ঢাকায় ১৯৫২ সালে একুশে আন্দোলন, ১৯৭১-এ বাংলাদেশের জন্ম, ’৯৯-এ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে একুশে ফেব্রুয়ারিকে বিশ্বজগতের স্বীকৃতি বাঙালির কাছে জয়গর্বের মুহূর্ত, মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন শঙ্খ ঘোষ। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, “পঞ্চাশের দশকে লেখা সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের একটি কথা, ‘ওপারে যে বাংলাদেশ/ এপারেও সেই বাংলা।’ শুধু, ঢাকায় দাঁড়িয়ে কথাটা বলছি বলে লাইনটা একটু ঘুরিয়ে নিতে চাই। এপারে যে বাংলাদেশ ওপারেও সেই বাংলা।” দুই কবির কথাগুলিরই পীঠভূমি হয়ে উঠেছিল কলকাতা, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময়। লড়াইয়ের অনেক অস্ত্রের একটি হল প্রচারমাধ্যম, রেডিয়োর বিকল্প ছিল না তখন। ‘ঢাকা বেতার’-কে কব্জা করে ‘রেডিয়ো পাকিস্তান’ অনবরত মুক্তিযোদ্ধাদের মনে ত্রাস সৃষ্টির চেষ্টা করে চলেছে, সেই অসত্য প্রচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাণিত করত ‘কলকাতা বেতার’ অর্থাৎ ‘আকাশবাণী’। পাক বাহিনীর পরিকল্পিত হত্যাভিযানের একটি ছিল বুদ্ধিজীবী-শিল্পী-সাহিত্যিক হত্যা। উদ্বিগ্ন শঙ্খ ঘোষ আকাশবাণীর আমন্ত্রণে পড়েছিলেন কথিকা: “সামরিক অত্যাচার প্রথমেই ছুটে যাচ্ছে যে-কোনো বুদ্ধিজীবীর দিকে... জানতে ইচ্ছে করে বাংলাদেশের কবিরা এখন কে কোথায় আছেন। তাঁরা কি সময়মতো পশ্চাৎপটে সরে এসে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠন করছেন কোনো? গ্রাম-গ্রামান্তরকে উদ্বোধিত করবার জন্য লিখছেন কোনো নতুন ধরণের কবিতা?”
১৯৭১-এর ২৫ মে বালিগঞ্জে চালু হল ‘স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র’। প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের যখন যেখানে অবস্থান, কলকাতায় সেটাই হয়ে উঠত মুজিবনগর। “কলকাতায় স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের সকলেরই আকাশবাণীর সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে উঠল। হাতে হাত রেখে যেন লড়াই করছে দুই বেতার,” লিখেছেন ভবেশ দাশ, তাঁর তথ্যঋদ্ধ বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ ও আকাশবাণী রচনাটি-সহ বাংলাদেশ সংক্রান্ত একগুচ্ছ লেখা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হয়েছে সাম্প্রতিক কালে এবং জলঘড়ি পত্রিকায় (সংখ্যা সম্পাদক অর্দ্ধেন্দুশেখর গোস্বামী)। মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে দাঁড়াতে আকাশবাণী তখন নতুন সৃষ্টিতে মগ্ন, অংশুমান রায় গাইলেন ‘শোন একটি মুজিবরের থেকে/ লক্ষ মুজিবরের... আকাশে বাতাসে উঠে রণি/ বাংলাদেশ, আমার বাংলাদেশ।’ ‘সংবাদ বিচিত্রা’র উপেন তরফদার শরণার্থী শিবিরে গিয়ে অত্যাচারিত মানুষের কথা রেকর্ড করছেন। সর্বোপরি প্রণবেশ সেন, যাঁর রচিত পাঁচ মিনিটের ‘সংবাদ পরিক্রমা’ দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাঠে প্রেরণা দিত বাঙালিকে। ন’মাস যুদ্ধের পর স্বাধীন হল বাংলাদেশ, পাকবাহিনী আত্মসমর্পণ করল ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর। বিজয় দিবসের রাতে প্রণবেশ সেন ‘সংবাদ পরিক্রমা’য় লিখেছিলেন, “আমি স্বাধীনতা, গণতন্ত্রের সংগ্রামী... আমার সঙ্গে তাই বিরোধ নেই পশ্চিম পাকিস্তানের কোটি কোটি মানুষের, যারা আমারই মতো স্বপ্ন দেখে স্বাধীনতার— গণতন্ত্রের।” ছবিতে বিজয় দিবসের পর দিন, ’৭১-এর ১৭ ডিসেম্বর আনন্দবাজার পত্রিকা-র প্রথম পৃষ্ঠা।
অপরাজিতা
ব্রাহ্ম পরিবারের স্বামীহারা মেয়েটি গতানুগতিক পারিবারিকতায় নিজেকে ভেসে যেতে দেননি। বিশ শতকের গোড়ায় ঔপনিবেশিক বাংলার পুরুষতান্ত্রিক সমাজের সঙ্গে লড়েছেন নিজের মতো, নিজের শর্তে। আপন শিক্ষিকা, কর্মী, গায়িকা, শিল্পী সত্তাকে লালন করেছেন নিজস্ব চর্যায়। উপেন্দ্রকিশোরের পুত্রবধূ, সুকুমার রায়ের স্ত্রী, সত্যজিৎ রায়ের মা— এই সব পরিচয় পেরিয়েও একক, স্বতন্ত্র ও পূর্ণ এক জীবন ছিল সুপ্রভা রায়ের (১৮৯২-১৯৬০) (ছবিতে)। সেই জীবনকেই দুই মলাটে বেঁধেছেন প্রেসিডেন্সির প্রাক্তনী, উইমেন্স ক্রিশ্চান কলেজে সমাজবিদ্যার শিক্ষিকা টুম্পা মুখোপাধ্যায়। ইংরেজিতে লেখা বইটির নাম সুপ্রভা রায়: দ্য আনভ্যাঙ্কুইশড (অ্যাভেনেল প্রেস)। চিরাচরিত জীবনকাহিনি এ নয়, সেই সময় ও সমাজের আলোয়, লিঙ্গ-পরিচিতি ও পুরুষতন্ত্রের মতো সামাজিক নির্মাণের শৃঙ্খলমুক্ত এক জীবনের বীক্ষণ। আছে সুপ্রভাকে লেখা রবীন্দ্রনাথের চিঠির প্রতিলিপি, সুপ্রভার বৃন্দগানের রেকর্ড ও ভাস্কর্যের ছবি, কলকাতার যে বাড়িগুলির সঙ্গে তাঁর জীবনেতিহাস জড়িয়ে রয়েছে, তাদের ছবিও। মুখবন্ধ লিখেছেন উপেন্দ্রকিশোর-সহোদর প্রমদারঞ্জনের উত্তরসূরি প্রসাদরঞ্জন রায়।
পাখির কথা
অতিমারি যখন আমাদের শরীর-মন আচ্ছন্ন করে রেখেছে, তখন প্রকৃতি ও পাখির দিকে তাকালে কেমন হয়? সেই ভাবনাই বিন্যস্ত এশিয়াটিক সোসাইটি, কলকাতা-র ডিসেম্বর বুলেটিনে। প্রকাশিত হয়েছে সম্প্রতি এশিয়াটিক সোসাইটিতে সংগৃহীত পাখির ছবির অ্যালবাম। তবে সোসাইটিতে পাখি নিয়ে চর্চা নতুন নয়। স্যর উইলিয়াম জোনস তাঁর বক্তৃতায় (১৭৯৩) এ বিষয়ে আলোকপাত করেছিলেন, এই বিষয়ে ইউরোপীয় চর্চার বহু নিদর্শন সোসাইটি লাইব্রেরিতে সংগৃহীত হয়েছিল। সেই সব দুর্লভ বইয়ের একটি তালিকাও সংযোজিত হয়েছে। আছে সোসাইটিতে সংরক্ষিত বেশ কিছু পক্ষী-চিত্রের আলোচনা, সোসাইটি জার্নালে উনিশ শতকে পাখি-চর্চার বিবরণও। এ ছাড়াও রাজেন্দ্রলাল মিত্রের পাখির জগৎ, পক্ষিবিশারদ সেলিম আলি ও সত্যচরণ লাহার কথা, ভারতে পাখি-চর্চার ইতিহাস। উপেক্ষিত হয়নি বর্তমানও, আছে পূর্ব কলকাতার জলাভূমি, সাঁতরাগাছি ঝিল, সল্টলেকের বনবিতানের প্রসঙ্গ। এমনকি এক আলোচনায় জানা যাবে পাখিদের মনের কথাও।
জীবনচিত্র
‘পুঁজিঘন’ নয়, ‘শ্রমঘন’ ছবিতে বিশ্বাস তাঁর। ইতিহাস ও বর্তমানকে তুলে ধরেন আপসহীন দায়বদ্ধতায়। তানভীর মোকাম্মেলের সাম্প্রতিকতম কাহিনিচিত্র রূপসা নদীর বাঁকে এক প্রকৃত দেশব্রতী, ত্যাগী মানুষের জীবনভিত্তিক ছবি। ছবিতে আদ্যন্ত মানুষের কল্যাণে নিবেদিত, অকৃতদার বিপ্লবী মানব মুখোপাধ্যায়কে ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা করে রাজাকাররা। এই মানুষটির জীবনই এ ছবির উপজীব্য, সেই প্রেক্ষিতে ভারতের স্বাধীনতা-পূর্ব ও পরবর্তী তিন দশকের উত্তাল সময়ও। এসেছে স্বদেশি ও তেভাগা আন্দোলন, বিশ্বযুদ্ধ, মন্বন্তর, দেশভাগ, পাকিস্তানি পীড়ন পেরিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে সেখানকার বামপন্থীদের সদর্থক ভূমিকা, আবার রাজশাহী জেলের খাপড়া ওয়ার্ডে বন্দি-হত্যার ঘটনাও। সরকারি অনুদান ও সাধারণ মানুষের অর্থসাহায্যে নির্মিত ছবিটি বিজয় দিবসের আবহে ১১ ডিসেম্বর মুক্তি পেল বাংলাদেশে। জানুয়ারিতে গোয়ায় ভারতীয় আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ‘ওয়র্ল্ড প্যানোরামা’ বিভাগে দেখানো হবে ছবিটি। চেষ্টা চলছে কলকাতায় বিশেষ প্রদর্শনেরও।
বিজয়া সর্বজয়া
শিল্প-সংস্কৃতির উৎকর্ষ উদ্যাপনে, জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে পথ দেখানো নারীদের স্বীকৃতি দিতে কাজ করছে কলকাতার সংস্থা ‘হ্যালো হেরিটেজ’। প্রতি বছর তারা দিয়ে থাকে ‘বিজয়া সর্বজয়া’ সম্মান। এর আগে বিভিন্ন বছরে তা পেয়েছেন বনশ্রী সেনগুপ্ত, অলকানন্দা রায়, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়, নির্মলা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। অতিমারি-পীড়িত এ বছরে ঘরে ও বাইরে নারীদের অক্লান্ত শ্রম ও ভালবাসা চলিষ্ণু রেখেছে সমাজকে, সেই কীর্তিকে মনে রেখে এ বারের অনুষ্ঠান হয়ে গেল গতকাল ১৩ ডিসেম্বর সন্ধেয়, নজরুলতীর্থে। এ বছরের ‘বিজয়া সর্বজয়া’ হলেন অপরাজিতা আঢ্য। শিক্ষা, সুরক্ষা, শান্তি, স্বাস্থ্য, তেজস্বিতা, সংগঠন, সাংবাদিকতা, সাহসিকতা, খেলা, বিনোদন, সমাজকল্যাণ ক্ষেত্রে সম্মানিতা হলেন আরও দশ জন কৃতী নারী।
বিজ্ঞানীর ঠিকানা
“প্রিয় প্রশান্ত, আমি খুব হতাশ। প্রেরণাদায়ী বক্তৃতা দিয়ে বেড়ানোর বদলে আমি ভেবেছিলাম ভারতে কিছু কাজ করার সুযোগ পাব।” ১৯৫৩ সালের ২৯ জুন ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউট-এর প্রতিষ্ঠাতা প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশকে এই চিঠি লিখেছিলেন জে বি এস হলডেন (১৮৯২-১৯৬৪)। পরের চার বছরের মধ্যেই পাকাপাকি ভাবে তাঁর ভারতে আসা, বন্ধু প্রশান্তের ইনস্টিটিউটে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেওয়া। জীবনের শেষ সাত বছর ভারতেই কাটান জন বার্ডন স্যান্ডারসন হলডেন, তার মধ্যে পাঁচ বছর কলকাতায়। পৃথিবীতে প্রাণের আবির্ভাব সংক্রান্ত ওপারিন-হলডেন তত্ত্বের প্রণেতা হিসেবে বিশ্ব মনে রেখেছে তাঁকে। তবে শুধু জৈব রসায়নের দিকপাল বিজ্ঞানীর পরিচয়ে তাঁকে বাঁধা যায় না। ডুবোজাহাজ সংক্রান্ত গবেষণা, জার্মান বাহিনীর মাস্টার্ড গ্যাস থেকে বাঁচার গ্যাস মাস্ক তৈরি থেকে শুরু করে সর্বসাধারণের মধ্যে বিজ্ঞানের প্রসারের লক্ষ্যে প্রবন্ধ লেখা— সবেতেই ছিল প্রবাদপ্রতিম ব্রিটিশ বিজ্ঞানীর অনায়াস গতায়াত। ১৯৬৪ সালে ওড়িশায় মৃত্যু হয় তাঁর, তারিখটা ১ ডিসেম্বর। তাঁর নামাঙ্কিত রাস্তা আছে এ শহরে, জে বি এস হলডেন অ্যাভিনিউ। প্রয়োজন আরও অর্থবহ ও কার্যকরী স্মরণের।
স্মরণশীর্ষে
দার্জিলিঙে তাঁদের বাড়ি পরিচিত ‘এভারেস্ট পরিবার’ নামে। আট বার উঠেছেন মাউন্ট এভারেস্টে। সাম্প্রতিক কালে বাঙালি পর্বতারোহীরা এভারেস্ট, কাঞ্চনজঙ্ঘা, অন্নপূর্ণা, মানাসলু, মাকালু ইত্যাদি আট হাজারি যে পর্বতশৃঙ্গগুলি জয় করেছেন, তার বেশির ভাগের পিছনেও তিনি— পেম্বা শেরপা (ছবিতে)। ২০১৮ সালের ১৩ জুলাই পূর্ব কারাকোরাম রেঞ্জের সাসের কাংরি-৪ শৃঙ্গজয় করে নামার পথে বরফের ফাটলে হারিয়ে যান পেম্বা। ফেরা হয়নি আর। স্রেফ পর্বতাভিযানে সাহায্যকারী শেরপা হিসেবে নয়, চেয়েছিলেন অভিযাত্রী পরিচয়ে মানুষ চিনুন তাঁকে। রক ক্লাইম্বিং কোর্স করে ‘মাউন্টেনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অব কৃষ্ণনগর’ (ম্যাক)-এর সদস্য হয়েছিলেন, সাসেরি কাংরি-৪’এ গিয়েছিলেন অভিযাত্রী হিসেবেই। তাঁর দাদা পাসাং ও আর এক ভাই তাশি শেরপাও এভারেস্টজয়ী। তিন ভাই এক সঙ্গে কাঞ্চনজঙ্ঘাতেও উঠেছেন। বাংলার পর্বতাভিযানে পেম্বা শেরপার অবদান স্মরণে ২০১৮-র অগস্টে কলকাতার মৌলালি যুব কেন্দ্রে স্মরণসভা হয়েছিল, তাঁর পরিবারকে অর্থসাহায্যের উদ্যোগও। এ বছর তাঁর স্মরণে প্রকৃতি ও আলোকচিত্র চর্চাকারী দুই সংস্থা ‘আরোহণ ওয়ান্ডারলাস্ট’ ও ‘ফোটোগ্রাফিড’ আয়োজন করেছিল পেম্বা শেরপা মেমোরিয়াল অনলাইন আলোকচিত্র প্রতিযোগিতা। গ্যালারি গোল্ডে গত ১২ ডিসেম্বর বিকেল ৫টায় হয়ে গেল তার পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান।
আনন্দগান
গীত, বাদ্য ও নৃত্য মিলেমিশে সঙ্গীতের বিরাট ছায়াপথ। মন্দির-আখড়া-দরগায় সাধন-ভজনে সঙ্গীতের পরিক্রমার শুরু, পরে প্রবেশ রাজদরবারের মান্য বৃত্তে। ক্রমশ প্রশ্ন ওঠে, সঙ্গীত কি সামাজিক, না কি ব্যক্তিগত অনুভব? শাস্ত্রমতে সিদ্ধ, না লোকজীবনে সম্পৃক্ত, যাকে অনেকে বলেন ‘অশাস্ত্রীয়’? উত্তরে মধ্যযুগের ভারতে ধ্রুপদ ও কীর্তন দুই ধারাকে ঘিরে কী ভাবে সাংস্কৃতিক বর্গীকরণ হয়েছিল, শোনালেন কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অভিষেক বসু। ৯ ডিসেম্বর আচমন পত্রিকার আয়োজনে ফেসবুকে হল ‘আচমন বক্তৃতামালা’-র চতুর্থ পর্ব, সেখানেই। শিরোনাম ‘আমার সকল গান তবুও তোমারে লক্ষ্য করে’, বিষয় ‘সঙ্গীতের সমাজভাবনা: ব্যক্তিকাল, ভক্তিকাল’। ‘ভক্তি’ অর্থে ভজন, ভক্তের নির্জন অনুভূতি এবং ভক্তি আন্দোলনের সামাজিক প্রেক্ষিত— এই দুইয়ের মধ্যে সঙ্গীতের অবস্থান বিশ্লেষণ করলেন বক্তা। তাঁর মতে, বর্তমানের ধ্রুপদী, লোকসঙ্গীত, ভক্তিগীতি জাতীয় বর্গবিভেদ এ দেশে প্রকট ছিল না, এর অনেকটাই হয়তো ঔপনিবেশিক প্রভাব।
