রংমিলান্তি: (১) মুখোশ পরে আবির খেলায় শামিল খুদে। সল্টলেকে। (২) সদর স্ট্রিটে দোল খেলছেন বিদেশিনিরা। (৩) রং খেলার মাঝে আইসক্রিমে মন খুদের। সোমবার, বি কে পাল অ্যাভিনিউয়ে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক, সুমন বল্লভ
আবির, রং কিংবা হুল্লোড় নয়, সোমবার বসন্তোৎসবে শহরকে যেন মাত করল ফাগুন হাওয়া।
রবিবার থেকেই ঝলমলে বসন্তের রোদের দেখা মিলেছিল। সোমবার তার সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে তিরতিরে ঠান্ডা হাওয়া। আলিপুর হাওয়া অফিস বলছে, এ দিন কলকাতায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্বাভাবিকের থেকে যা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম। শহরের অদূরে ব্যারাকপুরে পারদ ছিল আরও কিছুটা নীচে (১৭.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস)। এমন আবহাওয়ায় সকাল থেকেই আবির, রঙে মাতামাতি করতে তাই কিঞ্চিৎ গা শিরশির করেছে বটে। কিন্তু আমবাঙালির কথা, দোলের দিন গায়ে জল ঢাললে যদি শিরশির না-ই করে, তা হলে আর বসন্তের উৎসব কীসে!
করোনাভাইরাসের আতঙ্কে এ বার বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ বসন্তোৎসব বাতিল করেছেন বটে। কিন্তু শহরের দোল-চিত্রে অবশ্য সেই প্রভাব মারকাটারি পড়েনি। বিভিন্ন এলাকায় ছোট-বড়-মাঝারি মাপের বসন্তোৎসব পালন করা হয়েছে। মুখোশ পরেও দোল খেলতে দেখা গিয়েছে অনেককে। তার বাইরেও চিরাচরিত রীতি মেনে পাড়ায় পাড়ায় পরিচিত-অপরিচিতকে রাঙিয়ে দিয়েছেন মানুষজন। কচিকাঁচা, জোয়ান, বৃদ্ধ নির্বিশেষে উৎসবে মেতেছেন। পথেঘাটেও রং খেলেছেন মানুষ। বারাসত, ব্যারাকপুর, সোনারপুরের মতো শহরতলিতেও চলেছে দেদার রং খেলা।
আরও পড়ুন: শান্তিনিকেতনের বসন্তোৎসব অসুন্দরের মোকাবিলার উৎসব
তবে দোলের দিন শহরে সতর্ক ছিল পুলিশও। কলকাতায় কোনও বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার কথা শোনা যায়নি। লালবাজার জানিয়েছে, এ দিন সব মিলিয়ে পথেঘাটে অশোভন আচরণ এবং বিশৃঙ্খলা তৈরির জন্য মোট ১২৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ১০ লিটার বেআইনি মদ।
উৎসবে মেতেছেন রাজনীতি এবং টেলিভিশন-সিনেমার তারকারাও। যে কোনও উৎসব ঘিরেই
জনসংযোগে নেমে পড়েন রাজনৈতিক নেতারা। অদূরেই পুর ভোট। তাই এ বার দোলের জনসংযোগ যে ভিন্ন মাত্রা পাবে তা-ও জানা। তবে শাসক-বিরোধী দলের বহু নেতা অবশ্য ফি বছরই দোলের উৎসবে মাতেন। সকালে নিজের
এলাকায় প্রভাতফেরিতে বেরোন দমদমের বিধায়ক ও রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু। কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমও নিজের বাড়িতে এবং পাড়ায় দোল খেলেছেন। প্রতাপাদিত্য রোডে কচিকাঁচা পরিবেষ্টিত হয়ে দোল খেলতে দেখা গিয়েছে কলকাতা পুরসভার চেয়ারপার্সন মালা রায়কে। লেক টাউনে বসন্তোৎসবে মেতেছেন দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু। পিছিয়ে নেই বিরোধীরাও। যাদবপুরের সিপিএম বিধায়ক সুজন চক্রবর্তী এবং উত্তর দমদমের সিপিএম বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্য নিজ-নিজ পাড়ায় দোল খেলেছেন। প্রাতর্ভ্রমণে গিয়েই দোল খেলেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি ও বিধায়ক দিলীপ ঘোষ।
ফাগুনের আবহাওয়ায় দিনভর হুল্লোড়ে কাটলেও আনন্দের রেশ কমেনি। দুপুরে ভূরিভোজ সেরে অনেকেই বিছানায় সুখনিদ্রা দিয়েছেন। বিকেল থেকে বিভিন্ন পানশালা কিংবা রেস্তরাঁয় বসেছে আড্ডা। দিনে যেমন সঙ্গত করেছে ফাগুন হাওয়া, তেমনই সন্ধ্যা গড়াতেই দোলকে ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে মেঘমুক্ত আকাশ। পূর্ণিমা সন্ধ্যায় শহর যখন দোলের আড্ডায় মাতোয়ারা, তখনই আকাশে উঁকি মেরেছে গোল থালার মতো ঝলমলে চাঁদ।
পূর্ণিমা সন্ধ্যায় রজনীগন্ধা রঙের নাগরিক চাঁদ।