ফুটপাত এখনও প্লাস্টিকমুক্ত নয়, দেখাল আগুন

রবিবার ভোরে গড়িয়াহাটের বাসন্তীদেবী কলেজের কাছে প্রথমে একটি গুমটিতে আগুন লাগে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দমকল এসে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু করার আগেই সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে আরও দু’টি গুমটিতে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:৩১
Share:

অবৈধ: গড়িয়াহাট ফুটপাত এখনও ঢাকা প্লাস্টিকের ছাউনিতে। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

চলতি বছরের জানুয়ারিতেই গড়িয়াহাটের একটি বস্ত্র বিপণিতে আগুন লেগেছিল। সেই আগুন বিপণির বাইরের বিভিন্ন ছোট ছোট দোকানের প্লাস্টিকের ছাউনিতে ছড়িয়ে পড়ে। যা থেকে আগুন ভয়াবহ চেহারা নিয়েছিল। তার পরেই কলকাতা পুরসভা নির্দেশ দেয়, শহরের ফুটপাতে প্লাস্টিকের ছাউনি রাখা যাবে না। বছর শেষ হওয়ার মুখে ফের অগ্নিকাণ্ড গড়িয়াহাট এলাকায়। এ বার আগুন লাগল ফুটপাতের গুমটির প্লাস্টিকের ছাউনিতে।

Advertisement

রবিবার ভোরে গড়িয়াহাটের বাসন্তীদেবী কলেজের কাছে প্রথমে একটি গুমটিতে আগুন লাগে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দমকল এসে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু করার আগেই সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে আরও দু’টি গুমটিতে। তবে দমকলের দু’টি ইঞ্জিন আধ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণ করে ফেলে। প্রাথমিক ভাবে দমকলের ধারণা, জ্বলন্ত বিড়ি কিংবা সিগারেটের টুকরো থেকে আগুন লেগেছিল।

যদিও এ দিনের ওই ঘটনার পরে জানুয়ারি মাসের সেই পুরনো অগ্নিকাণ্ডের আতঙ্ক ফিরে এসেছে গড়িয়াহাট চত্বরে। সে বার ৪৫টি ফুটপাতের দোকান পুড়ে গিয়েছিল। যেগুলির প্রত্যেকটিতে প্লাস্টিকের ছাউনি ছিল। আগুন ছড়ানোর প্রধান কারণই ছিল প্লাস্টিক। ওই ঘটনার পরেই কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম নির্দেশ দিয়েছিলেন ফুটপাতে কোথাও প্লাস্টিকের ছাউনি রাখা যাবে না। গড়িয়াহাট চত্বরের হকারদের জন্য বিশেষ লোহার গাড়ির ব্যবস্থা করা হবে।

Advertisement

কিন্তু এ দিনের ঘটনার পরে দেখা গেল মেয়রের নির্দেশই সার হয়েছে। সিংহভাগ ফুটপাতের দোকানেই রয়েছে প্লাস্টিকের ছাউনি। শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণ সর্বত্রই ছবিটা একই রকম। জানা গেল মেয়রের ওই নির্দেশের কিছু দিন পরেই ফুটপাতে প্লাস্টিকের ছাউনি ফিরে এসেছে। গড়িয়াহাটে দেখা গেল ফুটপাতে থরে থরে জিনিস সাজিয়ে লাল, নীল, হলুদ রঙের প্লাস্টিকের ছাউনির নীচে বসে ব্যবসা করছেন ব্যবসায়ীরা।

প্লাস্টিক ব্যবহার নিষিদ্ধ সত্ত্বেও কেন ব্যবহার করছেন? এক বিক্রেতার জবাব, ‘‘রোদ, ধুলো এড়াতে ব্যবহার করছি। ফাঁকা মাথায় কী ভাবে থাকব?’’ আর এক ব্যবসায়ীর জবাব, ‘‘বৃষ্টির জন্য প্লাস্টিক টাঙিয়েছিলাম। কিন্তু পরে আর প্লাস্টিক খোলা হয়নি।’’

এ দিন ঘটনাস্থলে দাঁড়ানো পুলিশ আধিকারিকদের কথায়, ‘‘শুরুতেই খবর পাওয়ায় আগুন তাড়াতাড়ি নিয়ন্ত্রণ করা গেছে। না হলে আগুন ছড়িয়ে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারত।’’

পুরসভার দাবি, ফুটপাতে প্লাস্টিক সরাতে গড়িয়াহাট থানাকে নির্দেশ দেওয়া হলেও পুলিশ কার্যত নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। এ প্রসঙ্গে ডিসি (দক্ষিণ-পূর্ব) অজয় প্রসাদকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি। এ প্রসঙ্গে কথা বলতে মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। জবাব দেননি এসএমএসেরও। মেয়র পারিষদ (আইন ও আবাসন) বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা বারবার বলেছি। হকারেরা সচেতন না হলে মুশকিল। পুলিশকেও সক্রিয় হতে হবে।’’

হাতিবাগান বাজার মার্চেন্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রঞ্জন রায়ের অভিযোগ, ‘‘বিধান সরণির দু’পাশে হাতিবাগান বাজারের আশপাশ বিপজ্জনক ভাবে প্লাস্টিকের ছাউনিতে মোড়া। ওই প্লাস্টিক দৃশ্যদূষণের কারণও বটে। পুরসভাকে এই এলাকা ‘বিজ্ঞাপন জোন’ হিসেবে ব্যবহারের আর্জি জানানো হয়েছিল। কিন্তু কিছুই হয়নি।’’

জানুয়ারিতে গড়িয়াহাটের ওই অগ্নিকাণ্ডের পরে ঘোষণা করা হয়েছিল ওই তল্লাটের হকারদের জিনিসপত্র রাখার জন্য লোহার গাড়ি দেওয়া হবে। গড়িয়াহাটে তৃণমূল সমথিত ইন্দিরা হকার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক দেবরাজ ঘোষ জানান, ২৮টি গাড়ি এসেছে। আরও গাড়ির প্রয়োজন। তিনি বলেন, ‘‘বর্ষার জন্য প্লাস্টিক ব্যবহার করা হলেও তা সরাতে দেরি হয়েছে। গড়িয়াহাটের ফুটপাত থেকে দ্রুত প্লাস্টিক সরানো হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement