— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
বছর ১৬ আগে হাওড়ার চাঁদমারি ঘাট সংলগ্ন এলাকার ন’টি বেআইনি হোটেল স্থানান্তরের নোটিস দিয়েছিল রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। কিন্তু ২০২৪ সালেও সেই পরিস্থিতির বিন্দুমাত্র পরিবর্তন হয়নি। চাঁদমারি ঘাট সংলগ্ন এলাকায় গঙ্গার পাড় দখল করে একই ভাবে চলছে হোটেল ব্যবসা। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, এটা কার ব্যর্থতা? গঙ্গা দূষণ রোধ নিয়ে বড় বড় কথা বলা হলেও এক দশকেরও বেশি সময় আগের পর্ষদের নির্দেশ এখনও বাস্তবায়িত হল না কেন?
ঘটনাপ্রবাহ বলছে, ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে পর্ষদ ওই বেআইনি হোটেলগুলি স্থানান্তরের নোটিস দিয়েছিল। কারণ, সেগুলি থেকে কঠিন ও তরল বর্জ্য গঙ্গায় মেশার ফলে দূষণের মাত্রা বাড়ছে। প্রসঙ্গত, ওই এলাকা শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি বন্দর কর্তৃপক্ষের (কলকাতা বন্দর) অধীনে। বন্দর সূত্রের খবর, ওই নোটিসের পরিবর্তে সংশ্লিষ্ট হোটেল মালিকেরা পর্ষদের ‘অ্যাপেলেট অথরিটি’-র কাছে আবেদন জানান। কিন্তু ‘অ্যাপেলেট অথরিটি’ ২০০৮ সালের এপ্রিল মাসের নির্দেশে স্পষ্ট ভাবে ওই সব বেআইনি হোটেল বন্ধের নির্দেশ দেয়। সেই নোটিসের পরিবর্তে এক জন হোটেল মালিক কলকাতা হাই কোর্টে পাল্টা মামলা দায়ের করেন। কিন্তু মামলাটি পরিবেশ সংক্রান্ত হওয়ায় হাই কোর্ট তা জাতীয় পরিবেশ আদালতের ‘প্রিন্সিপাল বেঞ্চ’-এর কাছে পাঠিয়ে দেয়। পরিবেশ আদালতের ‘প্রিন্সিপাল বেঞ্চ’ পর্ষদের ওই নোটিসে কোনও হস্তক্ষেপ করেনি এবং ২০১৩ সালের জুলাইয়ে মামলাটির নিষ্পত্তি করে দেয়। অর্থাৎ, পর্ষদের হোটেল স্থানান্তরের নির্দেশই বহাল থাকে।
গঙ্গাপাড়ের বেআইনি হোটেল নিয়ে গত বছরের সেপ্টেম্বরে জাতীয় পরিবেশ আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে। মামলার আবেদনকারী সুভাষ দত্ত জানাচ্ছেন, শুধু ওই ন’টি হোটেলই নয়, ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সেখানকার আরও একটি হোটেল বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল। অথচ তার আট মাসে পরে, অর্থাৎ ২০২৩ সালের অগস্টে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন, সেই হোটেল দিব্যি চলছে। সুভাষ দত্তের প্রশ্ন, ‘‘হোটেল বন্ধের নির্দেশ দিলেই শুধু হবে? হোটেল বন্ধ আদৌ হল কি না, তা দেখার দায়িত্ব কার?’’
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, বন্দর কর্তৃপক্ষ ওই বেআইনি হোটেল উচ্ছেদের জন্য ২০১৫-২০২৩ সালের মধ্যে হাওড়া পুলিশ-প্রশাসনের সাহায্য চেয়ে মোট ১০ বার চিঠি দেয়। হাওড়া পুলিশ জানায়, ওই এলাকায় কমপক্ষে ১০টি হোটেল ৫০ বা তারও বেশি বছর ধরে চলছে। প্রায় ১৫০ জন কর্মী ওই হোটেলে কর্মরত। প্রতিদিন ৫০ হাজারেরও বেশি রেলযাত্রী ও সাধারণ মানুষ ওই হোটেলগুলিতে খাওয়াদাওয়া করেন। ফলে এই পরিস্থিতিতে উচ্ছেদ অভিযান চালাতে গেলে এলাকায় আইনশৃঙ্খলার গুরুতর অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সে কারণে ওই এলাকা যৌথ ভাবে পরিদর্শনের পরেই উচ্ছেদ অভিযানের রূপরেখা ঠিক করা হবে বলে বন্দর কর্তৃপক্ষকে জানায় পুলিশ।
সেই মতো গত ২২ ডিসেম্বর হাওড়া পুলিশ কমিশনারেট, হাওড়া পুরসভা, বন্দর, রাজ্য পূর্ত দফতর, সিইএসসি-সহ একাধিক পক্ষ এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করে এবং উচ্ছেদ অভিযানের রূপরেখা তৈরির জন্য বৈঠক করে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, উচ্ছেদের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত ব্যবস্থা করবেন বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ সংক্রান্ত যাবতীয় ঘোষণাও বন্দর কর্তৃপক্ষ করবেন। উচ্ছেদ অভিযানের আগে সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ ছিন্ন করবে সিইএসসি। অভিযানের সময়ে জলের সংযোগ ছিন্ন করার প্রয়োজন দেখা দিলে হাওড়া পুরসভা সেই দায়িত্ব পালন করবে। হাওড়া পুলিশ উচ্ছেদ অভিযানের জন্য প্রয়োজনীয় পুলিশি সহায়তা করবে। বৈঠকে আরও ঠিক হয়, গঙ্গাসাগর মেলার পরে পরবর্তী বৈঠক হবে। সেখানে উচ্ছেদ অভিযানের দিন ঠিক করা হবে।
এক পরিবেশবিজ্ঞানী বলছেন, ‘‘এক দশকেরও বেশি সময় কেটে গিয়েছে। এখনও পর্ষদের নির্দেশ পালন হয়নি। শুধু পারস্পরিক চিঠি চালাচালি আর বৈঠক হয়েছে। এ বার দেখা যাক, বাস্তবে উচ্ছেদ অভিযান হতে আর কত সময় লাগে!’’