বৃষ্টির শহরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে পর পর। তার পরেও খোলা অবস্থায় রয়ে গিয়েছে আলোর জয়েন্ট বক্স। শুক্রবার, পার্ক স্ট্রিট উড়ালপুলে। ছবি: রণজিৎ নন্দী
বিদ্যুৎ সরবরাহে সিইএসসি-র অধীন কলকাতা পুর এলাকা-সহ যে সব জায়গা, সেখানে জল জমলে পরিষেবা অস্থায়ী ভাবে বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রী তথা কলকাতা পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারপার্সন ফিরহাদ হাকিম। শুক্রবার কলকাতা পুরসভার কমিশনার এবং সিইএসসি কর্তৃপক্ষকে তিনি এই নির্দেশ দেন।
শহরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একের পর এক মৃত্যুর ঘটনার প্রেক্ষিতে যে এমন নির্দেশ, তা স্পষ্ট। অনেকেরই প্রশ্ন, বেশির ভাগ সময়ে সতর্কতা কেন দুর্ঘটনা ঘটার পরে নেওয়া হয়? কেন আগে নেওয়া হয় না? যেমন, বুধবার বান্ধবনগরে বাতিস্তম্ভে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দুই বালিকার মৃত্যুর পরে টনক নড়ল পুর প্রশাসনের। দক্ষিণ দমদম পুর কর্তৃপক্ষের দাবি, তাঁরা ওই এলাকার সব ঢাকনা খোলা বাতিস্তম্ভ সেলোটেপ দিয়ে মুড়ে দিয়েছেন। বৃষ্টিতে জল জমলে কী কী সতর্কতা নিতে হবে, এ দিন বান্ধবনগরে পুরসভার তরফে তা মাইকে প্রচার করা হয়। পুরসভা সূত্রের খবর, ওই দুর্ঘটনার তদন্তে কমিটি তৈরি হয়েছে। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট জমা দেবে সেই কমিটি। তার পরে পদক্ষেপ করা হবে।
এ দিনও দু’টি মৃত্যু ঘিরে রাজনৈতিক তরজা অব্যাহত। বিজেপির প্রতিনিধিরা দুই বালিকার পরিবারের সঙ্গে দুপুরে দেখা করেন। দুপুরেই বামফ্রন্টের তরফে দক্ষিণ দমদম পুরসভার অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখানো হয়। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, সাংসদ অর্জুন সিংহ দুই পড়ুয়ার পরিবারের সঙ্গে দেখা করে কথা বলেন। বিজেপির রাজ্য সভাপতির অভিযোগ, ‘‘কিছু লোকের অপদার্থতা এবং অকর্মণ্যতার জন্য অকালে দু’টি প্রাণ চলে গেল। অনুষ্কার পরিবার আইনি লড়াই করতে চায়।’’ বিজেপির সর্বভারতীয় মুখপাত্র সম্বিৎ পাত্রের বক্তব্য, ‘‘শহরে পুরসভা নৌকা নামিয়েছে। আর ত্রিফলার তার থেকে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হচ্ছে। প্রশাসনের এই অবহেলা অপরাধ।’’ অনুষ্কার মা প্রিয়াঙ্কা নন্দী এ দিনও ঘটনার নেপথ্যে স্থানীয় ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটরের অপদার্থতাকে দায়ী করে তাঁর শাস্তি দাবি করেছেন।
পুরসভার সামনে বিক্ষোভ দেখানোর পরে বামকর্মীরা বিভিন্ন দাবিদাওয়া সম্বলিত স্মারকলিপি পুরসভায় জমা দেন। বাম নেতা পলাশ দাশের অভিযোগ, দমদম কার্যত বিপর্যস্ত। কয়েক মাস ধরে অসহায় অবস্থার মধ্যে রয়েছেন সকলে। পুরসভার বাতিস্তম্ভে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দুই বালিকার মৃত্যুর জন্য দায়ী পুরসভার উদাসীনতা ও ব্যর্থতা।
যাবতীয় অভিযোগ প্রসঙ্গে দক্ষিণ দমদম পুরসভার মুখ্য প্রশাসক বলছেন, ‘‘মিথ্যা এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগ করা হচ্ছে। মর্মান্তিক ঘটনা নিয়ে রাজনীতি না করাই শ্রেয়। আর বামেদের থেকে দায়িত্বজ্ঞানহীন অভিযোগ আশা করা যায় না।’’
এ দিকে, ফিরহাদ হাকিমের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে সিইএসসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, কলকাতা পুরসভা কিংবা অন্য পুর এলাকার কোথায় জল জমেছে, তার লিখিত নির্দেশ এলে পালন করা হবে। তবে কর্তৃপক্ষ আগেই জানিয়েছিলেন যে, বাতিস্তম্ভ স্থাপন এবং রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব স্থানীয় পুর প্রশাসনের। সার্বিক ভাবে এলাকার বাতিস্তম্ভে শুধু বিদ্যুৎ সংযোগ দেন তাঁরা। সংযোগ কখন দেওয়া হবে বা বন্ধ করা হবে, তা সংশ্লিষ্ট এলাকার পুর কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত।