Coronavirus

অচেনা রমজানে চাহিদা সত্ত্বেও দুর্লভ হালিম

আলাউদ্দিনে স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য সীমিত পরিমাণ হালুয়া-চিকেন সামোসার মতো নোনতা-মিষ্টি খাবার তা-ও হচ্ছে।

Advertisement

ঋজু বসু

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০২০ ০২:২৬
Share:

স্বাদু: লকডাউনে প্রধানত অনলাইনেই মিলছে হালিম। ছবি: রণজিৎ নন্দী

বড়দিনের সুনসান পার্ক স্ট্রিট বা পুজোর জনশূন্য বাগবাজার-ম্যাডক্স স্কোয়ারের মতোই অলীক মনে হতে পারে সেই দৃশ্য!

Advertisement

রমজানি বিকেলে ইফতারের সময়ে খাঁ-খাঁ করছে নাখোদা মসজিদ চত্বর। বাইরে খাজলা-বাখরখানির বিকিকিনি কার্যত স্তব্ধ। কলুটোলায় ফিয়ার্স লেনের মুখেও মস্ত ব্যারিকেড। ওই লক্ষ্মণরেখার ও-পারে হাজি আলাউদ্দিনের অমৃতি-সামোসার টানে ইফতারি সন্ধ্যায় নাকি জিনপরিরা নেমে আসে এ কলকাতায়! এই রমজানে ওই তল্লাটে চলাফেরায় পদে পদে বিধিনিষেধ।

আলাউদ্দিনে স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য সীমিত পরিমাণ হালুয়া-চিকেন সামোসার মতো নোনতা-মিষ্টি খাবার তা-ও হচ্ছে। একসঙ্গে দু’জনের বেশি ক্রেতার দোকানে ঢোকা নিষেধ। সরু গলিতেই দূরত্ব রেখে মানুষের লাইন। কিন্তু রমজানের ধ্রুপদী স্মারক হালিমের ঢাউস হাঁড়ি কদাচ চোখে পড়বে। সাধারণ কলকাতাবাসীর কাছে রমজান মানে হালিমেরও ঋতু। হাঁড়ি-বন্দি থকথকে ডাল-মাংসের সুপ যেন স্বাদ-সরণি ছুঁয়ে থাকা এক ধরনের সংস্কৃতি-সেতু, যা মিলিয়ে দেয় নানা গোত্রের মানুষকে। লকডাউনের রমজানে তা হয়ে উঠেছে নিতান্তই অনলাইন ডেলিভারির উপকরণ।

Advertisement

সে হালিম কিন্তু সহজে মিলবে না কলকাতার যে কোনও প্রান্তে। আরসালান বা সিরাজের মতো নামী মোগলাই খানার চেন প্রধানত পার্ক সার্কাস বা মল্লিকবাজারের হেঁশেল থেকেই অনলাইনে বিক্রি করছে। লকডাউনে বিহার, উত্তরপ্রদেশ থেকে ছাগমাংসের আমদানি বন্ধ। ফলে, বিভিন্ন মাংসের জোগান প্রায় দশ গুণ কমে গিয়েছে। আগে ফি-সন্ধ্যায় ১০-১৫ ডেক হালিম হলে এখন তা কমে মেরেকেটে দু’-চার ডেকে (বড় হাঁড়ি) এসে দাঁড়িয়েছে। মাটনের মান বজায় রাখতে অনেকেই হিমশিম খাচ্ছেন। খাবার সরবরাহের একটি সর্বভারতীয় অ্যাপের মুখপাত্র কিন্তু জানাচ্ছেন, লকডাউনে ঘরবন্দি দেশেও মুম্বই-দিল্লি-হায়দরাবাদের মতো হালিম-রসিক শহরের তুলনায় হালিম-প্রেমে এগিয়ে কলকাতাই। আর সব কিছুর মতো রমজানের খাদ্যসম্ভারের অনলাইন বিক্রিতে বিরাট ধস নামলেও চাহিদার শতকরা ৭০ ভাগ কলকাতাতেই। চিৎপুর-বেকবাগানে রয়্যাল, মেজ়বান, জমজম থেকে সানঝা চুলহাতেও ছড়িয়ে হালিমের মানচিত্র। তবে এ বছর এখনও ততটা দেখা নেই নাম বা ব্র্যান্ডহীন হালিম-শিল্পীদের।

ওয়াজ়িদ আলি শাহের পরিবারের মেয়ে মনজ়িলাত বেগমের রমজানি হালিমও শহরের রসিকজনের মহলে প্রিয় হয়ে উঠেছে গত কয়েক বছরে। কিন্তু তিনিও এ বার এই দুর্যোগে এত আয়োজন থেকে বিরত। কলুটোলার ইসলামিয়ার কর্তা মহম্মদ জুবেরও অনলাইনে হালিম সরবরাহ করতে রাজি নন। স্পষ্ট বলছেন, “যথেষ্ট সাবধানতা সত্ত্বেও অনলাইন কারবারে পুরোটা আমাদের হাতে থাকবে না। তাই এখন ওই পথে যাচ্ছি না।

হঠাৎ কারও মধ্যে একটু ধন্দ তৈরি হলেও আমাদেরই ভাবমূর্তি খারাপ হবে। সেটা চাইছি না।” রমজানের সময়ে হালিমকে ঘিরে শহরের মুসলিম অধ্যুষিত মহল্লায় অনেকের কিছু মরসুমি রোজগারের রাস্তাও খুলে যায়। তবে এ বার তা অনেকেই এড়িয়ে চলছেন।

এমনিতে লকডাউনে অনেক বাড়ির এক পদের মেনুর সঙ্গে বেশ মানানসই হালিম। মুগ, মুসুর, বিউলি, ছোলার ডালটুকুর জোগানেই অল্প মাংস আর মশলা মিশিয়ে গরিবের প্রোটিনও জুটে যায় হালিমে। কোনও বাঙালি বাড়িতে তা নিরাভরণ ডালগোস্তের চেহারা নেয়। ইদের আগে তা কত জনের ঘরে আসবে, তা নিয়ে সন্দেহ থাকছেই ভাইরাসে জবুথবু শহরে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement