Vishwakarma Puja 2022

বিশ্বকর্মা দিয়ে শুরু, এই পুজোতেও কি জব্দ হবে না শব্দ

শব্দ-তাণ্ডবের সব চেয়ে বেশি অভিযোগ এসেছে উত্তর ও মধ্য কলকাতা থেকে। উত্তরের বেশ কয়েকটি জায়গায় শুক্রবার রাত থেকেই তারস্বরে সাউন্ড বক্স বাজানো হয়েছে বলে অভিযোগ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৬:১৮
Share:

বেলাগাম: বিশ্বকর্মা পুজো উপলক্ষে ডিজে বাজিয়ে চলছে নাচ। শনিবার, আহিরীটোলা এলাকায়। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

আসন্ন উৎসবের মরসুমেও কি ভুগতে হবে শব্দ-দৈত্যের তাণ্ডবে? বিশ্বকর্মা পুজো দিয়েই শারদোৎসবের শুরু বলে মনে করেন অনেকে। শনিবার সেই পুজোয় শহর জুড়ে শব্দ-তাণ্ডবের যে চিত্র দেখা গেল, তাতে এই প্রশ্নই উঠতে শুরু করেছে। সেই সঙ্গেই প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে। অনেকেরই দাবি, অভিযোগ জানিয়েও সাহায্য মেলেনি। পরিবেশকর্মীদের বড় অংশেরই জিজ্ঞাসা, আদালতের একাধিক নির্দেশিকার পরেও কেন এ নিয়ে হুঁশ হয় না? কেন শব্দ-দৈত্যকে জব্দ করতে সাউন্ড লিমিটরের ব্যবহার নিয়ে কড়াকড়ি করা হয় না?

Advertisement

এ দিন শব্দ-তাণ্ডবের সব চেয়ে বেশি অভিযোগ এসেছে উত্তর ও মধ্য কলকাতা থেকে। দক্ষিণ কলকাতা তুলনায় শান্ত ছিল বলে খবর। উত্তরের বেশ কয়েকটি জায়গায় শুক্রবার রাত থেকেই তারস্বরে সাউন্ড বক্স বাজানো হয়েছে বলে অভিযোগ। বেলগাছিয়ার মিল্ক কলোনি এলাকার এমনই একটি পাড়ায় এ দিন দুপুরে গিয়ে দেখা গেল, মণ্ডপ ঘিরে বসানো হয়েছে বেশ কয়েকটি বিশাল সাউন্ড বক্স। তাতেই তারস্বরে গান বাজিয়ে নাচছেন অনেকে। কয়েক মুহূর্ত নাচানাচির পরেই গন্ডগোল বাধে দু’পক্ষের মধ্যে। কাছেই নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশকর্মীরা এসে ঝামেলা মেটান। এক পুলিশকর্মী বললেন, ‘‘প্রতি বারই ঝামেলা হয়। থানা থেকে তাই আগাম এখানকার দু’জায়গায় দু’জনকে রাখা হয়েছে। এই নিয়ে পাঁচ বার ঝামেলা মেটালাম। টালা, চিৎপুর, তপসিয়া, তিলজলা, ট্যাংরার মতো বহু থানা এলাকাতেই একই জিনিস চলছে।’’

একই রকম চিত্র বাগমারি রোড, আমহার্স্ট স্ট্রিট, ক্যানাল ইস্ট ও ওয়েস্ট রোড, কাশীপুরের নানা জায়গায়। শব্দ-তাণ্ডবের প্রতিযোগিতায় ওই সমস্ত জায়গাকেও পিছনে ফেলে দিয়েছে নিউ মার্কেট, রফি আহমেদ কিদওয়াই রোড সংলগ্ন একাধিক পাড়া। বাদ যায়নি আর জি কর এবং কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মতো ‘নো হর্ন জ়োন’ও। সেখানেও কয়েকটি পুজোয় দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বক্স বাজানো হয়েছে বলে অভিযোগ। দক্ষিণ কলকাতার কালীঘাট রোড ও ভবানীপুরের কিছু জায়গা থেকে এই রকম তারস্বরে বক্স বাজানোর অভিযোগ এসেছে। ভবানীপুরে কলকাতা পুলিশ হাসপাতালের কাছেই থাকেন সুমন ঘোষ। তাঁর দাবি, ‘‘রাতে এ নিয়ে থানায় ফোন করায় বলা হয়েছে, পুজো এসে গিয়েছে। কয়েক দিন তো একটু সহ্য করতেই হবে।’’

Advertisement

পরিবেশকর্মীদের যদিও দাবি, এমনটা হওয়ার কথাই নয়। প্রায় ১৮ বছর আগেই রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ এ নিয়ে কড়া অবস্থান নিয়েছিল। শব্দের মূলে গিয়ে জব্দ করতে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ইলেকট্রনিক্স ইন্ডাস্ট্রি ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড’ বা ওয়েবেল-এর সহযোগিতায় রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সাউন্ড লিমিটর তৈরি করে। এটি এমন একটি যন্ত্র, যেটি অ্যামপ্লিফায়ারের সঙ্গে যুক্ত থাকে। অ্যামপ্লিফায়ার থেকে যে শব্দ মাইক বা লাউড স্পিকারের মাধ্যমে বেরোয়, তা যাতে নির্ধারিত মাত্রার উপরে যেতে না পারে, তার নিয়ন্ত্রক হিসাবে কাজ করে সাউন্ড লিমিটর। অর্থাৎ, শব্দযন্ত্রের শব্দ বাড়ালেও এটা তাকে বাড়তে দেবে না। সেই সঙ্গেই এক নির্দেশিকায় পর্ষদ জানিয়ে দেয়, রাজ্যের সমস্ত মাইক্রোফোন ব্যবহারকারীকে খোলা জায়গায় মাইক্রোফোন চালাতে হলে বাধ্যতামূলক ভাবে সাউন্ড লিমিটর লাগাতেই হবে। অন্যথায় ‘এনভায়রনমেন্ট প্রোটেকশন অ্যাক্ট, ১৯৮৬’-র ১৫ নম্বর ধারা এবং ভারতীয় দণ্ডবিধির ২৬৮/২৯০/২৯১ ধারা অনুযায়ী শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। কিন্তু এই রাজ্যে তৈরি হওয়া সাউন্ড লিমিটর যে সংখ্যায় ভিন্ রাজ্যে বিক্রির জন্য যায়, তার সামান্যও এ রাজ্যে উৎসবের মরসুমে বিক্রি হয় না বলে দাবি। সাউন্ড লিমিটরের ব্যবহার নিয়ে কড়াকড়ি তো দূর, সামান্যতম সচেতনতাও দেখা যায় না বলে অভিযোগ। যেমন দেখা যায়নি বিশ্বকর্মা পুজোর দিন।

এ নিয়ে কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার পদমর্যাদার এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নিজস্ব দল পুজোয় ঘুরবে। থানা স্তরেও এ নিয়ে বেশ কিছু নির্দেশিকা পাঠিয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।’’ সেই সতর্কতায় আদৌ কাজ হবে তো? প্রশ্ন থেকেই যায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement