মায়ের বাড়িতে মাথা নিচু করে থাকুন, ছেলে-বৌমাকে ভর্ৎসনা কোর্টের

বাড়ি তাঁর, অথচ তাঁকেই উৎখাত করে দিয়েছেন ছেলে-বৌমা! মায়ের এ হেন অভিযোগ শুনে ছেলে-বৌমাকে তীব্র ভর্ৎসনা করে হাইকোর্ট জানিয়ে দিল, মায়ের বাড়িতে থাকতে হলে মাথা নত করে, শিরদাঁড়া ঝুঁকিয়ে থাকতে হবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:৫০
Share:

ছবি এবিপি আনন্দের সৌজন্যে

বাড়ি তাঁর, অথচ তাঁকেই উৎখাত করে দিয়েছেন ছেলে-বৌমা! মায়ের এ হেন অভিযোগ শুনে ছেলে-বৌমাকে তীব্র ভর্ৎসনা করে হাইকোর্ট জানিয়ে দিল, মায়ের বাড়িতে থাকতে হলে মাথা নত করে, শিরদাঁড়া ঝুঁকিয়ে থাকতে হবে।

Advertisement

বাগুইআটি থানার দেশবন্ধুনগর তেঁতুলতলার বাসিন্দা শান্তি মোদকের অভিযোগ, বাড়ি থেকে তাঁকে উৎখাত করে দিয়েছেন ছেলে ও বৌমা। তিনি কখনও মেয়ের বাড়িতে, কখনও অন্যত্র থাকছেন। ছেলে-বৌমার বিরুদ্ধে তিন বার বাগুইআটি থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন। অনুরোধ করেছেন, তিনি যাতে নিজের বাড়িতে ফিরতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করা হোক। পুলিশ নড়ে বসেনি। ফলে নিরুপায় হয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন বৃদ্ধা।

এ দিন শান্তিদেবীর আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় আদালতে জানান, তাঁর মক্কেলের স্বামী ক’বছর আগে মারা গিয়েছেন। তিনি স্ত্রীর নামে তিন কাঠা জমি কিনে সেখানে দোতলা একটি বাড়ি তৈরি করে দিয়ে যান। কিন্তু ছেলে-বৌমা সেই বাড়ি নিজেদের নামে লিখে দেওয়ার জন্য বৃদ্ধাকে চাপ দিতে থাকেন। তখন এক প্রোমোটারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শান্তিদেবী। ২০১৫-র জুলাইয়ে প্রোমোটারের সঙ্গে চুক্তি হয় যে, তাঁকে তিনটি ফ্ল্যাট দেবেন প্রোমোটার। একটিতে থাকবেন শান্তিদেবী, একটিতে ছেলে-বৌমা। তৃতীয়টি বিক্রি করে সেই টাকা ব্যাঙ্কে রেখে নিজের খরচ চালাবেন। কিন্তু ছেলে-বৌমা তাতে রাজি নন। সেই জন্যই বিবাদ এবং যার ফলে শান্তিদেবীর বাড়ি থেকে উৎখাত হওয়া। শান্তিদেবীর ছেলে শান্তনু মোদকের আইনজীবী অবশ্য এ দিন আদালতে দাবি করেন যে, তাঁর মক্কেল তাঁর মাকে যথেষ্ট ভালবাসেন। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ঠিক নয়।

Advertisement

সেই দাবি অবশ্য মানতে চাননি বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী। উল্টে কড়া ভাষায় ছেলে-বৌমাকে তিরস্কার করে তিনি পুলিশকে নির্দেশ দেন, অবিলম্বে বৃদ্ধাকে নিরাপত্তা দিয়ে বাড়ি ফেরাতে হবে। একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, এর পরেও ছেলে-বৌমা গোলমাল করলে প্রবীণ নাগরিকদের নিরাপত্তা ও ভরণপোষণ আইনের সাহায্য নিয়ে আদালতে যেতে পারবেন শান্তিদেবী।

আরও পড়ুন: হিন্দু জনসংখ্যা কমছে ভারতে, টুইট রিজিজুর, তীব্র বিতর্ক দেশ জুড়ে

শান্তনু পরে দাবি করেন, তিনি মাকে বহু বার বাড়িতে থাকতে অনুরোধ করেছেন। মায়ের চিকিৎসাও করিয়েছেন। পৈতৃক বাড়িতে মাকে নিয়ে একসঙ্গেই থাকতে চান তাঁরা।

বৃদ্ধ বাবা-মায়ের উপরে অত্যাচার করা বা তাঁদের বাড়ি থেকে বার করে দেওয়ার এই প্রবণতা কি দিনদিন বাড়ছে? সমাজতত্ত্বের শিক্ষক প্রশান্ত রায়ের মতে, ‘‘এমন ঘটনা আগেও প্রচুর ঘটত। তবে আগে হয়তো সন্তানের বিরুদ্ধে কোর্টে যাওয়ার ক্ষেত্রে সবাই এতটা সাহসী হতেন না। এখন যে হচ্ছেন, সেটা ভাল লক্ষণ। আদালত আজকাল প্রায়ই এই ধরনের নির্দেশ দিচ্ছে ঠিকই, কিন্তু তাতে এই প্রবণতা কমছে বলে তো মনে হয় না।’’

সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বৃদ্ধ বাবা-মায়েদের উপরে অত্যাচারের এই ঘৃণ্য সামাজিক ব্যাধি আগে এতটা প্রকট ছিল না। মানুষের স্বার্থপরতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এই প্রবণতা বাড়ছে। বাবা-মায়েরা এখন আদালতে যাচ্ছেন, এটা আশার কথা।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement