সে কালের কলকাতার শীতের মরসুমের অন্যতম আকর্ষণ ছিল ইংরেজি নতুন বছর বরণের উৎসব। খানাপিনা, নাচ-গান, হুল্লোড়-হইহইয়ে সেই উৎসব ছিল ‘সাহেবি’ শহরের সামাজিক জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্তারা নতুন বছর উপলক্ষে এলাহি উদ্যাপনের ব্যবস্থা করতেন। ১৭৮৯ সালের বর্ষবরণের খানাপিনার আয়োজন হয় কোম্পানির ওল্ড কোর্ট হাউস-এ। আমন্ত্রিত অতিথি-সৎকারে কচ্ছপ থেকে টার্কি কোনও কিছুরই কমতি ছিল না। এর সঙ্গে সমবেত অভ্যাগতরা রাজার স্বাস্থ্যপান করেছিলেন চব্বিশ দফা! আর প্রতি বার গেলাস নিয়ে ‘উল্লাস!’-এর পর গোরা সেপাইরা এক দফা করে বন্দুক ছুড়েছিল কেল্লা থেকে।
নতুন বছরের আগমন উপলক্ষে আয়োজন হত ঘোড়দৌড়ের। নিমন্ত্রিত অতিথিদের মনোরঞ্জনের আয়োজন সম্পর্কে একটা আন্দাজ পাওয়া যায় ১৭৮৪ সালের ২ জানুয়ারি, ক্যালকাটা গেজেট-এর প্রকাশিত প্রতিবেদনে। রেসের পর অতিথিদের জন্য যে তাঁবুতে প্রাতরাশের ব্যবস্থা হয়, সেখানে এক সঙ্গে দেড়শো জনের হাত-পা ছড়িয়ে খাওয়ার বন্দোবস্ত। খাওয়াদাওয়া শেষে পাশের আর একটি তাঁবুতে শুরু হয় নাচ, চলেছিল দুপুর দু’টো পর্যন্ত।
ইউরোপীয়দের নিজস্ব হুল্লোড়োৎসব হিসেবে শুরু হলেও, ধীরে ধীরে বাঙালিরাও নিমন্ত্রণ পেতে শুরু করলেন এই উৎসবে। আজ থেকে ১৯০ বছর আগে, ১৮৩০ সালের ১ জানুয়ারির সান্ধ্য উৎসবে গভর্নর জেনারেল উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক এ দেশীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের আপ্যায়িত করেন খানাপিনা ও নাচের আসরে। সংবাদপত্রে নিমন্ত্রিতদের তালিকাও ছাপা হয়, যার মধ্যে ছিল দ্বারকানাথ ঠাকুর, রূপলাল মল্লিক, রাধাকান্ত দেব, রামকমল সেন-সহ সে যুগের ওজনদার কলকাতাবাসীর নাম।
‘হোয়াইট টাউন’-এর উৎসবের এই মরসুমে সাহেবরা খরচ করতেন দু’হাতে। আর সেই ক্রেতাদের সুবিধার জন্য একটা আস্ত নতুন বাজারের দ্বারোদ্ঘাটন করা হয় পয়লা জানুয়ারিতে, সালটা ১৮৭৪। সে দিনের সেই বাজার— নিউ মার্কেট— আজও কলকাতার বড়দিন বা নিউ ইয়ার-সহ সারা বছরের কেনাকাটার একটা বড় আকর্ষণ।
অভিজাত বাঙালিদের মধ্যে নববর্ষ নিয়ে উৎসাহ থাকলেও সাধারণ মানুষের ইংরেজি নববর্ষ পালনের রমরমা উত্তরকালের সংঘটন। প্রথম দিকে সাহেবি কেতায় অভ্যস্ত মানুষেরাই মূলত এই উদ্যাপনে অংশ নিতেন। বেড়াতে যাওয়া, সার্কাস দেখা ও সামাজিক মেলামেশায় কেটে যেত দিন। সঙ্গে ভালমন্দ খাওয়াদাওয়া। সময় ও শতকের ঘূর্ণনে আজ বাঙালির পার্বণের তালিকায় ইংরেজি বর্ষবরণেরও প্রতাপী উপস্থিতি। সেই ভাবখানাই উঠে এসেছে ছড়া-কবিতাতেও: “গাছেরও খাই, তলার কুড়াই, জানুয়ারি বৈশাখে।/ ঠাণ্ডাতে খাই প্যাস্ট্রি এবং গরমে আইসক্রিম/ নববর্ষ আর নিউ ইয়ার দুটোই দ্রিদিম দ্রিম।” ছবিতে ১৮২৫ সালের এক শুভেচ্ছা-কার্ডে একই সঙ্গে ক্রিসমাস ও ইংরেজি নতুন বছরের উৎসব-বার্তা। ছবি: গেটি ইমেজেস
বঙ্গপথিক
এ দেশে আগত বিদেশিদের বঙ্গবিদ্যাচর্চায় ডম আন্তোনিয়ো থেকে ফাদার দ্যতিয়েন এক সুদীর্ঘ পরম্পরা। আবু সয়ীদ আইয়ুবের মতে, লেখক হিসেবে ফাদার পল দ্যতিয়েন (১৯২৪-২০১৬) (ছবিতে) ছিলেন অবাঙালিদের মধ্যে সেরা। তাঁর ডায়েরির ছেঁড়াপাতা, রোজনামচা ও আটপৌরে দিনপঞ্জি পড়লেই এ কথার গুরুত্ব বোঝা যায়। ৩০ ডিসেম্বর এই বঙ্গপথিকের জন্মদিন গত কুড়ি বছর ধরে পালন করে আসছে দক্ষিণ কলকাতার ‘সম্প্রীতি আকাদেমি’। ২০১৩ সালে তাঁর ৯০তম জন্মদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ফাদার নিজে। অতিমারির জন্য এ বােরর আয়োজন আন্তর্জালিক। বুধবার বিকেল ৫টায় ফাদার দ্যতিয়েনের জীবন ও সৃষ্টি নিয়ে ওয়েব-আলোচনায় থাকবেন বিশিষ্ট কবি, অধ্যাপক, আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষকেরা। প্রকাশিত হবে সংস্থার সম্পাদক সুরঞ্জন মিদ্দের দু’টি বই। এই অনুষ্ঠানে প্রতি বছর দেওয়া হয় উইলিয়াম কেরি, ডেভিড ম্যাককাচ্চন ও আহমদ শরীফের নামাঙ্কিত সম্মাননা, এ বারও হবে তা। “আমি ভারতবর্ষে আসিনি। আমি এসেছি বঙ্গদেশে, বঙ্গদেশ আমার ভারতবর্ষ,” বলেছিলেন যিনি, সেই ফাদার পল দ্যতিয়েনের জন্মদিনে এই শহরের সনিষ্ঠ নিবেদন।
লেখা রবে
‘গোলাভরা ধানের মতোই তার ছিল গলা-ভরা গান’— বন্ধু হেমন্ত মুখোপাধ্যায় সম্পর্কে উক্তি কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের। ভেলভেট-কণ্ঠ, স্পষ্ট উচ্চারণ, সাবলীল স্বচ্ছ গায়ন— এই নিয়েই হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, প্রয়াণের তিন দশক বাদেও অম্লান তাঁর জাদু। শিল্পীর জন্মশতবর্ষে তাঁর সঙ্গীতময় জীবন ও কৃতি নিয়ে গত ২৪ ডিসেম্বর গগনেন্দ্র শিল্প প্রদর্শশালায় শুরু হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ আয়োজিত প্রদর্শনী আমার গানের স্বরলিপি লেখা রবে, বিন্যাসে স্বপন সোম। চলবে ১ জানুয়ারি, ২০২১ পর্যন্ত, প্রতিদিন দুপুর দু’টো থেকে রাত ৮টা। করোনার আতঙ্ক সরিয়ে গানকে কেন্দ্র করে ফের মঞ্চ-অনুষ্ঠানে শামিল বাঙালি, চলছে ‘বাংলা সঙ্গীতমেলা’। এই প্রদর্শনী তারই অংশ। ৩১ ডিসেম্বর বিকেল ৩টেয় রবীন্দ্র সদন প্রাঙ্গণে একতারা মঞ্চে আলোচনাসভা, বিষয় ‘বাংলা আধুনিক গান ও চলচ্চিত্রে লোকসঙ্গীতের প্রভাব’। বলবেন সুরজিৎ চট্টোপাধ্যায়, স্বপন সোম, শুভেন চট্টোপাধ্যায়, অরুণ চক্রবর্তী।
পার্টিশন-কথা
২০১৫ থেকে ২০১৯, এই কয়েক বছরে ‘বেঙ্গল পার্টিশন ডিপোজ়িটরি’ নামে একটি জনগবেষণা প্রকল্প পরিচালনা করেছে নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়। প্রকল্পে যুক্ত প্রায় ৫০ জন সমীক্ষক, গবেষক ও শিক্ষক, যৌথ ভাবে কাজ করছে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ও। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হয়েছিল প্রকল্পের ডিজিটাল সংগ্রহশালা (সিএলটিসিএসএনএসওইউ ডট ইন ওয়েবসাইটে, বেঙ্গল পার্টিশন ডিপোজ়িটরি নামে), উদ্বোধন করেছিলেন দেবেশ রায়। ভারত তথা বাংলা ভাগ নিয়ে তিন খণ্ডে বই প্রকাশের ভাবনাও ছিল নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের, তারই প্রথম খণ্ডটি প্রকাশিত হতে চলেছে এ বার, বাংলার পার্টিশন-কথা: উত্তর প্রজন্মের খোঁজ (সম্পাদনা ও গ্রন্থনা: মননকুমার মণ্ডল) নামে। বইয়ে আছে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার সত্তরোর্ধ্ব তিনশো জনের সাক্ষাৎকারের পূর্ণাঙ্গ তালিকা ও নির্বাচিত জীবনভাষ্য, বাংলা ভাগ ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সমীক্ষামূলক প্রবন্ধ। ৩ জানুয়ারি রবিবার বিকেল সাড়ে ৩টেয় এক আন্তর্জাল-অনুষ্ঠানে গ্রন্থটির আনুষ্ঠানিক প্রকাশ, সঙ্গে আলোচনাও।
বেতার বাঁধনে
অতিমারিতে বাইরের দরজা বন্ধ হয়েছে, কিন্তু অন্তরে-অন্দরে খুলে গেছে অনেক নতুন ভুবন। করোনাকালে শুরু এমনই এক কমিউনিটি রেডিয়ো স্টেশন—রেডিয়ো কোয়রান্টিন কলকাতা। মার্চ থেকে শুরু আন্তর্জালে। তাঁদের প্রাণের নির্যাস, ‘একাকী থেকো না, অসময়ে....’ কলকাতার গণ্ডি ছাড়িয়ে সারা পৃথিবীর মানুষ জুড়েছেন এই ই-বেতার বাঁধনে। পাঠিয়েছেন নিজেদের সৃষ্টি— কবিতা, গান, পাঠ, কথা, গল্প, অভিজ্ঞতা। সহনাগরিকদের সঙ্গে ভাবনার বিনিময়, চিকিৎসক-মনোবিদদের পরামর্শও চলছে। ‘সকলের জন্য বিজ্ঞান’, ‘সমকালের ডায়েরি’ বিভাগগুলির নানা পর্বে শোনা গিয়েছে মহাকর্ষ তরঙ্গ নিয়ে আলোচনা থেকে কাশ্মীর ও ৩৭০ ধারার বিশ্লেষণ, এনআরসি-কথা। ২০ ডিসেম্বর থেকে প্রতি রবিবার সকাল ১১টায় চলছে ‘পরিবেশের সহজ পাঠ’, আলাপে দীপেশ চক্রবর্তী, সুগত হাজরা, ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়। নেপথ্য কারিগররা অনুষ্ঠানগুলি পডকাস্টের ব্যবস্থা করছেন ইউটিউব-সহ অন্য সম্প্রচার-পরিসরেও।
আঁকায়, লেখায়
বিশিষ্ট রাজনৈতিক কার্টুনিস্ট স্যর ডেভিড লো-র ১৩০তম জন্মবর্ষ আগামী বছর। কলকাতা থেকে প্রকাশিত বিষয় কার্টুন পত্রিকার (সম্পাদনা: বিশ্বদেব গঙ্গোপাধ্যায়) সম্প্রতি প্রকাশিত সংখ্যাটি তাঁর প্রতি শ্রদ্ধায় নিবেদিত। নিউজ়িল্যান্ডের মানুষ ডেভিড আলেকজ়ান্ডার সিসিল লো (১৮৯১-১৯৬৩) ১৯১৯ সালে লন্ডনে চলে যান, সেখানেই তাঁর বর্ণময় কার্টুন-কেরিয়ারের ব্যাপ্তি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলারের জার্মানি ও মুসোলিনির ইটালির আঁতাত সংক্রান্ত তাঁর কার্টুন সবিশেষ আলোচিত। ফ্যাসিবাদী শক্তিকে আগাগোড়া কটাক্ষ করেছে তাঁর তুলি, এমনকি ছাড় পায়নি ব্রিটেনের ঔপনিবেশিক মানসিকতাও। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ শাসনাধীন উপনিবেশ ভারত, দেশভাগও ঠাঁই পেয়েছে তাঁর কার্টুনে। ভারতীয় সংবাদপত্রেও ছাপা হয়েছে স্যর লো-র কার্টুন। গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে কার্টুন ও তার ইতিহাস নিয়ে কাজ করছে বিষয় কার্টুন পত্রিকা, শুধু কার্টুন নিয়ে বাংলায় এমন গবেষণাধর্মী পত্রিকা বিরল। বর্তমান সংখ্যায় ডেভিড লো-র জীবন ও কাজ নিয়ে আছে মোট ১৩টি প্রবন্ধ, লিখেছেন কলকাতার কার্টুনিস্ট ও কার্টুন বিশেষজ্ঞরা। গত ২৪ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার কলেজ স্ট্রিটে ‘বুক ফার্ম’ প্রকাশনীর শো-রুমে এক অনুষ্ঠানে প্রকাশিত হল বিশেষ সংখ্যাটি।
সংস্কৃতি-নায়ক
বীরভূমে গণদেবতা-র শুটিং। উপন্যাসে ছিরু পাল গোটা গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে, সেই দৃশ্য ক্যামেরায় তুলতে গিয়ে সমস্যা। ছবির সেট তো জ্বালিয়ে দেওয়া যায় না, কাঠামো বেরিয়ে পড়বে। শেষে কাঁকসার জঙ্গলে এক জনজাতি গ্রামের খোঁজ মিলল, সে গ্রামের সব মানুষ অন্যত্র চলে গেছেন, রয়ে গেছে তাঁদের পরিত্যক্ত ভাঙাচোরা বাড়িঘর। মাওবাদীদের যাতায়াত থাকায় তখন বেলা তিনটের পরেই পথঘাট জনশূন্য। ইউনিটের যে কর্মীরা জায়গাটাকে শুটিংযোগ্য করে তুলতে ওখানে থেকে গিয়েছিলেন, তাঁদের রসদ পৌঁছতে সন্ধেয় মূল রাস্তায় গাড়ি রেখে জঙ্গলের মধ্যে কয়েক কিলোমিটার পথ হেঁটে যেতে হত। বিপদ জেনেও এক সন্ধেয় জোর করে সে পথে পরিচালকের সঙ্গী হয়েছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। অন্ধকার বনপথে যেতে ভরসা টর্চের আলো, সে ভাবেই পৌঁছে কর্মীদের হাতে চা খেতে খেতে সবাইকে গান শুনিয়েছিলেন তিনি— স্মৃতিমেদুর তরুণ মজুমদার। ২০ ডিসেম্বর জ্ঞান মঞ্চে হয়ে গেল ‘অপরাজিত সৌমিত্র স্মরণ সন্ধ্যা’, বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের সঙ্গে সভার আহ্বায়ক ছিলেন তরুণবাবু। বললেন পবিত্র সরকার, বাদল দাস, অনীক দত্ত, পর্দায় ফুটে উঠল বিভাস চক্রবর্তী, পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়, গৌতম ঘোষ, মমতাশংকর, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের শ্রদ্ধার্ঘ্য। ছিলেন পৌলমী বসু ও সৌগত চট্টোপাধ্যায়, শেষে ‘স্মরণীয় অভিনেতা, কবি ও সংস্কৃতি-নায়ক’ সৌমিত্র-স্মরণে দেবজ্যোতি মিশ্রের নির্দেশনায় বিশিষ্ট শিল্পীদের সঙ্গীতার্ঘ্য। ছবি আমন্ত্রণপত্র থেকে, শিল্পী হিরণ মিত্রের স্কেচে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
শ্রীচরণেষু
১৯৯৫ সালে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের ৬০তম জন্মবর্ষে থিয়েটার-জগতের পক্ষ থেকে তাঁর সংবর্ধনার আয়োজন করেছিল ‘নাট্য সংহতি’, বিভাস চক্রবর্তীর নেতৃত্বে। তাঁর মঞ্চজীবনের, অফুরান নাট্যস্মৃতির টুকরো ছবি অনুষ্ঠানে তুলে ধরেছিলেন প্রিয় মানুষটি। তাঁর স্মৃতি তো অপার, তাঁকে মনে রেখে এ বার নাট্য সংহতি, অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টস ও বাংলা থিয়েটারের সদস্য ও কর্মীরা আয়োজন করেছেন শ্রদ্ধাজ্ঞাপন সন্ধ্যা ‘সৌমিত্রদা শ্রীচরণেষু’, নতুন বছরের প্রথম দিন শুক্রবার বিকেল ৫টায়, অ্যাকাডেমি মঞ্চে। থাকবে সৌমিত্র-অভিনীত নাটক ও চলচ্চিত্রের নির্বাচিত অংশ, সাক্ষাৎকার, সৌমিত্র-কণ্ঠে কবিতা পাঠের রেকর্ডিং। উপস্থিত থাকবেন নাটক-চলচ্চিত্র-শিল্পজগতের বিশিষ্টজন। কোভিড-বিধি মেনে প্রেক্ষাগৃহে প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত, বাইরে বিকল্প উপস্থাপনের ব্যবস্থা থাকছে।
মঞ্চ থেকে মাঠে
বেহালার সখেরবাজারের মহলাঘর থেকে মঞ্চে প্রথম নাট্য প্রযোজনা দু’বছর আগে। ‘সহজ’ নাট্যদল কিন্তু শুধু মঞ্চেই সীমাবদ্ধ রাখেনি নিজেদের, ছুটে গিয়েছে নানা সামাজিক কাজেও। আমপান-বিপর্যয়ের পরে সুন্দরবনে গিয়ে ত্রাণসামগ্রী বিলি করেছেন, লকডাউন-পর্বে উপার্জনহীন নাট্যকর্মীদের পাশেও দাঁড়িয়েছেন ওঁরা। নতুন বছরের শুরুতে, আগামী ৩ জানুয়ারি ওঁদের আয়োজন ফুটবল প্রতিযোগিতা— ‘সহজ কমিউনিটি কাপ’। সেখানে যোগ দিচ্ছে, ‘নান্দীকার’, ‘ফোর্থ বেল’-সহ আটটি নাট্যদল, বাংলা ব্যান্ড ‘বিয়ন্ড ইনফিনিটি’, শিল্পীদের নিয়ে তৈরি আরও একটি দল। দু’টি ভাগে ভাগ করে খেলাগুলি হবে মিন্টো পার্কের ভিএ স্পোর্টস এরিনায়। ফুটবলের প্রতি ভালবাসা থেকে, করোনা-আবহে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত শিল্পীদের একটু ‘অন্য রকম’ ভাবনার সূত্রে একসূত্রে বাঁধার পরিকল্পনা থেকেই এমন প্রতিযোগিতার আয়োজন। ম্যাচ পরিচালনা করবেন আইএফএ অনুমোদিত তিন রেফারি।
শতবর্ষ পরে
রবীন্দ্রনাথের কল্পনা ও শ্রমের সম্প্রসারণের ফলেই তাঁর আশ্রম-বিদ্যালয় ব্যাপ্তি লাভ করেছিল ‘বিশ্বভারতী’-র রূপে-রূপান্তরে। ১৩০৮ বঙ্গাব্দের ৭ পৌষ শান্তিনিকেতন ব্রহ্মবিদ্যালয়ের স্থাপনা, আর ১৩২৮ সালের ৮ পৌষ ‘বিশ্বভারতী পরিষদ্ সভা’-র প্রতিষ্ঠা। ঔপনিবেশিক ভারতে রবীন্দ্রনাথ তাঁর এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এক দিকে যেমন স্বদেশি সমাজ তৈরির কাজে লাগাতে চেয়েছিলেন, তেমনই উৎসাহী হয়েছিলেন এই প্রতিষ্ঠানের অঙ্গনে বসুধাবাসীর সঙ্গে কুটুম্বিতার সম্পর্ক স্থাপনে। ‘সর্বমানবের যোগসাধনের সেতু’ শান্তিনিকেতনের শিক্ষা বইয়ের প্রাকারে মন আর চোখকে আটকে রাখত না। সেখানকার জীবনচর্যা সঙ্গীতে-কলাবিদ্যায় স্নাত হয়ে জন্ম দিত এক বিশেষ নন্দনবোধের। সেই বোধ প্রতিবেশীকে আঘাত করত না, প্রকৃতিকে হরণ করত না, পুঁজির প্রাচুর্যকে অস্বীকার করে সহজ শ্রীমন্ত জীবনের আনন্দকে বরণ করে নিত। রবীন্দ্রনাথ হাত লাগিয়েছিলেন পল্লিসংগঠনে, বিদ্যার বিস্তারের জন্য আয়োজন করা হয়েছিল দূরশিক্ষাসঞ্চারী গ্রন্থমালার, রাজনীতির নায়কেরা সে দিন কবিগুরুর কাছে আসতেন পাঠ নিতে— সামাজিকতার দ্বারে রাষ্ট্রিকতা নত হয়ে বসত। শতবর্ষ পরে চিত্রে-চরিত্রে কবিগুরুর সাধনা স্বাধীন-রাষ্ট্রের অনুগ্রহে কী রূপ পরিগ্রহ করল, সময়ই তা বলে দিচ্ছে, বলে দেবে। তাঁর স্বপ্ন ও সাধনার স্বরূপ পর্যালোচনার এই তো যথার্থ ক্ষণ। ছবিতে ‘পুনশ্চ’ বাড়িতে, একাকী।
পঞ্চাশ ছুঁয়ে
কমলকুমার মজুমদার থেকে ভাস্কর চক্রবর্তী, উদয়ন ঘোষ, অরূপরতন বসু— বহু লেখকের লেখায় সমৃদ্ধ এই পত্রিকা— একালের রক্তকরবী। সম্পাদক ছিলেন প্রদীপ ভট্টাচার্য। সত্তরের দশকের কলকাতায় পথ চলা শুরু, তখন নাম ছিল রক্তকরবী। গত বছর কলকাতা বইমেলা চলাকালীন নিজস্ব স্টলেই প্রয়াত হন প্রদীপবাবু। পত্রিকার প্রকাশনা কিন্তু থেকেছে নিরবচ্ছিন্ন। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে ত্রৈমাসিক এই পত্রিকার সুবর্ণ জয়ন্তী সংখ্যা (সম্পাদনা: অজয়কুমার মোহতা)। রয়েছে ‘স্মৃতিলেখা’, ‘ভাবনা-চিন্তা’-র মতো বিভাগ, উপন্যাস, বড় ও ছোট গল্প। বিভিন্ন প্রবন্ধে ফিরে এসেছে প্রয়াত বিশিষ্ট লেখকদের স্মৃতি, আরবি-ফারসি-বাংলা ভাষার সম্পর্ক সন্ধান। আছে ভ্রমণবৃত্তান্ত, অনুবাদ কবিতাও।
শেষ ও শুরু
শুরু হয়েছিল ১৯৯৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর। থিয়েটারের মানুষদের থিয়েটার দিয়েই নতুন বছর বরণের উৎসব, সারা রাত নাটকের অভিনয়। এই উদ্যাপনের নাম ‘নাট্যস্বপ্নকল্প’। কোভিড-পরিস্থিতিতে এ বছর বদলেছে পরিকল্পনা, অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসে সুরক্ষা বিধি মেনে বিকেল ৫টা থেকে অনুষ্ঠান, তবে রাতভর নয়। আয়োজক হিসেবেও এ বার ‘অন্য থিয়েটার’ নাট্যদলের সঙ্গে আছে ‘স্বপ্নসন্ধানী’ ও ‘প্রাচ্য’। এক নবীন শিক্ষার্থীকে ‘অনীতা-আনন্দী বৃত্তি’ প্রদানের মধ্য দিয়ে উৎসবের শুভ সূচনা, তার পর দেবাশিসের নির্দেশনায় বিভাস চক্রবর্তীর লেখা লকডাউনের নাটক, ‘অন্য থিয়েটার’ প্রযোজনা। পরে দু’টি নাটকের অভিনয়— ‘প্রাচ্য’ নাট্যদলের গিরিশ কারনাড প্রাণিত আজাদি, অভিনয়ে বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায়, সুপ্রিয় দত্ত-সহ অন্যরা, এবং কৌশিক সেনের নির্দেশনায়, ক্রিস্টোফার মার্লো অবলম্বনে রতনকুমার দাস রচিত অর্ধেক মানুষ, ‘স্বপ্নসন্ধানী’-র প্রযোজনা। নতুন বছরেও শহরের নাট্যাভিনয় ধারা নিরবচ্ছিন্ন, অ্যাকাডেমি মঞ্চে ২ জানুয়ারি শনিবার সন্ধে ৬টায় ‘নাট্যআনন’ অভিনয় করবে গণেশ গাথা। হরিমাধব মুখোপাধ্যায়ের লেখা এই নাটকের নির্দেশনা ও অভিনয়ে চন্দন সেন। ৩ জানুয়ারি সন্ধে ৬টায় মঞ্চের বাইরে, অ্যাকাডেমির সামনে অভিনীত হবে যুগনায়ক, বিবেকানন্দের ভূমিকায় শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়। দলের ৩০তম জন্মদিন উপলক্ষে এই উৎসব।
রাশিয়া-চর্চা
রুশ দেশ নিয়ে বাঙালি আবেগ বহু প্রাচীন। আর তার আধার কলকাতার ‘গোর্কি সদন’। নিয়ত সেখানে বহু উৎসাহীর আনাগোনা। গত বইমেলায় থিম দেশ রাশিয়ার প্যাভিলিয়ন থেকেই ঘোষিত হয়েছিল ভারত-রুশ ‘বিশেষ বন্ধুত্ব’-এর কুড়ি বছর পূর্তির কথা, সেই উপলক্ষে বছরভর একগুচ্ছ অনুষ্ঠান আয়োজনের পরিকল্পনা হয়েছিল। অতিমারিতে সে সবই স্থগিত। কিন্তু ভাটা পড়েনি উৎসাহে। মধ্য-অগস্ট থেকে প্রতি শুক্রবার সন্ধেয় গোর্কি সদনের ফেসবুক পেজে রুশ দেশ, সাহিত্য ও সংস্কৃতির নানা দিক ও আঙ্গিক নিয়ে বলছেন রাশিয়া বিশেষজ্ঞ তথা প্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠান আধিকারিক গৌতম ঘোষ। তুলে ধরছেন নিকোলাই রোয়েরিখ, ভাসিলি ভেরশাগিন-এর মতো রুশ মনীষীদের জীবন ও কীর্তি, বিশদে পরিচয় করাচ্ছেন সে দেশের ইতিহাসের সঙ্গে। সরাসরি প্রশ্ন করারও সুযোগ থাকছে। গত তিন সপ্তাহ আলোচনা হয়েছে গেরাসিম লেবেদেভ-কে নিয়ে। বছরের শেষ আলোচনা, অনুষ্ঠানের একুশতম সংস্করণও তাঁকে নিয়েই।
জগজ্জ্যোতি
কলকাতায় বৌদ্ধ সংস্কৃতি চর্চার সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য দু’টি নাম, অনাগারিক ধর্মপাল ও কৃপাশরণ মহাথের। প্রথম জন ‘মহাবোধি সোসাইটি অব ইন্ডিয়া’-র প্রতিষ্ঠাতা, দ্বিতীয় জন ১৮৯২ সালে স্থাপনা করেছিলেন বেঙ্গল বুদ্ধিস্ট অ্যাসোসিয়েশন ‘বৌদ্ধ ধর্মাঙ্কুর সভা’। প্রতিষ্ঠানের জার্নাল জগজ্জ্যোতি-র প্রথম প্রকাশ ১৯০৮ সালে (ছবিতে প্রথম সংখ্যার প্রচ্ছদ)। ১২৫ বছর পেরিয়ে এসেছে মধ্য কলকাতার এই প্রতিষ্ঠানটির, সেই উপলক্ষে জার্নালের একটি বিশেষ সংখ্যা প্রকাশিত হচ্ছে আগামী ৩১ ডিসেম্বর, বিশিষ্ট বৌদ্ধ ধর্ম ও সংস্কৃতিবেত্তা বেণীমাধব বড়ুয়ার ১৩২তম জন্মদিনে। দলাই লামা, বেণীমাধব বড়ুয়া, স্বামী প্রজ্ঞানানন্দ, গোপালকৃষ্ণ গাঁধী-সহ প্রাজ্ঞজনের লেখায় সমৃদ্ধ সংখ্যাটি। সম্পাদনায় হেমেন্দু বিকাশ চৌধুরী, ভূমিকা লিখেছেন জহর সরকার।
দেখুক জগৎ
দেড়শো বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে এসেছে যে শিল্পশিক্ষা প্রতিষ্ঠান, তার গৌরবগাথা বর্ণনার অপেক্ষা রাখে না। ‘গভর্নমেন্ট কলেজ অব আর্ট অ্যান্ড ক্রাফ্ট’, কলকাতার এই সরকারি আর্ট কলেজ বঙ্গের শিল্পপ্রবাহ ও পরম্পরার প্রাচীন সাক্ষী। এখানেই অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সান্নিধ্যে এসে নন্দলাল বসু, মুকুল দে, যামিনী রায়, তারও পরে অতুল বসু, গোপাল ঘোষ, হেমেন মজুমদার, জয়নুল আবেদিনের মতো শিল্পীরা বদলে দিয়েছেন দেশের শিল্প-মানচিত্র। প্রাচীন ও নবীন, প্রাক্তন ও বর্তমানকে শিল্পসূত্রে বাঁধতে কাজ করে চলেছে প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তনী সংগঠন ‘জিসিএসি অ্যালামনি’, কলেজের সদ্য উত্তীর্ণ (এ বছরের) ছাত্রছাত্রীদের শিল্পকৃতি সকলের সামনে তুলে ধরতে তাঁরা আয়োজন করছেন প্রদর্শনী ‘বিকাশমনা ২০’। করোনাকালে প্রদর্শনী আন্তর্জালিক, দেখা যাবে প্রাক্তনীদের ওয়েবসাইটে (জিসিএসিঅ্যালামনি ডট ইন)। শুরু হয়েছে গতকাল, ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত।
আর একা নয়
একাকিত্ব তো শুধু মানুষের মধ্যেই ঘনায় না, ছেয়ে যায় শিল্প পরিসরেও। অতিমারিতে সব ‘পাবলিক স্পেস’ বন্ধ থাকায় এ বছর শিল্পরসিকদের আনাগোনা ছিল না, জমছিল কেবল মনখারাপের ধুলো। তা সরিয়ে, ‘পারফর্মিং আর্ট’-কে মানুষের মধ্যে, জনপরিসরের মধ্যে ফের ফিরিয়ে আনতে শিল্প সংস্থা ‘আর্টসফরওয়ার্ড’-এর উদ্যোগ ‘রিক্লেম’— একা পড়ে-থাকা শিল্প ও শিল্পস্থানকে জীবনে ফিরিয়ে আনার দাবি। কলকাতার হেরিটেজ ভবন কারেন্সি বিল্ডিং এখন ‘ঘরে বাইরে’ নামের চমৎকার প্রদর্শশালা, কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় প্রাচীন সেই বাড়িরই অন্দরে-কন্দরে, চারপাশের আলোকচিত্র-ভাস্কর্য-চিত্রশিল্পের পটভূমিতে ২০ ডিসেম্বর বিকেলে ফুটে উঠল অনুপম শিল্প-অভিজ্ঞতা— অ্যান ফ্রাঙ্কের ডায়েরির পাতা, কোভিড-পূর্ব নিজেকে লেখা কবিতা, পরিযায়ী শ্রমিকদের অনন্ত হেঁটে যাওয়া, চাওয়ালার জীবন, সমষ্টিজীবন ও মনের উথালপাথাল। শিল্পীরা— শতাক্ষী নন্দী, সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়, পাভেল পাল, পিন্টু দাস, সিলভেস্টার মার্ডি ও অঙ্কিতা দত্তগুপ্ত।
বর্ষশেষ
অনলাইন ক্লাসে দিদিমণি বললেন, এ বছর শিখেছ এমন পাঁচটা শব্দ লেখো তো চটপট! ছোট্টটি তৎক্ষণাৎ মাথা দুলিয়ে রেডি: “করোনা, কোভিড, কোয়রান্টিন, প্যানডেমিক, লকডাউন।” এগুলো নয়, এই সব রোগ-অসুখ ছেড়ে কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স থেকে লেখো পাঁচটা। “আচ্ছা। সুশান্ত, রিয়া, ড্রাগস, মাইগ্র্যান্ট, মারাদোনা...” ঠিক আছে ঠিক আছে, এক কাজ করো, বাবা, মা, দাদু-দিদা, বাড়ির সবার কথা ভেবে পাঁচটা শব্দ... “এ তো সোজা। নেটফ্লিক্স, সুইগি, উবার, ইনসুলিন, সেরিব্রাল...” উফ, এ সব না, নিজেকে নিয়ে পাঁচটা শব্দ? “আমাকে নিয়ে? ল্যাপটপ, প্রজেক্ট, ইউটিউব, অ্যালোন, ডিপ্রেসড... ম্যাম ‘ডিপ্রেসড’-এ কি ডবল এস?”
উদার অগ্রণী এক সারস্বতের স্মৃতি
গৌর লাহা স্ট্রিটের কালীমন্দিরে পৌরোহিত্য করতে হাওড়া জেলার নারনায় ৫৮০ বিঘা নিষ্কর ভূসম্পত্তি ছেড়ে উত্তর কলকাতায় পাকাপাকি ভাবে চলে এসেছিলেন বল্লভাচার্যের বংশজ, পণ্ডিতপ্রবর উমেশচন্দ্র শিরোমণি। তদানীন্তন রামবাগানে, গোরা সাহেবদের প্রতিষ্ঠিত বিখ্যাত লন টেনিস ক্লাব ‘নর্থ ক্লাব’-এর দক্ষিণ কোণে বসতি স্থাপন করেন তিনি, ১৮৭১ সালের ৩ জুলাই। এই বাড়িই পরে ‘উমেশ ভবন’ (ছবিতে ডান দিকে) নামে পরিচিত হয়। স্ত্রী কাত্যায়নী দেবী ও চার পুত্র হরিদাস, হরিময়, হরিহর ও হরিভূষণকে নিয়ে ছিল উমেশচন্দ্রের সংসার। তৃতীয় পুত্র হরিহর বন্দ্যোপাধ্যায়ই উত্তরকালের হরিহর শাস্ত্রী বা হরিহর বিদ্যাভূষণ (ছবিতে বাঁ দিকে)।
১৮৭৫ সালের ৭ ডিসেম্বর জন্ম হরিহর বিদ্যাভূষণের। পঁচিশ বছর বয়সে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংস্কৃতে এম এ পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করে পেয়েছিলেন ‘শাস্ত্রী’ উপাধি। ১৯০১ সালে সংস্কৃত কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ, পণ্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর কাছ থেকে ‘বিদ্যাভূষণ’ উপাধি লাভ (মাঝের ছবিতে হরপ্রসাদ-স্বাক্ষরিত শংসাপত্র)। যোগ দেন রাজশাহী কলেজে। হেয়ার স্কুলের হেড পণ্ডিত ছিলেন, ১৯০৭ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন হরিহর বিদ্যাভূষণ। দীর্ঘ কর্মজীবন শেষে অবসর ১৯৩৩ সালে, তখন তিনি একই সঙ্গে সংস্কৃত, পালি ও বাংলার বিভাগীয় প্রধান! হরিহর বিদ্যাভূষণের লেখা সংস্কৃত শিক্ষা, সংস্কৃত পাঠ ও এলিমেন্টস অব স্যানস্ক্রিট গ্রামার অ্যান্ড কম্পোজ়িশন বইগুলি সে কালে পাঠ্যপুস্তক হিসেবে অনুমোদন পেয়েছিল। ‘কলিকাতা পণ্ডিত সভা’-র সভাপতি হরিহর বিদ্যাভূষণ বিশ শতকের কলকাতায় সংস্কৃত চর্চার প্রসারে ব্রতী হন। সুভাষচন্দ্র বসু, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, পশুপতিনাথ শাস্ত্রী, গৌরীনাথ শাস্ত্রী, শ্রীজীব ন্যায়তীর্থ, জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ, জ্যোতীন্দ্রবিমল চৌধুরী, বিচারপতি অজিত নাথ রায় প্রমুখ তাঁর ছাত্র। অনেকেই এসেছেন এ বাড়িতে। এসেছেন সীতারামদাস ওঙ্কারনাথও।
এই সুখস্মৃতিই সম্পদ উমেশ ভবনের বর্তমান বাসিন্দা, হরিহর বিদ্যাভূষণের উত্তরসূরি এই প্রজন্মের। হরিহর-পৌত্র দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দুই প্রপৌত্র পার্থসারথি ও তীর্থঙ্কর আগলে রেখেছেন এই সংস্কৃত-সাধকের আলোকচিত্র, তৈলচিত্র, স্মারক, শংসাপত্র, পুরনো খবরকাগজে হরিহর-সংক্রান্ত সংবাদ। উমেশ ভবনের দেওয়ালে গীতা ও উপনিষদের বাণী বিধৃত, পার্থসারথি বসিয়েছেন জিশু-স্মরণে ক্রসও। জন্মমাস বা দিন উদ্যাপনের ঘনঘটা নেই, কলকাতা তথা বঙ্গের শিক্ষা-সংস্কৃতিক্ষেত্রে উদার অগ্রণী এক সারস্বতের স্মৃতি বুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে দেড়শো বছর ছোঁয়া বাড়িটি।