নির্মল কুন্ডু
প্রথমে কংগ্রেস, পরে তৃণমূলের একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন তিনি। গত লোকসভা ভোটে নিজের ওয়ার্ডে বিজেপির থেকে পিছিয়ে পড়েছিল তৃণমূল। সেই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবার তাঁর স্ত্রী। পরিজনেদের দাবি, ভোটের পর থেকে তাই হতাশায় ভুগছিলেন দমদমের কমলাপুরের বাসিন্দা নির্মল কুন্ডু (৬৬)। সোমবার সকালে নিজের ফ্ল্যাটের নীচের দোকান থেকে উদ্ধার হল নির্মলবাবুর ঝুলন্ত দেহ।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, আত্মঘাতী হয়েছেন নির্মলবাবু। পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, যকৃতের অসুখেও ভুগছিলেন তিনি। তবে তাঁর পরিচিতেরা জানিয়েছেন, গত এক মাস ধরে সর্ব ক্ষণই তিনি ভোটে হারার কথা বলতেন। তাঁদের অনুমান, সেই হতাশা থেকেই আত্মঘাতী হয়েছেন নির্মলবাবু।
নির্মলবাবুর স্ত্রী সুপ্রিয়া কুন্ডু দমদম পুরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। তাঁর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকালে প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়েছিলেন নির্মলবাবু। যদিও সকালে হাঁটতে বেরোনোর অভ্যাস ছিল না তাঁরা। পরে তিনি একটি দোকানে বসে চা খান। সেখান থেকে ফিরে তিনি দোকান খুলে ভিতরে ঢুকে বসেছিলেন বলে এলাকার কয়েক জন পুলিশকে জানিয়েছেন। বেলার দিকে এক জন সুপ্রিয়াদেবীকে খবর দেন, তাঁদের দোকানের দরজাটি আধখোলা অবস্থায় রয়েছে। বাড়ির লোকজন গিয়ে নির্মলবাবুকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখেন। সঙ্গে সঙ্গে দমদম থানায় খবর দেওয়া হয়। পুলিশ এসে সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা নির্মলবাবুকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
সুপ্রিয়াদেবী জানান, তাঁর স্বামী দীর্ঘদিন ধরেই যকৃতের সমস্যায় ভুগছিলেন। তা ছাড়া, ভোটের ফলে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। তবে তিনি যে এমন কাজ করতে পারেন, তা কখনও মনে হয়নি বলে জানিয়েছেন সুপ্রিয়াদেবী।
নির্মলবাবুর বাবা এক সময়ে দমদমের উপ-পুরপ্রধান ছিলেন। তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে নির্মলবাবু ওই দলের সঙ্গে যুক্ত। বাম আমলে দমদমের পুরভোটে দু’বার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, তবে জিততে পারেননি। ২০১৫ সালের পুরভোটে জয়ী হন তাঁর স্ত্রী। কমলাপুরে যে বহুতলে নির্মলবাবু থাকতেন, তারই নীচে একটি মনোহারি দোকান রয়েছে নির্মলবাবুর। তাঁর পরিচিত এবং আত্মীয়েরা জানান, গত পুরসভা ভোটে ওই ওয়ার্ড থেকে সুপ্রিয়াদেবী ৭৬০ ভোটে জিতেছিলেন। গত লোকসভা ভোটে সেই ওয়ার্ডেই বিজেপির কাছে ১১০ ভোটে পিছিয়ে পড়ে তৃণমূল।
এলাকার এক চা-দোকানি বলেন, ‘‘গত এক মাস ধরে নির্মলদা সব সময়ে বলতেন, পাড়ার ছেলেরা সব বিজেপিতে ভিড়ছে। দলকে কী জবাব দেব?’’ রবিবার রাতেও নির্মলবাবু বিষয়টি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছিলেন বলে দাবি ওই দোকানির।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।