ফাইল চিত্র।
পনেরো বছরের পুরনো বাণিজ্যিক গাড়ির সংখ্যা কত? সেই পরিসংখ্যান কি রাজ্য সরকারের কাছে আছে? সেটাই যদি না জানা যায়, তা হলে কী ভাবে পুরনো গাড়ি সম্পূর্ণ ভাবে বাতিল করা সম্ভব? পরিবেশবিদ মহলে এমনই চর্চা শুরু হয়েছে।
পরিবেশকর্মীদের একাংশের অভিযোগ, কলকাতা ও হাওড়ার রাস্তায় পুরনো বাণিজ্যিক গাড়ি বাতিলের প্রসঙ্গ উঠলেই সরকারের তরফে একই বুলি শোনা যায় যে, কলকাতা হাই কোর্ট ও জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ মতো সমস্ত গাড়িই ধাপে-ধাপে বাতিল হচ্ছে। কিন্তু কত সংখ্যক পুরনো গাড়ি এখনও বাতিল হয়নি, তার সংখ্যা নিয়ে যথেষ্ট ধন্দ রয়েছে। সম্প্রতি বায়ুদূষণ সংক্রান্ত মামলায় জাতীয় পরিবেশ আদালতে জমা পড়া এক হলফনামায় এই প্রসঙ্গের উল্লেখ করা হয়েছে। যেখানে স্পষ্ট বলা হচ্ছে, দূষণ ছড়াচ্ছে এমন কত সংখ্যক গাড়ি এখনও কলকাতা ও হাওড়ার রাস্তায় চলছে এবং কতগুলি বাতিল করতে হবে, সেই সম্পর্কে স্পষ্ট কোনও তথ্য নেই।
রাজ্য সরকারের তরফে অবশ্য চলতি বছরের জানুয়ারিতে পুরনো গাড়ি বাতিল সংক্রান্ত রিপোর্ট পরিবেশ আদালতে জমা দেওয়া হয়েছিল। সেই রিপোর্টটি ২০২১ সালের অগস্টে তৈরি করেছিল বিশেষজ্ঞ কমিটি। প্রশাসনের এক পদস্থ কর্তার বক্তব্য, ‘‘পাঁচ, দশ ও পনেরো বছরের পুরনো ডিজ়েল এবং পেট্রল গাড়ির সংখ্যা কত, তা ওই রিপোর্টেই বলা রয়েছে। ফলে প্রকৃত সংখ্যা নেই বলে যে দাবি করা হচ্ছে, তা ঠিক নয়।’’
যদিও সরকারের এই যুক্তি নাকচ করে দিয়েছেন পরিবেশকর্মীরা। বায়ুদূষণ সংক্রান্ত মামলার আবেদনকারী পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলছেন, ‘‘শুধুমাত্র একটা রিপোর্ট আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই রিপোর্টে যে সব সুপারিশ বা পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে, সেগুলি আদৌ গ্রহণ করা হয়েছে কি না, সে ব্যাপারে কেউ কিছু জানেন না। শুধু সুপারিশের পর্ব চলছে।’’ প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে কেন্দ্রীয় সড়ক, পরিবহণ ও হাইওয়ে মন্ত্রকের তরফে জমা দেওয়া এক রিপোর্টে জানানো হয়েছিল, পশ্চিমবঙ্গে পুরনো বাণিজ্যিক যানের সংখ্যা ৬,৯৭,৬৩৫। অন্য দিকে, কলকাতায় পুরনো বাণিজ্যিক যানের সংখ্যা ২,১৯,১৩৭। এক পরিবেশবিজ্ঞানীর কথায়, ‘‘কিন্তু ওই পরিসংখ্যান তো তিন বছরের পুরনো। এই মুহূর্তে পুরনো যানের সংখ্যা কত, সেটা জানা জরুরি।’’
পরিবেশ গবেষণাকারী সংস্থা ‘সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’-এর (সিএসই) এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর (রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি) অনুমিতা রায়চৌধুরী জানাচ্ছেন, আদালতের নির্দেশ মতো সমস্ত পুরনো বাণিজ্যিক গাড়ি বাতিল করতেই হবে। সেই কারণে ক’টি বাতিল করা হয়েছে এবং এখনও ক’টি গাড়ি বাতিল করতে হবে, সেই সংখ্যাটা জানা সবচেয়ে আগে দরকার। তাঁর কথায়, ‘‘সংখ্যাটা জানলেই নির্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে সেই গাড়িগুলো বাতিল করা যাবে। তবে সে ক্ষেত্রে একটা সময়সীমা স্থির করতে হবে। ওই মেয়াদের মধ্যেই সব গাড়ি বাতিল করতে হবে।’’
এই বিষয়ে ‘ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট (নিরি)’-এর সমীক্ষার প্রসঙ্গও উঠে আসছে। সংশ্লিষ্ট সমীক্ষায় দুই শহরের বায়ুদূষণের উৎসগুলি চিহ্নিত করা হয়েছিল। সেখানে দেখা গিয়েছিল, গ্রীষ্ম বা শীতকাল, সব সময়েই শহরে দূষণের প্রধান উৎস সেই যানবাহনের ধোঁয়া। কিন্তু সেই ধোঁয়াতেই লাগাম পরানো যাচ্ছে না বলে আক্ষেপ পরিবেশকর্মীদের।