্তাবটি পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের থেকে অনুমোদন পাওয়ার পরে সেটি অর্থ দফতরে পাঠানো হবে। সেখান থেকে চূড়ান্ত অনুমতি মিললে তবেই কাজ শুরু করা হবে। কয়েক বছর আগে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে বালির মাতৃসদনটির সংস্কারের বিষয়ে নির্দেশ এসেছিল। তার পরেই নড়েচড়ে বসেছিলেন হাওড়া পুর কর্তৃপক্ষ। স্থানীয়দের অভিযোগ, ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে সংস্কারের শিলান্যাস হয়। নতুন হাসপাতালের রূপরেখা প্রকাশ পায়। প্রায় দু’বছর কাটতে চললেও একটি ইটও গাঁথা হয়নি। উল্টে বন্ধ হয়ে গেল অন্তর্বিভাগের পরিষেবা। কবে থেকে সংস্কার শুরু হবে সে সম্পর্কেও স্পষ্ট করে কিছু জানানো হয়নি বলেই দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের।
পুরকর্তারা জানান, একশো বছরের পুরনো হাসপাতাল ভবনটির হেরিটেজ মর্যাদা রয়েছে। তাই সেটি পুরো ভেঙে ফেলা সম্ভব নয়। শিবপুর আইআইইএসটি-র বিশেষজ্ঞেরা বেশ কয়েক বার পরিদর্শন ও সমীক্ষা করার পরে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বাইরের অংশ অবিকৃত রেখে ভিতরের পরিকাঠামো সংস্কার করা হবে। প্রস্তাবে রয়েছে, মাতৃসদনটিতে ৫০টি শয্যা থাকবে। সাধারণ ওয়ার্ডের পাশাপাশি থাকবে এইচডিইউ। এ ছাড়াও সদ্যোজাতদের জন্য থাকবে নিকু (নিওনেটাল ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিট)। থাকবে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি-সহ দু’টি অপারেশন থিয়েটার। সুলভ মূল্যের ওষুধের দোকান এবং আল্ট্রাসোনোগ্রাফির ইউনিট।
মাতৃসদনটির উপরে নির্ভরশীল বালি, বেলুড় পুর এলাকা ছাড়াও বালি গ্রামাঞ্চল এবং হুগলির কিছু এলাকার মানুষ। পুরসভা সূত্রের খবর, ভগ্নপ্রায় অবস্থায় ছিল মাতৃসদনটি। কোথাও পলেস্তরা খসে যাচ্ছিল, তো কোথাও কংক্রিটের চাঙড় ভেঙে পড়ছিল। এই পরিস্থিতিতে ঘুপচি ঘরের ওয়ার্ডে কোনও প্রসূতি, মা ও সদ্যোজাতকে রাখা সম্ভব হচ্ছিল না বলেই দাবি পুর আধিকারিকদের। তাঁরা জানান, ভর্তি থাকা মা ও সদ্যোজাতদের সকলের ছুটি হতেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে মাতৃসদন। তবে মাতৃসদনটির মূল ভবন সংলগ্ন ঘরে স্ত্রীরোগ এবং হোমিয়োপ্যাথি চিকিৎসার বহির্বিভাগ চলবে। সংস্কারের কাজ শুরু হলে সেগুলিও বন্ধ রাখা হবে। হাসপাতালের নার্স ও কর্মচারীদের কয়েক জনকে বহির্বিভাগের জন্য রেখে বাকিদের লিলুয়া সিলভার জুবিলি হাসপাতাল ও বালি পুর অফিসে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।