এন আর এস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গোলমালের পরে শহরের সরকারি হাসপাতালগুলিতে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বেসরকারি রক্ষীদের দক্ষতা বাড়ানোর বিষয়টিকে ইতিমধ্যেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ঠিক হয়েছে, কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (কমব্যাট ফোর্স)-এর নেতৃত্বে ওই নিরাপত্তারক্ষীদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
এ বার সরকারি হাসপাতালগুলির নিরাপত্তায় কোথায় কোথায় ফাঁক রয়েছে, তা চিহ্নিত করার উপরে জোর দিচ্ছে স্বাস্থ্য দফতর। সেই কাজে আজ,বৃহস্পতিবার এন আর এস এবং এসএসকেএম হাসপাতাল পরিদর্শন করবেন ডিসি (কমব্যাট) নভেন্দ্র সিংহ পাল। তাঁর সঙ্গে থাকার কথা স্বাস্থ্য দফতরের তরফে হাসপাতালগুলির দায়িত্বে থাকা আধিকারিকদের। ওই পরিদর্শনের পরেই হাসপাতালের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করবেন নোডাল অফিসার এবং স্বাস্থ্যকর্তারা। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখার পাশাপাশি হাসপাতালের পুলিশকর্মীদের বডি ক্যামেরা এবং ওয়াকিটকি দেওয়া হতে পারে।
প্রসঙ্গত, এন আর এসে চিকিৎসক নিগ্রহের ঘটনাকে কেন্দ্র করে জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতির জেরে গোটা রাজ্যে স্বাস্থ্য পরিষেবায় অচলাবস্থা দেখা দিয়েছিল। শেষমেশ নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকের পরে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেন তাঁরা। তার পরেই শহরের প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিরাপত্তার জন্য অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার পদমর্যাদার আধিকারিকদের নিয়োগ করে কলকাতা পুলিশ। তাঁদের মাথার উপরে নোডাল অফিসার হিসেবে রাখা হয় ডিসি (কমব্যাট) নভেন্দ্র সিংহ পালকে। দায়িত্ব নিয়েই তিনি প্রতিটি বড় হাসপাতালের আধিকারিক ও পুলিশকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে পুলিশের একাংশের তরফে অভিযোগ ওঠে, হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা বেসরকারি
নিরাপত্তারক্ষীদের অনেকেরই বয়স বেশি। নিয়মিত শারীরচর্চার অভ্যাস নেই তাঁদের। ফলে হাসপাতালে কোনও গোলমাল হলে বা অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে তা ঠেকাতে তাঁরা কত দূর ‘সক্ষম’ হবেন, সেই প্রশ্ন ওঠে। এই প্রেক্ষিতেই উঠে আসে ওই রক্ষীদের ‘শারীরিক সক্ষমতা’র মূল্যায়নের বিষয়টিও।
শহরের মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষগুলির সঙ্গে ডিসি (কমব্যাট)-এর প্রথম দফার সেই আলোচনার ভিত্তিতে হাসপাতালগুলির নিরাপত্তা নিয়ে একটি প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ কলকাতা পুলিশের তরফে স্বাস্থ্য ভবনকে জানানো হয়েছে বলে খবর। সূত্রের খবর, সেই পর্যবেক্ষণে কত রক্ষী প্রয়োজন, সিসি ক্যামেরা বাড়ানোর পাশাপাশি বর্তমানে কাজ করা নিরাপত্তারক্ষীদের কর্মদক্ষতার বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সেই সূত্রে দরপত্র ডেকে ‘সক্ষম’ রক্ষী নিয়োগের বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। এ জন্য অর্থ দফতরের অনুমতি আদায়েরও পরিকল্পনা রয়েছে। একই সঙ্গে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হস্টেলগুলির জন্য পৃথক রক্ষী নিয়োগ নিয়েও দরপত্র ডাকা হতে পারে। রাতে রোগীর পরিবারের কত জন হাসপাতাল চত্বরে থাকতে পারবেন, তা নিয়েও কড়াকড়ি করার কথা ভাবা হয়েছে।
যদিও নিরাপত্তারক্ষীদের ‘সক্ষমতার’ প্রশ্নে ভিন্ন মত রয়েছে স্বাস্থ্য ভবনের সচিব স্তরে। স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, গন্ডগোলের সময়ে রক্ষীদের পাওয়া যাচ্ছে কি না, তা সবার আগে নিশ্চিত করা জরুরি। হাসপাতালের মতো জায়গায় স্পর্শকাতর পরিস্থিতিতে অভিজ্ঞতারও প্রয়োজন। সে দিকটি নিয়েও চিন্তাভাবনা করা দরকার। বেসরকারি সংস্থার নিরাপত্তারক্ষীদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির প্রশ্নে প্রয়োজনে পুলিশ তাঁদের প্রশিক্ষণ দিতে পারে বলে জানান স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা। উল্লেখ্য, প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজের জন্য এক জন সচিব স্তরের আধিকারিককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁদের মাথার উপরে নোডাল অফিসার হিসেবে রয়েছেন এক জন অতিরিক্ত সচিব।
এক স্বাস্থ্যকর্তা বলেন, ‘‘জনসংযোগ আধিকারিক, অভিযোগ জানানোর সেল নিয়ে ইতিমধ্যেই পদক্ষেপ করা হয়েছে। এখন কাজ হচ্ছে, হাসপাতালগুলির নিরাপত্তা সংক্রান্ত ফাঁকগুলি চিহ্নিত করা। দুর্বলতাগুলি চিহ্নিত হলে সমাধানও বেরোবে। প্রচুর কিছু করার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, তা যাতে কার্যকর হয় সেটা নিশ্চিত করা।’’
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।