নতুন উদ্যমে
বিহারের প্রত্যন্ত গ্রামের দরিদ্র মানুষেরা, বাঁচার মতো পর্যাপ্ত খাবার, বিদ্যুৎ, চিকিৎসা— কিছুই যাঁদের জোটে না, তাঁদেরই এক জন অন্যকে বাঁচাতে কী অসম্ভব মানবিক হয়ে ওঠে, এই নিয়েই ‘নান্দীকার’-এর সাম্প্রতিকতম প্রযোজনা মানুষ (সঙ্গের ছবিতে তারই দৃশ্য)। প্রফুল্ল রায়ের গল্প অবলম্বনে সপ্তর্ষি মৌলিক ও অনিন্দিতা চক্রবর্তী রচিত এই নাটকের নির্দেশনায় সোহিনী সেনগুপ্ত। অভিনীত হবে নান্দীকারের জাতীয় নাট্যমেলায়, অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসে। মেলা ১৯-২০ ডিসেম্বর। সঙ্গে আরও তিনটি প্রযোজনা: পাঞ্চজন্য, নাচনী, মাধবী। ৩৭-এ পদার্পণ করতে চলেছে এই নাট্যমেলা, অতিমারিজনিত পরিস্থিতির জন্যই রাজ্যের বা রাজ্যের বাইরের কোনও প্রযোজনা প্রদর্শন থেকে বিরত থাকছে নান্দীকার। “উৎসব নয়, যাঁরা এই বছরে কাজ করতে করতে প্রাণ হারিয়েছেন তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন এবং তাঁদের স্মরণ করে নতুন উদ্যোগে আবার কাজ শুরু করার প্রার্থনা এ বারের নাট্যমেলার মূল উদ্দেশ্য,” বললেন দলের পরিচালিকা সোহিনী। সাবধানতা অবলম্বন করেই নাট্যোৎসবে মঞ্চে নামবেন বছর পঁচাশির ‘তরুণ’ রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত এবং সত্তরোর্ধ্ব ‘তরুণী’ স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত। এই পরিস্থিতিতেও যা ব্যতিক্রম এবং প্রেরণাদায়ী। সঙ্গে এক ঝাঁক নতুন মুখ, রোগপীড়িত এই সময়েও যাঁদের উপস্থিতি ভরিয়ে তুলেছে নান্দীকারের সংসার।
ইতিহাসের দায়িত্ব
বাংলার ইতিহাসব্রতীদের মতবিনিময় ও বিষয়চর্চার প্রিয় পরিসর ‘পশ্চিমবঙ্গ ইতিহাস সংসদ’। চার দশকেরও বেশি সময় প্রতিষ্ঠানটি দেশ-বিদেশের ইতিহাসবিদদের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করছে। কালিক বিবরণ যাতে ধর্মের মোহে আচ্ছন্ন না হয়, সে দিকে লক্ষ রেখে ইতিহাস পরিবেশনায় নিরপেক্ষতা, বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি যোগ করাই প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য— গবেষক, অধ্যাপক, ছাত্র ও আগ্রহীজনকে সঙ্গে নিয়ে। ১৯ ডিসেম্বর বিকেল ৪টেয় এই সংসদ ও এশিয়াটিক সোসাইটি, কলকাতা-র যৌথ উদ্যোগে হবে ‘দ্বিতীয় অধ্যাপক অনিরুদ্ধ রায় স্মারক বক্তৃতা ২০২০’। বক্তা রত্নাবলী চট্টোপাধ্যায়। ইতিহাস চর্চায় যে দায়িত্বজ্ঞান এবং চেতনা বিকাশের ধারাটি নিয়ে এই সংসদ বারে বারে সোচ্চার হয়েছে, সেই বিষয়টি বিশ্লেষণ করবেন তিনি, বলবেন ‘ইতিহাসের বিকৃতি ও ঐতিহাসিকের দায়িত্ব’ নিয়ে। পশ্চিমবঙ্গ ইতিহাস সংসদের ইউটিউব চ্যানেলে বক্তৃতাটি শোনা যাবে।
নাটকের উৎসব
কলকাতার নাট্যদলগুলিরই রমরমা এ বারের ‘কল্যাণী নাট্যচর্চা কেন্দ্র’-র নাট্যোৎসবে। ২৩-২৭ ডিসেম্বর উৎসব, কল্যাণীর ঋত্বিক সদন তো বটেই, নাট্যদলটির নিজস্ব ব্ল্যাকবক্স থিয়েটার ‘তাপস সেন কুমার রায় নাট্যভবন’-এ নাট্যচর্চার যে শিল্পগত পরিসর, সেখানে মঞ্চস্থ হবে নতুন প্রযোজনাগুলি, যেমন ‘স্বপ্নসন্ধানী’-র নবতম প্রযোজনা— ক্রিস্টোফার মার্লো অবলম্বনে রতন কুমার দাস রচিত অর্ধেক মানুষ-এর দু’টি শো। কৌশিক সেন নির্দেশিত এই নাটকে অভিনয় করছেন দেবশঙ্কর হালদার, রেশমী সেন, দিতিপ্রিয়া সরকার প্রমুখ। এই নাটকের এটিই প্রথম অভিনয় কল্যাণীর ঐতিহ্যবাহী নাট্যোৎসবে। কোভিড অতিমারির কারণে সীমিত মাত্র পাঁচ দিনের এই উৎসবে দেখা যাবে আরও একটি নতুন নাটক, ‘প্রাচ্য’ নাট্যদলের— বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুপ্রিয় দত্ত অভিনীত আজাদি-র প্রথম মঞ্চায়ন। এই নাটকটি গিরিশ কারনাড প্রাণিত। আরও আছে ‘চেতনা’ নাট্যদলের প্রযোজনা কুসুম কুসুম, ‘সায়ক’-এর দামিনী হে এবং ‘হযবরল’-র নাটক একনায়কের শেষরাত।
শিল্প ও আমি
ইস্টার্ন মেট্রোপলিটান বাইপাসের ‘কলকাতা সেন্টার ফর ক্রিয়েটিভিটি’-তে (কেসিসি) শুরু হচ্ছে ‘আমি আর্টস ফেস্টিভ্যাল’। নান্দনিক প্রবাহে ব্যক্তি ‘আমি’-কে মেলানোর পথ দেখাবে এই মিলনমেলা। শিল্পোৎসব ১৭-২০ ডিসেম্বর, প্রথম সন্ধ্যার উদ্বোধনী আন্তর্জাল-বক্তৃতার বিষয় ‘বর্তমান ও ভবিষ্যতের শিল্প-শিক্ষণ পদ্ধতি’। বক্তা ভি রমেশ, রবিকুমার কাশী প্রমুখ। পরের দু’দিনও সন্ধ্যা ৭টা থেকে হবে আন্তর্জালিক আলোচনাচক্র। ১৮ ডিসেম্বর থেকে কেসিসি-তে শিল্প প্রদর্শনী, পটচিত্র নিয়ে আলোচনা ও কর্মশালা। ১৮ তারিখ বেলা সাড়ে ১২টায় গম্ভীরা শিল্পীদের অনুষ্ঠান, সান্ধ্য আলোচনায় ভারতে লেখালিখির পরিসরে শিল্পের উপস্থাপনা নিয়ে বলবেন তপতী গুহঠাকুরতা, কবিতা সিংহ, ন্যান্সি আদাজানিয়া। ১৯ তারিখ দেখা যাবে নতুন শিল্পীদের কাজ, ২০ তারিখ টুসু ও ভাদু গানে উৎসব-সমাপ্তি। আগ্রহীজন উৎসব উপভোগ করতে পারবেন কোভিড বিধি মেনে কেসিসি-তে, সেই সঙ্গে সংস্থার ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজেও।
হাঁড়ি বাঁধো
‘সুজন গাছে বাঁধালে হাঁড়ি/ মিলবে আসল চিনি...’ সার বুঝেছিলেন সাধক কবি। বাঙালির শীতের শ্রেষ্ঠ ফসল নলেন গুড়ের পরতে পরতে এমন গভীর জীবন-দর্শন। প্রিয়তম সুরভিটুকু আগের থেকে ফিকে কি? সন্দেহ ঘনিয়ে উঠলেও তার কাছে নিঃশর্ত সমর্পণই বাঙালি জন্মের ভাগ্যলেখা। করোনাকালের দুর্বিপাকে জীবন মরুভূমি হলেও, খেজুর গাছের প্রাণভোমরা অমৃতরসটুকু এ বছর আরও খোলতাই, বলছেন সমঝদারেরা। কলকাতার মিষ্টি-স্রষ্টাদের দরবারে তাই এখন জোর আনাগোনা হাঁসখালি, বহড়ু, বসিরহাট, কাটোয়া কি দইহাটের গুড় চাষির। নকুড়, বলরাম বা রিষড়ার ফেলু ময়রার বিশেষজ্ঞ কর্তা চোখ বুজে বলে দেবেন, কোনটা নিখাদ, কোনখানে আখের গুড়ের পাইলিংয়ে ভেজাল মিশেছে। পায়েস, মোয়া থেকে সন্দেশ, কাঁচাগোল্লায় কেমন গুড় বা পাটালির প্রয়োগ মোক্ষম, তা নিয়েও তত্ত্বের ছড়াছড়ি। বচ্ছরকার এই শীত-সুরভিটুকু আবহমান, তবু চিরনতুন।
লোকশিল্প নিয়ে
রামকৃষ্ণ মিশন আবাসিক মহাবিদ্যালয় নরেন্দ্রপুরের (স্বশাসিত) বাংলা বিভাগের উদ্যোগে গড়ে উঠছে একটি লোকসংস্কৃতি চর্চা ও গবেষণা কেন্দ্র। উদ্দেশ্য, নানা লোকশিল্পবস্তু প্রদর্শনের পাশাপাশি গবেষকদের লোকসাহিত্য ও শিল্পচর্চার পরিসর গড়ে তোলা। কারুশিল্প, মৃৎশিল্প, কাঠ ও শোলা শিল্প-সহ হস্তশিল্পের সম্ভার সংরক্ষণ করবেন ওঁরা। থাকবে চড়িদার ছৌ মুখোশ, পাঁচমুড়ার ঘোড়া, ডোকরা, পিংলার পট, নকশি কাঁথা, কৃষ্ণনগরের মাটির পুতুল, লৌকিক দেবদেবীর মূর্তি ও ছলন, সরা, ঘট, প্রদীপ, বাদ্যযন্ত্র, ঢেঁকি, কৃষি সামগ্রী, পালকি, নৌকা, ঘোড়া ও গরুর গাড়ি, হাতে টানা রিকশা ইত্যাদি। লোকগবেষক ও সংগ্রাহকদের নাম-ঠিকানা, ছবি, গ্রন্থতালিকা সংগ্রহের কাজ চলছে, লোকশিল্পীদের ছবি ও পঞ্জি, পুথি-পাণ্ডুলিপি চয়নও। লোকশিল্পীদের অনুষ্ঠান ছাড়াও সেমিনার, কর্মশালা, ক্ষেত্রসমীক্ষার উদ্যোগ করা হবে, আছে লোকসাহিত্য ও গ্রাম সাহিত্য-সংস্কৃতি নিয়ে সার্টিফিকেট কোর্সের ভাবনাও। প্রদর্শশালা ও গ্রন্থাগারের জন্য লোকসামগ্রী, বই, পত্রিকার খোঁজে আছেন ওঁরা, দাতার নামেই সংরক্ষিত ও প্রদর্শিত হবে সযত্নে।
ছোট ছবির বিশ্ব
ছোট ছবি আকারে ছোট হতে পারে, কিন্তু দর্শকের মনে তার প্রভাব ছোট নয় মোটেই। সবাই মিলে ছোট ছবি দেখা ও সেই নিয়ে অর্থবহ সংযোগ ও সংলাপ সৃষ্টির লক্ষ্যে, চলচ্চিত্রপ্রেমী দর্শকগোষ্ঠী ও ছবি-করিয়েদের একত্রে মেলাতে চাইছে ‘ক্যালকাটা ইন্টারন্যাশনাল শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’। ব্রিটিশ কাউন্সিল ইন্ডিয়া-র সহযোগিতায়, কলকাতার ‘ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্ম সোসাইটি’-র উদ্যোগে আয়োজিত এই ছবি-উৎসব শুরু হচ্ছে ১৮ ডিসেম্বর, চলবে ২০ তারিখ পর্যন্ত। থাকছে ৪৩টি দেশের স্বাধীন ও পেশাদার ছোট ছবি-করিয়েদের তৈরি অ্যানিমেশন-ছবি, ‘এক্সপেরিমেন্টাল শর্টস’, তথ্যচিত্র-সহ মোট ৯৬টি ছোট ছবি। অনেকগুলি ছবিই বিশ্বের বিভিন্ন ছবি-উৎসবে সাড়া ফেলেছে। উদ্যোক্তারা আয়োজন করেছেন কর্মশালা ও বেশ কয়েকটি মাস্টারক্লাস, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় স্মরণে একটি বিশেষ সাম্মানিক পুরস্কারও। উৎসব-সূচি ও বিশদ তথ্য জানা যাবে ‘ক্যালকাটা ইন্টারন্যাশনাল শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’-এর ফেসবুক পেজ এবং ‘ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্ম সোসাইটি’র ওয়েবসাইটে।
যায় যায় দিন
পুজোর দিন গোনা? মহালয়া থেকে শুরু। মধ্যবিত্তের মাইনের দিন গোনা? মাইনে পাওয়ার পরের দিন থেকে। পায়ের-তলায়-সর্ষের নেক্সট ট্রেকিংয়ের দিন গোনা, ফিরতি ট্রেন হাওড়ার প্ল্যাটফর্মে ঢুকতে না ঢুকতেই। পেশা বয়স রুচি-ভেদে দিন গোনার রকমসকম আলাদা, শুধু এ বছরটাই বোধহয় বিরল ব্যতিক্রম। গোটা দুনিয়া দিন গুনছে: কবে যাবি বাবা ২০২০? এখনও আধ মাস! আগামী বছর কী হবে, কী ভাবে ও কতটা, অজানা। তবু, এই দুঃসহ ক্যালেন্ডার বিদেয় হোক।
এই বাড়িতেই জন্ম ‘সন্দেশ’-এর
তাঁর জীবনে তৎকালীন সুকিয়া স্ট্রিটের ২২ নম্বর বাড়িটির ভূমিকা অপরিসীম। কলকাতায় কর্নওয়ালিস স্ট্রিট (এখন বিধান সরণি), শিবনারায়ণ দাস লেন প্রভৃতি জায়গায় ভাড়াবাড়িতে থাকার পর বিশ শতকের একেবারে গোড়ার দিকে ২২ সুকিয়া স্ট্রিটের (এখন ৩০বি মহেন্দ্র শ্রীমানি স্ট্রিট) বাড়িতে (ছবিতে) সপরিবার উঠে আসেন উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। ১৮৯৫ নাগাদ তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন নিজস্ব ছাপাখানার। তখনও পর্যন্ত এ দেশে অপরিজ্ঞাত হাফটোন ব্লকের নিখুঁত ছবি ছাপানোয় তাঁর মুদ্রণালয়ের সুনাম দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ফলে ছাপাখানা ও ছবি আঁকার স্টুডিয়োর প্রয়োজনে বড় বাড়ির সন্ধানে তাঁকে এখানে আশ্রয় নিতে হয়। গবেষক সিদ্ধার্থ ঘোষ তাঁর টুনটুনির বই ও ইউ. রায় এন্ড সন্স প্রবন্ধে দেখিয়েছেন, এত দিন পর্যন্ত তাঁর মুদ্রণালয় ‘ইউ রায়, বিএ, আর্টিস্ট’-এর নামে বিজ্ঞাপিত হলেও এ বাড়িতে আসার পরই প্রথম ১৯১০ সালে প্রবাসী পত্রিকায় এক বিজ্ঞাপনে ‘ইউ রায় অ্যান্ড সন্স’ প্রতিষ্ঠানের উল্লেখ মেলে। ওই বছরই টুনটুনির বই প্রকাশের মাধ্যমে সংস্থাটি প্রকাশনা-ব্যবসাতেও নাম লেখায়। এই বাড়ি থেকেই উপেন্দ্রকিশোর, সুকুমার, সুখলতার অনেক কালজয়ী বই প্রকাশের মুখ দেখেছে। পরে গড়পার রোডে নিজস্ব বসতবাটী প্রতিষ্ঠা করে তিনি এই সংস্থাকে সেখানে সরিয়ে নিয়ে যান, সত্যজিৎ রায় যা চিত্রিত করে চিরস্থায়ী করে রেখেছেন। সংস্থার প্রাতিষ্ঠানিকতার অভিযাত্রা শুরু এখান থেকেই। সন্দেশ পত্রিকার জন্মও এ বাড়িতে।
নীচের তলায় পশ্চিমাংশে ছিল ছাপাখানা। ওপরে দক্ষিণ দিকে থাকতেন উপেন্দ্রকিশোর। তাঁর সহোদর, বিপত্নীক কুলদারঞ্জনও তিন সন্তানকে নিয়ে থাকতেন। এই বাড়ির ‘স্মৃতির ছবি’ও দুর্লভ নয়। উপেন্দ্রকিশোর-তনয়া পুণ্যলতা চক্রবর্তী বাড়ির স্টুডিয়োর ছবি ফুটিয়ে তুলেছেন। লীলা মজুমদার শুনিয়েছেন ছাপাখানার মেশিনের শব্দ, রং-কালির গন্ধে মোহময় আবেশের কথা।
১৯১৪ সালে প্রবাসী-র বিজ্ঞাপনে উপেন্দ্রকিশোরের মুদ্রণালয় গড়পার রোডে স্থানান্তরের হদিস মেলে। সে বছর ডিসেম্বর-শেষে বা পরের বছর জানুয়ারির গোড়ায় ২০ কর্নওয়ালিস স্ট্রিট থেকে এখানে চলে আসে ‘কাম্তিক প্রেস’, যেখানে মুদ্রিত হত ভারতী পত্রিকা। প্রেসের স্বত্বাধিকারী ও ভারতী-র নবনির্বাচিত সম্পাদক মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়ের বিখ্যাত আড্ডা বসত এ বাড়ির তেতলার ঘরে। হেমেন্দ্রকুমার রায়, নলিনীকান্ত সরকার, সুধীরচন্দ্র সরকারের লেখায় আছে সে কথা। সবুজপত্র, মৌচাক, নাচঘর প্রভৃতি সাময়িকপত্রের প্রকাশস্থানও এই বাড়ি। ২০ ডিসেম্বর উপেন্দ্রকিশোরের প্রয়াণদিন, তাঁর স্মৃতিবহ কলকাতার সাক্ষী হয়ে এখনও দাঁড়িয়ে আছে বাড়িটি।