নতুন বছরেই ভেঙে ফেলা হবে টালা সেতু। ফাইল চিত্র
মন্দ স্বাস্থ্য নিয়েই বছর কাটল শহরের বিভিন্ন সেতু এবং উড়ালপুলের।
বয়স যাই হোক না কেন, প্রতিটি স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্টই বলছে, সামগ্রিক মেরামতির প্রয়োজন শহরের উড়ালপুল ও সেতুগুলির। সরকারি সূত্রের খবর, স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্টই জানাচ্ছে, কোনও সেতুরই কাঠামোর অবস্থা মজবুত নয়। কোথাও নিজস্ব ভারবহন ক্ষমতার চেয়েও বেশি ভার চেপে রয়েছে সেতুর উপরে। খালের উপরে দাঁড়ানো কোনও উড়ালপুলের স্তম্ভে ক্ষয় ধরেছে। সেগুলিরও পরিবর্তন প্রয়োজন বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। শহরের প্রায় সব ক’টি সেতু বা উড়ালপুলের উপরে ভারী যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করা ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে।
শহর-শহরতলির মূল ৪০টি সেতু বা উড়ালপুল ছাড়াও ছোট-বড় মিলিয়ে শহর জুড়ে বিভিন্ন সরকারি দফতরের অধীনে প্রায় ১০০টির বেশি সেতু রয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন ওঠে, সেগুলিকে রক্ষা করার দায়িত্ব কার? এই নিয়ে নির্দিষ্ট কোনও সদুত্তর মেলেনি। তবে বিভিন্ন দফতরের মধ্যে পারস্পরিক চাপানউতোর রয়েই গিয়েছে। ২০১৮ সালে মাঝেরহাট সেতু ভেঙে পড়ার পরেই রাজ্যের নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ঘোষণা করেন, শহরে কেএমডিএ-র তৈরি যে সমস্ত সেতু এবং উড়ালপুল রয়েছে সেগুলির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার পরে কোথাও কোনও মেরামতির প্রয়োজন থাকলে তার দ্রুত ব্যবস্থা করতে হবে। শুধু কেএমডিএ-র নিজস্ব সেতু বা উড়ালপুল নয়, শহরের মধ্যে সেচ দফতরের তৈরি সেতুগুলিও রক্ষণাবেক্ষণ করবে কেএমডিএ। অন্য দিকে পূর্ত দফতরের নিজস্ব উড়ালপুল বা সেতু ছাড়াও শহরের বাইরে সেচ দফতরের সেতুগুলি দেখভালের দায়িত্ব বর্তেছে পূর্ত দফতরের উপরেই।
পূর্ত দফতর নিয়ন্ত্রিত টালা সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরে তা ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। কেএমডিএ নিয়ন্ত্রিত সেতু বা উড়ালপুলের অবস্থা কী?
সংস্থার এক আধিকারিক জানান, শহর এবং শহরতলিতে কেএমডিএ-র নির্মিত বড় সেতু ও উড়ালপুলের সংখ্যা ৫০টি। তার মধ্যে ১৭টি উড়ালপুল ও সেতুর দু’টি পর্যায়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে ১১টি সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়েছে। কমবেশি সবক’টি সেতুরই মেরামতির প্রয়োজন বলে কর্তৃপক্ষের দাবি। তার মধ্যে বিশেষ ভাবে উল্লেখ করা রয়েছে, চেতলা লকগেট, বাঘা যতীন উড়ালপুল, চিংড়িঘাটা উড়ালপুল, কালীঘাট সেতু এবং অরবিন্দ সেতুর আমূল সংস্কার প্রয়োজন। সম্প্রতি উল্টোডাঙা উড়ালপুলের যে অংশে ফাটল দেখা দিয়েছিল তার মেরামতি হয়েছে। শিয়ালদহ এবং আর জি কর সেতু থেকে পুরনো ট্রামলাইন সরিয়ে ভার কমানো হবে। অববিন্দ সেতুর ‘বেয়ারিং’ পরিবর্তনের পরিকল্পনাও জানিয়েছেন আধিকারিকেরা। প্রায় ৬০ বছরের পুরনো বিজন সেতুর বর্তমান কাঠামোর মেরামতি প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞেরা। ওই সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষায় দেরি কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। একই ভাবে ঢাকুরিয়া সেতু নিয়েও সন্তুষ্ট নন সংস্থারই আধিকারিকদের একাংশ।
শহরের নগর স্থপতি তথা সেতু বিশেষজ্ঞ দীপঙ্কর সিংহ বলেন, ‘‘শহরের উড়ালপুল বা সেতুর মূল সমস্যা তার রক্ষণাবেক্ষণ এবং নজরদারি। কোনও কোনও সেতুর ভারবহন ক্ষমতা না দেখে তার উপরে বিটুমিনের আস্তরণ পড়েছে। রয়েছে ট্রামলাইনও।’’
এই প্রশ্নে পূর্ত দফতর এবং কেএমডিএ মুখে কুলুপ আঁটলেও কেএমডিএ-র আধিকারিকদের একাংশের অভিযোগ, যে কোনও উড়ালপুল মেরামতির জন্য তা বন্ধ রাখার প্রয়োজনীয় সময় মেলে না। তা ছাড়াও অনেক কাজই লাল ফিতের ফাঁসে আটকে থাকে। তবে, আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই দরপত্রের আবেদন করে কাজ শুরু করা হবে বলেও সংস্থার দাবি।
ফলে, নতুন বছরে শহরের সেতু ও উড়ালপুলগুলির স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে বলেই সরকারি তরফে আশা প্রকাশ করা হয়েছে।