বিজ্ঞাপন সর্বত্র, আয় তলানিতে

ফ্লেক্স আর হোর্ডিংয়ের ভারে কার্যত বিজ্ঞাপন-সরণির আকার নিয়েছে দক্ষিণ দমদম পুরসভা এলাকা।

Advertisement

সৌরভ দত্ত

শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৭:০০
Share:

মুখ ঢেকে যায়: নাগেরবাজার মোড়ে ফ্লেক্স-হোর্ডিংয়ের ভিড়। বৃহস্পতিবার। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

ফ্লেক্স আর হোর্ডিংয়ের ভারে কার্যত বিজ্ঞাপন-সরণির আকার নিয়েছে দক্ষিণ দমদম পুরসভা এলাকা।

Advertisement

অথচ, বিজ্ঞাপন থেকে রাজস্বের হাল বেহাল! পুরসভা সূত্রের খবর, চলতি আর্থিক বছরে বিজ্ঞাপন বাবদ এক কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছিলেন দক্ষিণ দমদমের পুরকর্তারা। অথচ, এ পর্যন্ত বিজ্ঞাপন খাতে পুরসভার আয় হয়েছে মেরেকেটে আট লক্ষ টাকা!

পুরসভা সূত্রের খবর, মঙ্গলবার আয় বৃদ্ধি সংক্রান্ত এক বৈঠকে বিজ্ঞাপন থেকে আয়ের হিসেব শুনে পুরপ্রধান-সহ উপস্থিত প্রত্যেক চেয়ারম্যান পারিষদই বিস্মিত হন। পুর এলাকায় বিজ্ঞাপনের যা বহর, তার তুলনায় আয় কেন এত কম হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। পুর ভবনের সদর দরজাই হোক বা এলাকার গুরুত্বপূর্ণ কোনও রাস্তা, দক্ষিণ দমদমে বিজ্ঞাপনের ঘাটতি নেই। খেলা, মেলা, উৎসবের ফ্লেক্স আর হোর্ডিংয়ের ঠেলায় পুরসভার নামফলক পর্যন্ত ঠিক মতো দেখা যায় না। পুরসভার এক কর্তার কথায়, ‘‘নরনারায়ণ সেবার ফ্লেক্স-হোর্ডিং পর্যন্ত বাদ যাচ্ছে না। কে কোথায় হোটেল করবে, কার কোথায় মোবাইলের দোকান— সবই ফ্লেক্স-হোর্ডিং টাঙিয়ে প্রচার করা হচ্ছে। সেই ঢক্কানিনাদে রাস্তার দু’দিকে তাকানো যায় না। এত বিজ্ঞাপন সত্ত্বেও ন’মাসে আট লক্ষ টাকা আয় সত্যিই অবিশ্বাস্য!’’

Advertisement

পুরসভার এক আধিকারিক অবশ্য এই পরিস্থিতির জন্য পুরসভার সদিচ্ছার অভাবকেই দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘ফ্লেক্স-হোর্ডিংয়ের মধ্যে অধিকাংশই তো কোনও না কোনও ‘দাদা’র। বারণ করবে কে? ফল যা হওয়ার তা-ই হচ্ছে।’’ আর এক আধিকারিকের বক্তব্য, দমদম রোড, যশোর রোড, ভিআইপি রোডের পাশাপাশি বিভিন্ন লিঙ্ক রোডও এখন পূর্ত দফতরের অন্তর্গত। বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছে এ ধরনের রাস্তাই সব চেয়ে বেশি গুরুত্ব পায়। স্বাভাবিক ভাবেই এ ধরনের বড় রাস্তায় কেউ বিজ্ঞাপন দিলে সেখান থেকে পুরসভার অর্থলাভের সম্ভাবনা বার করার পদ্ধতি বেশ জটিল।

এই পরিস্থিতিতে আয় বাড়াতে পুরসভার এক্তিয়ারভুক্ত এলাকায় ফ্লেক্স-হোর্ডিংয়ের উপরেই জোর দিচ্ছেন পুরপ্রধান। তিনি বলেন, ‘‘দক্ষিণ দমদমের মতো এলাকায় বিজ্ঞাপন থেকে বছরে কোটি টাকা আয় করা কোনও সমস্যা হতে পারে না। বারাসতে একটা ফ্লেক্স টাঙালেও কড়ি ফেলতে হয়। ঠিক করেছি, এখন থেকে ফ্লেক্স, হোর্ডিং টাঙাতে পুরসভার কাছে আবেদন করতে হবে। ফ্লেক্স, হোর্ডিংয়ের মাপ এবং কোথায় সেগুলি টাঙানো হচ্ছে, তার নিরিখে টাকা দিতে হবে।’’ না দিলে অভিযান চালিয়ে সেই সমস্ত ফ্লেক্স-হোর্ডিং সরিয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পুরপ্রধান।

বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে আরও কিছু পদক্ষেপের প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে। পুর হাসপাতালের সামনে একটি চারতলা বাড়ি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। সেটি ভেঙে বাণিজ্যিক বহুতল নির্মাণের কথা ভাবছেন পুর কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া, দমদম পার্ক, লেকটাউন, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত পাতিপুকুর এলাকায় পুরসভার বেশ কিছু সম্পত্তি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। চেয়ারম্যান পারিষদ সমীর চট্টোপাধ্যায়কে প্রতিটি ওয়ার্ডে এ ধরনের সম্পত্তির তালিকা তৈরির ভার দেওয়া হয়েছে। পুরপ্রধান জানান, সেগুলিকে কী ভাবে বাণিজ্যিক ভবন হিসেবে ব্যবহার করা যায়, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement