ফাইল চিত্র
জামাইয়ের পছন্দ ইলিশের পাতুরি। তাই জামাইষষ্ঠীর সকালে মানিকতলা বাজারে দেড় কিলোগ্রামের ইলিশ কিনতে গিয়ে মাথায় হাত কাঁকুড়গাছির দুর্গাদাস চট্টোপাধ্যায়ের। দেড় কেজি ইলিশের দাম ১৮০০ টাকা! তা-ও টাটকা মাছ নয়। শেষ পর্যন্ত ১২০০ টাকা দিয়ে এক কেজি ওজনের ইলিশ কিনেই সন্তুষ্ট থাকতে হল দুর্গাদাসবাবুকে।
অতিমারি পরিস্থিতি ও সরকারি বিধিনিষেধের কড়াকড়ির আবহে জামাইষষ্ঠীর বাজার তুলনায় ম্লান বলেই মনে করছেন শহরের একাধিক বাজারের বিক্রেতারা। এই পরিস্থিতিতে বহু পরিবারেই জামাইষষ্ঠী পালন করা হয়নি। কিন্তু তবু ইলিশের বাজারদর অনেকটাই চড়া। যদিও মানিকতলা বাজারের ইলিশ বিক্রেতা প্রদীপ মণ্ডলের দাবি, ‘‘জামাইষষ্ঠীতে ইলিশের দাম এ বার খুব বেশি বেড়েনি। চাহিদার তুলনায় ইলিশের জোগান কিছুটা বেশিই আছে।’’
তবে ক্রেতারা কিন্তু জানাচ্ছেন, মাছের দাম কিছুটা চড়া। গড়িয়াহাটের মাছের বাজারে আসা এক ক্রেতার আফসোস, “কাতলার কালিয়া, ইলিশ সর্ষে আর ভেটকি ফ্রাই— তিন রকম পদ এক সঙ্গে জামাইকে খাওয়ানোর শখ এ বার পূর্ণ হল না। ভেটকির দাম কেজি প্রতি ৬০০ টাকা, কাতলা কেজি প্রতি ৪৫০ টাকা, ইলিশ ১২০০ টাকা।” লেক মার্কেটে পমফ্রেট বিকোচ্ছে কেজি প্রতি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়। গলদা চিংড়ি কেজি প্রতি ৮০০ টাকা। গড়িয়াহাট বাজারের ফিশ মার্কেট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য গণেশ দাসের অবশ্য দাবি, মাছের জোগান ঠিক থাকায় দাম খুব একটা চড়া হয়নি। ফিশ ইমপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অতুল দাস বলেন, “দিঘা, কাকদ্বীপ, ডায়মন্ড হারবার, বালেশ্বরের ইলিশের মরসুম এখনও শুরু হয়নি। সেই ইলিশ বাজারে এলে দাম কমবে।” পিছিয়ে নেই মাংসের দামও। শহরের একাধিক বাজারে কাটা মুরগির দাম প্রায় ২৫০ টাকা, খাসির মাংসের দাম ছুঁয়েছে ৭৫০ টাকা!
শুধু মাছ-মাংসই নয়, জামাইয়ের জন্য পঞ্চব্যঞ্জন রাঁধার সর্ষের তেলের দামও অনেকটাই বেশি। টালিগঞ্জের কৌশিক রায় বলছেন, “দুই জামাইকে সাত রকমের ভাজা খাওয়ানোর রেওয়াজ আছে আমাদের। কিন্তু সর্ষের তেলের দাম শুনেই তো ভিরমি খেতে হচ্ছে। ভাল মানের এক লিটার সর্ষের তেলের দাম ২২০ টাকা।” রাজ্য সরকারের টাস্ক ফোর্সের সদস্য রবীন্দ্রনাথ কোলে বলেন, “ভিন্ রাজ্য থেকে সর্ষের তেলের জোগান এ বার খুব কম। গত বার এই সময় সর্ষের তেলের দাম ছিল ১০০-১১০ টাকা।” ক্রেতারা জানাচ্ছেন, ইয়াসের তাণ্ডবের পরে নিচু জমির ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আনাজের দাম এমনিতেই এখন বেশি। তার সঙ্গে জামাইষষ্ঠী উপলক্ষে সেই দাম আরও একটু বেড়েছে।
জামাই বরণের জন্য ফলমূল কিনতে গিয়েও দাম শুনে ছেঁকা খেয়েছেন অনেকে। শহরের প্রায় সব বাজারেই হিমসাগর ও ল্যাংড়া আমের দাম ৭০ থেকে ৮০ টাকা। এক কেজি লিচু ২৫০-৩০০ টাকা, আপেল ২৫০ টাকা।
জামাইষষ্ঠী উপলক্ষে ফলের মতো দেখতে মিষ্টি বানিয়েছেন হাওড়ার ব্যাতাইতলার এক মিষ্টির দোকানের মালিক সৈকত পাল। তিনি বলেন, “একটি করে আম সন্দেশ, কাঁঠাল সন্দেশ, লিচুর পায়েস, স্ট্রবেরি রসগোল্লা এবং জামাইষষ্ঠী লেখা সন্দেশের ডালা মিলছে। অনেকে সেই ডালা জামাইকে পার্সেল করে পাঠাচ্ছেন।” ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকায় জামাইষষ্ঠীর মিষ্টির ডালা মিলছে সুদীপ মল্লিকের মিষ্টির দোকানেও। তবে জামাইষষ্ঠী লেখা মিষ্টির দাম শুনে অবশ্য পিছিয়ে আসছেন অনেক ক্রেতাই।