কালীঘাট মন্দির। —ফাইল চিত্র।
কালীঘাট মন্দির সংস্কারের কাজে হাত লাগিয়েছিল রিলায়েন্স গোষ্ঠী। সময়সীমা বেঁধেই কাজ শুরু করেছিল তারা। কিন্তু এখন মন্দির কমিটি সূত্রে খবর, সময়সীমার মধ্যে এই সংস্কারের কাজ শেষ করা যাবে না। আরও কয়েক মাস লাগতে পারে এই কাজে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুরোধে কালীঘাট মন্দির সংস্কারের কাজে হাত দিয়েছিল রিলায়েন্স গোষ্ঠী। জুন মাসে শুরু হওয়া এই সংস্কারের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ডিসেম্বর মাসে। রিলায়েন্স গোষ্ঠী আশ্বাস দিয়েছিল, ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহেই মন্দির সংস্কারের কাজ শেষ করে কমিটির হাতে তুলে দেওয়া হবে। কিন্তু তা শেষ করা সম্ভব হচ্ছে না বলেই মন্দির কমিটি সূত্রে খবর।
মন্দির কমিটির তরফে সহ-সভাপতি বিদ্যুৎ হালদার বলেন, ‘‘মন্দিরের বাইরের অংশের সংস্কারের কাজ দ্রুত করছে রিলায়েন্স গোষ্ঠী। তাদের কাজের গতিতে আমরা সন্তুষ্ট।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘কালীঘাটের মায়ের মূল মন্দির হচ্ছে হেরিটেজ হিসেবে ঘোষিত। তাই মূল মন্দিরের সংস্কার করতে গেলে হেরিটেজ কমিটির অনুমতি জরুরী ছিল। সম্প্রতি সেই অনুমতি পাওয়া গিয়েছে। এ বার মায়ের মূল মন্দিরের সংস্কারের কাজ শেষ করা হবে। তবে এ ক্ষেত্রে কিছুটা বাড়তি সময় লাগবে বলেই আমরা মনে করছি।’’ সংস্কারের কাজ দেখে খুশি মন্দির কমিটির কর্মকর্তারা।
মন্দির কমিটি সূত্রে খবর, মূল মন্দির, গর্ভগৃহ, ভোগঘর, নাটমন্দির, শিবমন্দির, মন্দিরের চাতাল, ভিতর এবং বাইরের দেওয়াল, বলির জায়গা-সহ গোটা মন্দির চত্বর সংস্কার হচ্ছে। তবে সংস্কারের যাবতীয় কাজ হবে কালীঘাট মন্দিরের ঐতিহ্য বজায় রেখেই। মা কালীর গর্ভগৃহ, ভোগঘর, নাটমন্দির, শিবমন্দির গ্রেড ‘এ’ হেরিটেজের তালিকাভুক্ত। তাই সংস্কারের জন্য এ ক্ষেত্রে কলকাতা পুরসভার হেরিটেজ কমিটি এবং হেরিটেজ কমিশনের অনুমতি প্রয়োজন ছিল।
মন্দির কমিটি সূত্রে খবর, হেরিটেজ কমিটির কাছে সংস্কারের অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল। তার পর হেরিটেজ কমিটি এবং মন্দির কমিটির মধ্যে তিন বার বৈঠক হয়। তার পর মা কালীর মূল মন্দির সংস্কারের অনুমতি দেয় হেরিটেজ কমিটি। সেই অনুমতি মেলায় এ বার হেরিটেজ তালিকাভুক্ত এলাকার সংস্কারের কাজ শুরু হতে চলেছে। এ ক্ষেত্রে অনুমতি পেতে কিছুটা সময় অতিবাহিত হয়েছে বলেই মনে করছে মন্দির কমিটির একাংশ। তাই সংস্কারের কাজ ডিসেম্বর মাসে শেষ করা যাবে না। তার জন্য কম করে আরও তিন মাস অপেক্ষা করতে হবে। মন্দির কমিটির একাংশ মনে করছে, পয়লা বৈশাখের আগে রিলায়েন্স গোষ্ঠী কালীঘাট মন্দির সংস্কারের কাজ শেষ করে তা মন্দির কমিটির হাতে তুলে দেবে।
গত চৈত্র সংক্রান্তিতে কালীঘাট মন্দিরে পুজো দিতে যান মুখ্যমন্ত্রী। তখনই কমিটির কাছে মন্দির সংস্কারের বিষয়ে জানতে চান তিনি। মন্দির কমিটির একাংশের দাবি, সংস্কারে বিলম্ব হওয়ার কথা শুনে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পরেই তিনি উদ্যোগী হয়ে রিলায়েন্স গোষ্ঠীকে মন্দির সংস্কারের দায়িত্ব নিতে বলেন। ২০১৯ সালে কালীঘাট মন্দির সংস্কারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল কলকাতা পুরসভাকে। মন্দির কমিটি এবং পুরসভার মধ্যে কথাবার্তায় ঠিক হয়, ১৮ মাসের মধ্যে কালীঘাট মন্দির সংস্কার শেষ করা হবে। সেই মতো কাজও শুরু হয়। কিন্তু প্রায় ৪ বছর পরেও মন্দির সংস্কারের কাজ শেষ হয়নি। এ সব জানার পরেই মুখ্যমন্ত্রী মন্দির সংস্কারের দায়িত্ব রিলায়েন্স গোষ্ঠীকে দেওয়ার ব্যাপারে উদ্যোগী হন। জুন মাস থেকে সংস্কারের কাজে হাত দিয়েছে রিলায়েন্স গোষ্ঠী।