Forest Department

সহজে আয়ের লোভেই বাড়ছে প্যাঙ্গোলিন পাচার

মঙ্গলবার ফের ধরা পড়ল আরও একটি প্যাঙ্গোলিন।

Advertisement

কৌশিক ঘোষ ও কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২০ ০৩:০৫
Share:

ফাইল চিত্র।

কচ্ছপ কিংবা নানা প্রজাতির দেশি পাখি তো ছিলই। কিন্তু বন দফতরের হিসেব বলছে, সম্প্রতি কলকাতা দিয়ে পাচার হওয়া বন্যপ্রাণীর তালিকায় উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়ে গিয়েছে প্যাঙ্গোলিন। বছর খানেকের মধ্যে শহর ও সংলগ্ন এলাকায় পাচারকারীদের হাত থেকে দশটির মতো প্যাঙ্গোলিন উদ্ধার করেছেন বন দফতরের কর্মীরা। পাশাপাশি ওই সময়ের মধ্যে কয়েকশো টিয়াপাখি এবং বিভিন্ন প্রজাতির কচ্ছপ উদ্ধার করা হয়েছে। শহর থেকে পাচারের পথে একটি সিংহশাবক ও তিনটি লেঙুরও উদ্ধার করেছিলেন বনকর্মীরা।

Advertisement

মঙ্গলবার ফের ধরা পড়ল আরও একটি প্যাঙ্গোলিন। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে শাসন থানা এলাকার তেঁতুলতলা মোড়ে ফাঁদ পেতে বসেছিলেন বন দফতর এবং ওয়াইল্ড লাইফ ক্রাইম কন্ট্রোল ব্যুরোর আধিকারিকেরা। নাইলনের ব্যাগে করে একটি প্যাঙ্গোলিনকে পাচারের জন্য নিয়ে এসেছিল এক ব্যক্তি। বন দফতরের বারাসতের রেঞ্জ অফিসার সুকুমার দাস বলেন, ‘‘ওই ব্যক্তিকে ধরে হাতেনাতে প্যাঙ্গোলিন উদ্ধার হয়। বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ আইনে গ্রেফতার করা হয়েছে তাকে।’’

বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, বিশ্ব জুড়েই প্যাঙ্গোলিন পাচারের ঘটনা বাড়ছে। প্যাঙ্গোলিনের আঁশ মূলত চিন ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে পাচার করা হয়। বিভিন্ন ধরনের টোটকা এবং হাতুড়ে ডাক্তারদের ওষুধ তৈরিতে সে সব কাজে লাগানো হয়। অসমেও প্যাঙ্গোলিন পাচারের ঘটনা সামনে এসেছে। বেশ কিছু দেশে প্যাঙ্গোলিনের মাংস খাওয়ারও চল রয়েছে। জীবন্ত প্যাঙ্গোলিনের পাশাপাশি রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় প্যাঙ্গোলিনের আঁশও উদ্ধার করা হয়েছে। গত এপ্রিল মাসে সিঙ্গাপুরে একলপ্তে ১৪ টন প্যাঙ্গোলিনের আঁশ বাজেয়াপ্ত করেছিলেন গোয়েন্দারা।

Advertisement

বন দফতর সূত্রের খবর, প্যাঙ্গোলিন শুষ্ক এলাকায় দেখা যায়। এই রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলে, মূলত পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুরে এদের দেখা মেলে। প্যাঙ্গোলিনের প্রধান খাদ্য পিঁপড়ে এবং উই পোকা।

রাজ্য বন দফতরের নিয়ম অনুযায়ী, উদ্ধার হওয়া কোনও বন্যপ্রাণীকে উদ্ধার কেন্দ্রের চৌহদ্দিতে বেশি দিন রাখা যাবে না। দফতরের আধিকারিকেরা জানান, কোনও প্রাণীকে উদ্ধার করার কয়েক দিনের মধ্যেই পশু চিকিৎসককে দেখিয়ে ‘ফিট সার্টিফিকেট’ নিয়ে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে ছেড়ে দেওয়াটাই নিয়ম। তাঁরা জানান, মাস ছয়েক আগে উদ্ধার হওয়া পাঁচটি প্যাঙ্গোলিনের মধ্যে দু’টিকে আলিপুর চিড়িয়াখানায় রাখা হয়েছে। একটি উদ্ধারের সময়েই অসুস্থ ছিল। পরে মারা যায়। বাকি দু’টি প্যাঙ্গোলিনকে পানাগড়ের জঙ্গলে ছাড়া হয়েছে। বছর খানেকের মধ্যে উদ্ধার হওয়া বিভিন্ন প্রজাতির পাখি এবং সরীসৃপের বেশির ভাগকেই প্রকৃতিতে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

বন দফতর সূত্রের খবর, বহু ক্ষেত্রেই সহজে আয়ের উপায় হিসেবে প্যাঙ্গোলিন পাচার করা হচ্ছে। সমাজের সর্বস্তরে সচেতনতার অভাবও তার একটা বড় কারণ। তাই পুজো এবং বিভিন্ন উৎসবকে কাজে লাগিয়ে এই ধরনের প্রচার বাড়াতে চাইছে বন দফতর। পাচার রুখতে রেল পুলিশ, সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও শুল্ক দফতরকেও সচেতন করা হচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement