Rare Diseases

Rare diseases: বিরল রোগের চিকিৎসায় অনীহা সরকারের, জমছে ক্ষোভের পাহাড়

সম্প্রতি এক বিরল রোগে আক্রান্তের মৃত্যু প্রশ্ন তুলে দিয়েছে, টাকার প্রসঙ্গ বাদ দিলেও, বাকি দায়িত্ব পালনে কেন অনীহা সরকারের?

Advertisement

জয়তী রাহা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০২২ ০৬:৪১
Share:

ফাইল ছবি

বিরল রোগের চিকিৎসা নিয়ে বার বার সমালোচিত হয়েছে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের ভূমিকা। কিন্তু চিকিৎসায় বিপুল খরচের যুক্তি দেখিয়েছে তারা। সম্প্রতি এক বিরল রোগে আক্রান্তের মৃত্যু প্রশ্ন তুলে দিয়েছে, টাকার প্রসঙ্গ বাদ দিলেও, বাকি দায়িত্ব পালনে কেন অনীহা সরকারের? অভিযোগ, ওই অনীহারই বলি বিরল রোগ স্পাইনাল মাস্কুলার অ্যাট্রফিতে (এসএমএ) আক্রান্ত বছর চোদ্দোর অভ্রদীপ ঘোষ। পরিবারের আফশোস, সরকারি হাসপাতালের দরজায় একাধিক বার গিয়েও খালি হাতে ফিরতে হয়েছে তাদের।

Advertisement

কী চেয়েছিল অভ্রদীপের পরিবার?

তাদের দাবি, শহরের দু’টি সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বিগত দু’বছরে একাধিক বার গিয়েছিল তারা। বিদেশি একটি ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা বিশ্বের মুষ্টিমেয় এসএমএ আক্রান্তদের সেই সময়ে বিনামূল্যে ওষুধ দেওয়ার প্রকল্প নিয়েছিল (কম্প্যাশনেট ইউজ় প্রোগ্রাম)। তবে সেই ওষুধ সংশ্লিষ্ট রোগীর উপরে ব্যবহারের দায়িত্ব নিতে হয় চিকিৎসককে। এর জন্য সংস্থার ফর্ম পূরণ করতে হয় তাঁকেই। তাতেই রাজি ছিলেন না তাঁরা। অভ্রদীপের মা সুমনা ঘোষের দাবি, পরিবার সেই দায়িত্ব লিখিত ভাবে নিতে চেয়েও লাভ হয়নি। স্বাস্থ্য ভবন পর্যন্ত পৌঁছেও হয়নি সমাধান।। সুমনার আক্ষেপ, ‘‘অনেক কিছুরই তো নিয়ম থাকে না। পরিস্থিতি অনুযায়ী নিয়মের পরিবর্তনও হয়। সেই চেষ্টা করা হয়নি। শুধু ‘হবে না’, ‘সম্ভব নয়’ বলে সবাই দায় সেরেছিলেন। সে দিন সহযোগিতা পেলে আজ ছেলেটা ওষুধ পেত। হয়তো এত তাড়াতাড়ি চলেও যেত না।’’

Advertisement

অসংখ্য বিরল রোগে আক্রান্তদের পরিবারের দাবি, শহরের সরকারি হাসপাতালগুলোয় শুধু ওঁদের জন্য একটি দিন বরাদ্দ থাকলে বাচ্চাগুলো দ্রুত ‘সাপোর্ট ট্রিটমেন্ট’ পেত। ওষুধ শুরু হোক বা না হোক, বিরল রোগের কারণে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অস্ত্রোপচারেরও প্রয়োজন হয়। সরকারি স্তরে এমন অস্ত্রোপচারে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। বিরল রোগীদের ফিজ়িয়োথেরাপি এবং অকুপেশনাল থেরাপি জরুরি। ওদের জন্যই নির্দিষ্ট দিনে এই দুইয়ের বন্দোবস্ত থাকা উচিত।

কেন্দ্র ও রাজ্য, দুই সরকারের বিরুদ্ধেই বিস্তর ক্ষোভ ভুক্তভোগী পরিবারগুলির। কেন্দ্রের রেয়ার ডিজ়িজ় পলিসির অন্তর্গত ক্রাউড ফান্ডিং-এ নাম তোলা যায় দেশের আটটি উৎকর্ষ কেন্দ্র থেকে। তারই একটি এসএসকেএম। সেখানে একটি বিরল রোগের ক্লিনিক চলে, তবে রিপোর্ট এবং রোগীকে পরীক্ষা করে পোর্টালে নাম তোলা হয় শুধু। অভিযোগ, সেই পর্বও চলছে গড়িমসি করে। ওই ফান্ড নিয়ে কোনও প্রচার নেই সরকারের। এক এসএমএ রোগীর মায়ের অভিযোগ, ‘‘ওই ক্লিনিকে বিরল রোগীদের শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করার উপযুক্ত পরিকাঠামো নেই। সেখানে অনেক চিকিৎসকই রোগীর সামনে নেতিবাচক মন্তব্য করেন। ’’

এসএমএ রোগীদের অভিভাবকদের সংগঠন, ‘কিয়োর এসএমএ ফাউন্ডেশন অব ইন্ডিয়া’-র সহ-প্রতিষ্ঠাতা মৌমিতা ঘোষ বলছেন, ‘‘সরকারি হাসপাতালে সব বিভাগের দক্ষ চিকিৎসক এবং চিকিৎসা ব্যবস্থা আছে। মাসে এক দিন সেখানে পরিকাঠামো-সহ যথাযথ রেয়ার ডিজ়িজ়ের ক্লিনিক করা কি অসম্ভব ছিল? ওই পদ্ধতিতে যে ‘সাপোর্ট ট্রিটমেন্ট’ দেওয়া সম্ভব, সেটা তো আমাদের দেশেরই একটি রাজ্য, কেরল করে দেখিয়েছে।’’ মৌমিতার অভিযোগ, ‘‘বাচ্চাদের চিকিৎসার জন্য ডিএমই, মুখ্যসচিব এমনকি মুখ্যমন্ত্রী পর্যন্ত গিয়েছি। কিন্তু মিলেছে শুধুই নিস্তব্ধতা আর নৈরাশ্য।’’

উল্লেখ্য, চলতি বছরের গোড়ায় তিরুঅনন্তপুরমের সরকারি মেডিক্যাল কলেজে কেরল সরকার প্রথম সরকারি এসএমএ ক্লিনিকের উদ্বোধন করেছে। প্রতি মাসের প্রথম মঙ্গলবার সেই ক্লিনিকে থাকেন পেডিয়াট্রিশিয়ান, নিউরোলজিস্ট, জেনেটিসিস্ট, পালমোনোলজিস্ট, ইন্টেনসিভ কেয়ারঅর্থোপেডিস্ট, ফিজ়িয়োথেরাপিস্ট, অকুপেশনাল থেরাপিস্ট। একটি প্যালিয়েটিভ কেয়ার ইউনিটও থাকে সেখানে।

শুধু তা-ই নয়, কেন্দ্রের রেয়ার ডিজ়িজ় পলিসির অন্তর্গত ক্রাউড ফান্ডিং পোর্টাল ছাড়াও কেরল সরকার এসএমএ রোগীদের জন্য নিজস্ব পোর্টাল তৈরি করেছে। সংবাদমাধ্যমে অনুদান চেয়ে তার বিজ্ঞাপন দিয়েছে কেরল সরকার। দিনকয়েক আগে রাজস্থান সরকারও বিরল রোগীদের জন্য একটি ক্রাউড ফান্ডিং পোর্টাল তৈরি করেছে।

কী বলছে এ রাজ্যের স্বাস্থ্য ভবন? রেয়ার ডিজ়িজ় কমিটি নিয়ে কথা বলার মতো তথ্য বা সময় কোনওটাই আপাতত স্বাস্থ্যকর্তাদের হাতে নেই। এই প্রসঙ্গে এক শীর্ষ কর্তার খোলাখুলি মন্তব্য, ‘‘আমরা নির্দেশ মেনে চলি। বিরল রোগ নিয়ে রাজ্য সরকারের ভাবনাচিন্তাই নেই। তাদের পাখির চোখ মেডিক্যাল কলেজের অনুমোদন আদায়।’’

(চলবে)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement