স্বাস্থ্য ভবনকে অন্ধকারে রেখে স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ না থাকা এক সংস্থার থেকে অনেক বেশি দামে কেনা হয়েছে পেসমেকার। এমনই অভিযোগ উঠেছে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বিরুদ্ধে।
জুন মাসের ৭ তারিখ ঘটনাটি ঘটলেও স্বাস্থ্য ভবন তা জানতে পেরেছে দিন দুয়েক আগে। আর জি কর কর্তৃপক্ষ যদিও যুক্তি দিয়েছেন, গুরুতর অসুস্থ রোগীদের বাঁচাতেই তড়িঘড়ি ‘লোকাল কোটেশন’ করে অনেক বেশি দামে ১২টি পেসমেকার কিনতে তাঁরা বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু স্বাস্থ্য ভবন সেই উত্তরে সন্তুষ্ট হয়নি। বরং এর পিছনে হাসপাতালের একাংশের সঙ্গে পেসমেকার সংস্থার যোগসাজশ এবং কাট মানির বহুচর্চিত বৃত্তান্তই আঁচ করছেন তাঁরা। ফলে তদন্ত শুরু করেছে স্বাস্থ্য দফতর।
বিভিন্ন হাসপাতালে পেসমেকার সরবরাহের জন্য একটি নির্দিষ্ট সংস্থাকে দরপত্র ডেকে বাছাই করেছে স্বাস্থ্য দফতর। অনেক সময়ে বাছাই করা সংস্থা সময়মতো ও পরিমাণমতো চিকিৎসার সামগ্রী বা ওষুধ সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়। একমাত্র তখনই স্বাস্থ্য ভবনকে জানিয়ে স্থানীয় ভাবে কোটেশন ডেকে হাসপাতাল তা কিনতে পারে।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, একটি সংস্থা ২০১৬ সাল থেকে স্বাস্থ্য দফতরে সিঙ্গল ও ডুয়াল চেম্বার পেসমেকার সরবরাহ করছিল। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ওই সংস্থার পাওনা টাকা আর জি কর দিতে পারেনি। কারণ, স্বাস্থ্য ভবন থেকে টাকা এসে পৌঁছয়নি। বাকি পড়েছিল প্রায় ৮৬ লক্ষ টাকা। বিপাকে পড়ে ওই সংস্থাও
পেসমেকার দেওয়ার পরিমাণ কিছুটা কমিয়েছিল, কিন্তু কখনওই বন্ধ করেনি। তা হলে আলাদা কোটেশন করে বেশি দামে পেসমেকার কেনার দরকার পড়ল কেন?
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের যুক্তি, জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে টানা প্রায় চার দিন হাসপাতালের ভাঁড়ারে কোনও পেসমেকার ছিল না। সেই সময়ে এমন আট জন রোগী কার্ডিওলজিতে ছিলেন যাঁদের শরীরে অস্থায়ী পেসমেকার লাগানো ছিল এবং অবস্থা গুরুতর ছিল। হাসপাতালের এক কর্তা বলেন, ‘‘কার্ডিওলজির কয়েক জন চিকিৎসক লিখিত ভাবে আমাদের জানান, অবিলম্বে ওই আট জনের শরীরে স্থায়ী পেসমেকার না বসালে যে কোনও সময়ে মৃত্যু হতে পারে। তাই বাধ্য হয়ে অন্য সংস্থার থেকে পেসমেকার কেনা হয়।’’ কিন্তু হাসপাতালের ক্যাথল্যাব থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১ থেকে ৭ তারিখের মধ্যে সরকারের বাছাই করা সংস্থা আর জি করে ২১টি পেসমেকার সরবরাহ করেছে। এক স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, ‘‘ওই আট জন রোগীর দেহে সেই পেসমেকার কেন বসানো হল না? তা ছাড়া, আট জনের জন্য ১২টি পেসমেকার কেন কেনা হয়েছে? বাকি চারটি পেসমেকার কোথায় গেল?’’
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, যে ধরনের পেসমেকার স্বাস্থ্য দফতর তাদের বাছাই করা সংস্থা থেকে ৪০,৯৮০ টাকায় কেনে সেই রকম পেসমেকার আর জি কর কিনেছে প্রায় ৫৭ হাজার টাকায়। আর যে পেসমেকার স্বাস্থ্য দফতর ৪১ হাজার টাকায় কেনে, তা কিনেছে ৬১ হাজার টাকায়। স্বাস্থ্যকর্তাদের প্রশ্ন, ‘‘পেসমেকারের জোগান ঠিকমতো হচ্ছে না এবং আট জন রোগীর জরুরি ভিত্তিতে তা দরকার, সেটা আর জি কর আমাদের জানায়নি কেন?’’ আর জি করের অধ্যক্ষ শুদ্ধোদন বটব্যালের উত্তর, ‘‘সব বিষয়ে কথায় কথায় স্বাস্থ্য ভবনকে জানানো যায় না। যা করা হয়েছে, রোগীদের স্বার্থেই করা হয়েছে। বাকি জবাব স্বাস্থ্য ভবনকে দেব।’’