কলকাতা পুরসভা। —ফাইল চিত্র।
কলকাতা পুরসভা পরিচালিত ১৭৪টি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ৫৩৩ জন চিকিৎসকের দরকার। আছেন ২৫১ জন। অর্থাৎ, চিকিৎসা কেন্দ্র থাকলেও পর্যাপ্ত চিকিৎসক নেই। পুর স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিতে চিকিৎসকের ঘাটতির বিষয়টি সম্প্রতি বাজেট অধিবেশনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে স্বীকারও করেছেন মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) তথা ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ।
পুরসভা সূত্রের খবর, পুর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসক পদে নিয়োগের জন্য আগ্রহ দেখিয়ে অনেকে কাজে যোগ দিলেও কয়েক মাস পরেই তাঁরা চাকরি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। এ দিকে নিয়মানুযায়ী, স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলির প্রতিটিতে দু’জন করে চিকিৎসক থাকা দরকার। পুর স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, অর্ধেক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আছেন এক জন করে চিকিৎসক। ফলে ব্যাহত হচ্ছে পরিষেবা। অভিযোগ, খিদিরপুর, গার্ডেনরিচ এলাকায় চিকিৎসকের অভাবে সমস্যা হচ্ছে স্বাস্থ্য কেন্দ্র পরিচালনায়।
বাজেট অধিবেশনে অতীন বলেন, ‘‘পুর স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিতে ৫৩৩টি শূন্য পদের মধ্যে ২৭০ জন ইন্টারভিউ দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁদের মধ্যে কাজে যোগ দিয়েছেন মাত্র ১৫ জন! পুরসভার স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিতে চিকিৎসকেরা যোগ দিতে চাইছেন না।’’
পুর স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘চিকিৎসকের অভাব এতটাই দেখা দিয়েছে যে, স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলি পরিচালনা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছে।’’ পঞ্চাশ শতাংশ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এক জন করে চিকিৎসক থাকায় সমস্যা ক্রমে বেড়ে চলছে। এক পুর আধিকারিকের কথায়, ‘‘যেখানে এক জন চিকিৎসক আছেন, তিনি জরুরি কোনও কারণে ছুটি নিলে অবস্থা আরও কঠিন হয়।’’ শহরের বিভিন্ন প্রান্তে বক্ষরোগের চিকিৎসার জন্য একাধিক চেস্ট ক্লিনিক রয়েছে। সেই সব ক্লিনিকে বক্ষরোগের চিকিৎসক থাকা জরুরি। অভিযোগ, এমবিবিএস উত্তীর্ণ চিকিৎসকের দ্বারাই ওই সব কেন্দ্রে স্বাস্থ্য পরিষেবা দিতে হচ্ছে।
কিন্তু পুর স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিতে চিকিৎসকের এত ঘাটতি কেন?
পুরসভার চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, রাজ্য সরকার পরিচালিত স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কাজ করলে যে সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়, তা পুর স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিতে মেলে না। ফলে, কাজে যোগ দিয়েও কয়েক মাস পরেই চলে যান চিকিৎসকেরা। সদ্য এমবিবিএস উত্তীর্ণেরা রাজ্য সরকার পরিচালিত স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কয়েক বছর চাকরি করে স্নাতকোত্তর পড়তে গেলে তাঁদের ছাড় দেওয়া হয়। পাশ করে ফের ওই হাসপাতালে কাজে যোগও দিতে পারেন তাঁরা। কিন্তু পুরসভা পরিচালিত স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিতে সেই সুযোগ নেই। পাশাপাশি রাজ্য সরকার পরিচালিত স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিতে কর্মরত চিকিৎসকেরা ‘নন প্র্যাকটিসিং অ্যালাওয়েন্স’ পান। কিন্তু যে সব পুর চিকিৎসকেরা বেসরকারি প্র্যাক্টিস করেন না, তাঁরা ওই ভাতা থেকে বঞ্চিত।
পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তার দাবি, ‘‘স্থায়ী পদে চিকিৎসক নিয়োগে সমস্যা নেই। কিন্তু অস্থায়ী পদে চিকিৎসক নিয়োগের ক্ষেত্রে এই সব সমস্যা হচ্ছে।’’