অবহেলা: পুরসভার চম্পামণি মেটারনিটি হোমের ভিতরে এখন এমনই বেহাল দশা। পরিত্যক্ত অ্যাম্বুল্যান্স। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
চালু হয়েছিল ১৯৬৪ সালে। ইন্ডোর বিভাগ বন্ধ হয়ে যায় বছর দুয়েক আগে। এর পরে সম্প্রতি আউটডোরেরও ঝাঁপ পড়ে যায়। কলকাতা পুরসভা পরিচালিত পূর্ব কলকাতার ‘চম্পামণি মেটারনিটি হোম’ এখন পরিণত হয়েছে একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে।
ট্যাংরার ক্রিস্টোফার রোডে প্রায় চার বিঘা জায়গা জুড়ে চালু হয়েছিল ‘চম্পামণি মেটারনিটি হোম’। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্লচন্দ্র সেন ওই হাসপাতালের উদ্বোধন করেছিলেন। কুড়ি শয্যার সেই হাসপাতালে মূলত তপসিয়া ও ট্যাংরা এলাকার প্রসূতিরা চিকিৎসার জন্য আসতেন। কিন্তু মেটারনিটি হোমটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সমস্যায় পড়েন তাঁরা। বছর দুয়েক আগে রোগী ভর্তি বন্ধ হয়ে গেলেও বহির্বিভাগে চিকিৎসা চলছিল। কিন্তু মাসখানেক সেই বহির্বিভাগও বন্ধ হয়ে যায়। পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, বহির্বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক অবসর নিয়েছেন। সেই কারণেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে হাসপাতালটি। চম্পামণি মেটারনিটি হোমের ভিতরে পুরসভার কর্মীদের আবাসন রয়েছে। সেখানকার এক কর্মীর কথায়, ‘‘এখনও নিয়মিত প্রসূতিরা এখানে চিকিৎসার জন্য আসেন। বন্ধ শুনে তাঁরা ফিরে যান।’’
সম্প্রতি ওই হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল, তিনতলা বিশাল বাড়ির পুরোটাই বন্ধ। পাশের আবাসনে থাকা কর্মীদের অভিযোগ, ‘‘হাসপাতালটি এখন একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে পরিণত হয়েছে। এক জন সাফাইকর্মী থাকলেও সাফাইয়ের কাজ নিয়মিত হয় না। আর কয়েক দিনের মধ্যেই বাড়িটি মশা ও পোকামাকড়ের আঁতুড়ঘরে পরিণত হবে।’’ হাসপাতালটি বন্ধ থাকলেও এখনও সেখানে দু’জন নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন রয়েছেন। ওই দিন অবশ্য সেখানে গিয়ে তাঁদের কাউকেই পাওয়া যায়নি। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ‘‘এলাকার প্রসূতিদের সুবিধার্থে অবিলম্বে ওই মেটারনিটি হোমটি ফের চালু করা হোক। আউটডোর যাতে শীঘ্রই চালু করা যায়, সে বিষয়ে প্রশাসন ব্যবস্থা নিক।’’ ওই হাসপাতাল চত্বরে গিয়ে দেখা গেল, বেশ কয়েকটি পরিত্যক্ত অ্যাম্বুল্যান্স পড়ে রয়েছে। লাগোয়া কর্মী আবাসনের বাসিন্দাদের অভিযোগ, ‘‘ওই সমস্ত পুরনো অ্যাম্বুল্যান্সে জল জমে মশা জন্মাচ্ছে। তাতে ডেঙ্গির আশঙ্কা বাড়ছে। অবিলম্বে এগুলি সরালে ভাল হয়।’’
চম্পামণি ছাড়াও কলকাতা পুরসভা পরিচালিত আরও তিনটি মেটারনিটি হোম রয়েছে গার্ডেনরিচ, খিদিরপুর ও দর্জিপাড়ায়। সেগুলিও প্রায় ধুঁকতে ধুঁকতে চলছে।
কিন্তু চম্পামণি মেটারনিটি হোম বন্ধ করা হল কেন? এ প্রশ্নের উত্তরে কলকাতা পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য অতীন ঘোষ বলেন, ‘‘চম্পামণি মেটারনিটি হোমে দিনে দিনে রোগীর সংখ্যা কমছিল। সেই কারণে প্রথমে ইন্ডোর পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়। যদিও আউটডোর চালু রয়েছে।’’ কিন্তু আউটডোরও তো কিছু দিন আগে থেকে বন্ধ? এ প্রশ্নের কোনও উত্তর মেলেনি অতীনবাবুর কাছে।