রেড রোডে রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রী। ভিডিয়ো থেকে নেওয়া।
স্থান: রেড রোড। কাল: প্রজাতন্ত্র দিবস। পাত্র: রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান, রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। পাত্রী: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মিনিটখানেকের নির্বাক নাটক অভিনীত হল। নির্বাক, কারণ, রাজ্যের দুই প্রধানের মধ্যে বাক্যালাপই হল না! ক্যামেরায় ধরা পড়ল, রাজ্যপাল ধনখড় মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে গলা বাড়িয়ে কিছু একটা বলছেন। কিন্তু আগাগোড়া মুখ ফিরিয়েই রইলেন মমতা। অতঃপর শুকনো এবং ঔপচারিক নমস্কার বিনিময়।
বুধবার সকালে রেড রোডে প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে প্রোটোকল মেনে হাজির ছিলেন রাজ্যপাল এবং মুখ্যমন্ত্রী। যাঁদের মধ্যে সম্পর্ক বরাবরই ‘মধুর’। মঙ্গলবার বিধানসভা চত্বরে দাঁড়িয়ে রাজ্যপাল রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সম্পর্কে কিছু চোখা মন্তব্য করায় যা ‘মধুরতর’ হয়েছে। এমতাবস্থায় দেখার ছিল, রেড রোডে দু’জনের মুখোমুখি সাক্ষাতে কী ঘটে।
২০১৯-এ জগদীপ ধনখড় রাজভবনে আসার পর থেকেই নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে তাঁর টানাপড়েন চলেছে। কখনও প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে টিভি ক্যামেরায় তাঁর উপস্থিতি ধরা না পড়ার মতো ‘ব্যক্তিগত’ আক্ষেপ সর্বসমক্ষে প্রকাশ করেছেন রাজ্যপাল, কখনও কখনও বিবিধ প্রশাসনিক প্রসঙ্গে রাজ্য সরকারকে তুলোধনা করেছেন। রাজভবনে ডেকে পাঠিয়েছেন রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ আমলাদের। কারণ-অকারণে শাসকদলকে বিঁধেছেন। কোনও কর্মসূচিতে গিয়ে সরাসরি সেখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত শীর্ষ পুলিশ আধিকারিককে প্রকাশ্যে ধমক দিয়েছেন। এতটাই যে, শাসকদলের বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি প্রকাশ্যেই রাজ্যপালকে ‘বিজেপি-র আজ্ঞাবহ দাস’ ইত্যাদি বলতে শুরু করেছেন। আর বিরোধী বিজেপি তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছে। বস্তুত, শাসক-বিরোধী তরজায় রাজ্যপাল নিজেই একটি চরিত্র হয়ে আবির্ভূত হয়েছেন বাংলার রাজনীতিতে।
সেই আবহেই মঙ্গলবার বিধানসভার চত্বরে দাঁড়িয়ে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতেই তাঁকে কটাক্ষ করেছেন। যার জবাব দিয়েছেন স্পিকারও। অম্বেডকরের মূর্তির পাদদেশে দাঁড়িয়ে নজিরবিহীন ভাবে ধনখড় চাঁচাছোলা ভাষায় আক্রমণ করেন নবান্নকে। সরাসরিই বলেন, ‘‘রাজ্যে কোনও গণতন্ত্র নেই।’’ ঠিক যা বলে থাকেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
তার পরদিন, বুধবার সকালেই রাজ্যপাল হাজির হন রেড রোডে। ২০১১-য় ক্ষমতায় আসার পর থেকে যে অনুষ্ঠান হয়ে আসছে মুখ্যমন্ত্রী মমতার তত্ত্বাবধানেই। স্বভাবতই কী হয়-কী হয় এমন একটা জল্পনা ছিলই।
যা ঘটেছে, তা অপ্রত্যাশিত নয়। মিনিটখানেকের সাক্ষাতে দু’জনের শরীরী ভাষাতেই ধরা পড়েছে মঙ্গলবারের ঘটনার অভিঘাত। আচার মেনে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে দু’জনে ছবি তুলেছেন। কিন্তু সেখানেও ধরা পড়েছে ‘অলঙ্ঘনীয় দূরত্ব’। রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলছেন (আসলে বলতে চাইছেন)— এমন ছবিও সামান্য সময়ের জন্য ধরা রয়েছে ক্যামেরায়।
প্রত্যুত্তর পেয়েছেন কি? উত্তর অজানা। কারণ, করোনাকালে দু’জনের মুখই যে ঢাকা মাস্কে! মেরেকেটে মিনিটখানেকের ‘সাক্ষাৎ’ শেষে রাজ্যপাল নিজের নির্দিষ্ট আসনে ফিরে যান। বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমানের পাশে নিজের আসনে বসে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী।