রচনা সাইকা ও তাঁর ছেলে। নিজস্ব চিত্র।
অন্য দিনের তুলনায় শনিবার ভিড়টা একটু বেশিই ছিল মেট্রোতে। সামনেই পুজো, ফলে নিত্যযাত্রীদের পাশাপাশি সাধারণ যাত্রীর সংখ্যাও ছিল প্রচুর। চাঁদনি চক স্টেশন থেকে ট্রেন যত এগিয়েছে ভিড়টাও ক্রমশ বাড়তে শুরু করেছিল। সন্ধ্যে তখন সাড়ে ছ’টা। মেট্রোটি তখন মহানায়ক উত্তমকুমার স্টেশনে ঢুকেছে। যাত্রীরা ট্রেন থেকে নামতে গিয়ে সমস্যায় পড়লেন। ট্রেনের মাঝামাঝি কামরার বেশ কয়েকটি গেট একেবারেই খুলল না। যেগুলো খুলল সেখান দিয়ে হুড়মুড়িয়ে নামার চেষ্টা করলেন তাঁরা। কিন্তু যাত্রী নামা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল মেট্রোর স্লাইডিং গেট।
ট্রেনের ওই কামরাতেই ছিলেন বেহালা চৌরাস্তার বাসিন্দা রচনা সাইকা। সঙ্গে ছিল তাঁর ছেলে। অন্য যাত্রীদের মতো তাঁরা দু’জনেই সেই ভিড় ঠেলে ট্রেন থেকে নামার চেষ্টা করলেন। ছেলে ভিড়ের ঠেলায় স্টেশনে পা রাখতে পারলেও রচনা দেবী কিন্তু নামতে পারেননি। নামার চেষ্টা করতেই মেট্রোর গেট বন্ধ হয়ে যায়। রচনাদেবীর ব্যাগ ও কাপড় আটকে যায় গেটে। কামরার ভিতরে থাকা কয়েক জন তাঁকে কোনও মতে সরিয়ে আনেন গেটের কাছ থেকে। তত ক্ষণে চিত্কার জুড়ে দিয়েছিলেন রচনা দেবী। তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘আমার ছেলে বাইরে রয়ে গিয়েছে!’ মেট্রো তত ক্ষণে মহানায়ক ছেড়ে নেতাজি স্টেশনের উদ্দেশে ছুটতে শুরু করে দিয়েছিল।
একেই মেট্রোর দরজা না খোলার কারণে অসন্তোষ তৈরি হয়েছিল যাত্রীদের মধ্যে। তার মধ্যে এই ঘটনা যেন স্ফূলিঙ্গের মতো কাজ করল। ট্রেনেরই কয়েক জন যাত্রী বিষয়টি মোটরম্যানকে জানানো চেষ্টা করেন। কিন্তু ব্যর্থ হন। ওই মেট্রোতে সফরকারী নাকতলার বাসিন্দা সূর্য সরকারের অভিযোগ, “মহিলার চিৎকার শুনে আমরা ট্রেনের একাধিক অ্যালার্ম বাটন টিপি। কিন্তু সেগুলোর কোনওটাই কাজ করেনি।” কামরার ভিতরে বিষয়টি কোলাহল চলাকালীনই মেট্রো নেতাজি স্টেশনে পৌঁছয়। রচনাদেবী নেতাজি স্টেশনে নামেন। কয়েক জন সহযাত্রীকে নিয়ে স্টেশন মাস্টারের কাছে বিষয়টি জানাতে যান।
আরও পড়ুন: দশ কোটি টাকা রাজ্যকে জরিমানা কোর্টের
স্টেশন মাস্টার সব শুনে মহানায়ক উত্তমকুমার স্টেশনে যোগাযোগ করেন। সময় যত গড়াচ্ছিল উত্কণ্ঠা আর উদ্বেগের চিহ্ন স্পষ্ট হয়ে উঠছিল রচনাদেবীর মুখে। ছেলেকে ফিরে পাওয়ার জন্য ছটফট করছিলেন। খানিক পরেই তাঁর কাছে একটি ফোন আসে। ফোনের ওপারে ছেলের গলার আওয়াজ পেয়ে যেন একটু বুকে বল ফিরে পান রচনাদেবী। জানা যায়, রবীন্দ্র সরোবর স্টেশনে এক পুলিশকর্মীর ফোন থেকে তাঁকে ফোন করেছে ছেলে। নেতাজি স্টেশনে তিনি অপেক্ষা করছেন, ছেলেকে এ কথা জানান রচনাদেবী। মহানায়ক স্টেশনে চলে আসতে বলেন ছেলেকে। তিনিও মহানায়কে ফিরে যান। পুলিশের সহায়তায় ছেলেটি মহানায়কে পৌঁছয়। ছেলেকে ফিরে পেয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে ওঠেন রচনাদেবী।
আরও পড়ুন: মারছে দেখেও পুলিশের কেউ বাঁচাতে এলেন না
আনন্দবাজার ডিজিটালকে তিনি বলেন, “আমি নামতে যাওয়ার সময়ই বন্ধ হয়ে যায় মেট্রোর গেট। আমার ব্যাগ ও কাপড় আটকে যায় গেটে। তবুও গেট খোলেনি। পাশে উপস্থিত যাত্রীরা আমাকে পিছনে টেনে নিলেও গেটে আটকে ছিল আমার কাপড়ের নীচের দিকে অংশ। ওই অবস্থাতেই ছুটে চলে মেট্রো।” অন্য দিনের তুলনায় এ দিন সন্ধ্যায় মহানায়ক স্টেশনে মেট্রোর গেট নির্দিষ্ট সময়ের একটু আগেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বলে অভিযোগ রচনা দেবীর।
আরও পড়ুন: পরিবেশ রক্ষায় পথে পড়ুয়ারা
এর পর মহানায়ক উত্তমকুমার স্টেশনের মাস্টারের কাছে গোটা ঘটনা মৌখিকভাবে জানান রচনা দেবী। বিষয়টি নিয়ে মেট্রো রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। ওই সময় দরজার কোনও সমস্যা হয়েছিল কি না তাও খতিয়ে দেখা হবে।” পাশাপাশি নিরাপত্তার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে ওঠা নামার সময় যাত্রীদের আরও সাবধান থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।