প্রতীকী ছবি।
এক দিনে ৯২ হাজার টাকা চিকিৎসার খরচ ধার্য করেছিল একটি বেসরকারি হাসপাতাল। সেই ঘটনায় সুবিচার চেয়ে স্বাস্থ্য কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছিলেন রোগীর পরিজনেরা। সোমবার সেই মামলারই শুনানি চলাকালীন দশ মিনিটের ফোনে ৫০ হাজার টাকা ছাড় দিতে রাজি হয়ে গেলেন ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ!
দীর্ঘ দিন ধরে প্রস্টেটের ক্যানসারে ভুগছেন কলেজ স্ট্রিটের বাসিন্দা সুব্রত বসুমল্লিক। উডল্যান্ডস হাসপাতালে ভর্তি থাকাকালীন ৬৯ বছরের ওই বৃদ্ধের করোনা ধরা পড়ে। এ দিন স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারম্যান অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, করোনা ধরা পড়ার তিন ঘণ্টার মধ্যে রোগীকে অন্যত্র নিয়ে যেতে পরিবারের উপরে চাপ দেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্বাস্থ্য কমিশন সূত্রের খবর, শয্যার ভাড়া ২২ হাজার টাকা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাবদ ৩৬ হাজার টাকা এবং ১৫ হাজার টাকার ওষুধ-সহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে ২৪ ঘণ্টায় ৯২ হাজার টাকা বিল করা হয়। চেয়ারম্যান জানান, মামলার শুনানি চলাকালীন ১০ মিনিট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ফোনে কথা বলার জন্য সময় চান হাসপাতালের আইনজীবী। কথা বলার পরে তিনি জানান, রোগীকে ১০ হাজার টাকা ছাড় দেওয়ার কথা চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছিল। কিন্তু বৃদ্ধ সেই প্রস্তাবে রাজি হননি। এর পরেই ওই আইনজীবী ৫০ হাজার টাকা ছাড় দেওয়ার প্রস্তাব দেন। রোগী তাতে রাজি হওয়ায় মামলার নিষ্পত্তি হয়ে যায়।
অতিরিক্ত খরচ সংক্রান্ত আরও দু’টি মামলা ছিল এ দিন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ২৬ অগস্ট রুবি জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন স্বপন শূর (৬০)। হাসপাতাল থেকে ছুটি পাওয়ার পরের দিন, ৫ সেপ্টেম্বর তিনি মারা যান। অভিযোগ, ন’দিনে ওই হাসপাতালে বিল হয়েছিল ৮ লক্ষ ৮৭ হাজার ৬৬১ টাকা। কমিশনের চেয়ারম্যান জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য ছিল, তাঁরা বিলে ইতিমধ্যেই ৩৪ হাজার টাকা ছাড় দিয়েছেন। যদিও রোগীর পরিবারের দাবি, ছাড় দেওয়া হয়নি। চেয়ারম্যান জানান, মৃতের পরিজনদের বিল মেটানোর নথি জমা করতে বলা হয়েছে। তাঁদের বক্তব্য ঠিক হলে ৩৪ হাজার টাকা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
চেয়ারম্যান এ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত খরচের অভিযোগকেও মান্যতা দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য দু’লক্ষ টাকা খরচ ধরা হয়েছে। অন্যদের তুলনায় ওই খরচ অত্যন্ত বেশি।’’ সেই কারণে ওই হাসপাতালকে আরও এক লক্ষ টাকা ছাড় দিতে বলা হয়েছে।
তৃতীয় মামলার ক্ষেত্রে ঢাকুরিয়ার আমরি হাসপাতালে ১০৫ দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন সার্ভে পার্কের বাসিন্দা পাপিয়া বসু (৬৭)। সাড়ে তিন মাসে করোনার চিকিৎসায় বিল হয়েছিল ৩১ লক্ষ টাকা! হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, চার লক্ষ টাকা আগেই ছাড় দেওয়া হয়েছে। আর সম্ভব নয়। চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘৫৮ এবং ৫০ হাজার টাকার দু’টি চেক হাসপাতালের কাছে জমা দিয়েছিলেন রোগীর পরিজনেরা। হাসপাতালকে বলেছি সেগুলি না ভাঙাতে।’’ দু’পক্ষই কমিশনের নির্দেশ মেনেছে বলে জানিয়েছেন চেয়ারম্যান।