তেলের খরচ তুলতে হিমশিম খাচ্ছে সরকারি পরিবহণ নিগমগুলি। ফাইল চিত্র।
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা। পার্ক স্ট্রিটের বাসস্টপে জনতার উপচে পড়া ভিড়। সরকারি এসি-৬ রুটের ভলভো বাস বাঁক ঘুরে এগিয়ে দাঁড়াল। তিন-চার জন উঠতে না উঠতেই ছুট লাগাল বাসটি। যাত্রীদের সম্মিলিত চিৎকারেও দাঁড়াল না। সরকারি এসি ও নন-এসি বাসের ধরন ছিল এটাই। খালি বাস ছুটে চলাই যেন ছিল আভিজাত্য।
কিন্তু সম্প্রতি অভ্যাস বদলাতে বাধ্য হয়েছেন সরকারি বাসের কর্মীরা। বেশি বদল চোখে পড়ছে বাতানুকুল বাসগুলিতে। গড়িয়া, হাওড়া, নিউ টাউন, বিমানবন্দরের মতো বিভিন্ন প্রান্তিক স্ট্যান্ড থেকে বেরিয়ে বেসরকারি বাসের মতোই যাত্রী তোলার দিকে নজর দিতে দেখা যাচ্ছে চালক এবং কন্ডাক্টরদের। আসন খালি থাকলে গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলিতে অপেক্ষা করা তো বটেই, এমনকি চলার পথে রীতিমতো গন্তব্যের নাম ধরে হাঁকডাক করে যাত্রী তুলতেও দেখা যাচ্ছে তাঁদের। অথচ অভিযোগ, অতীতে বাসটির গন্তব্য কোথায়, যাত্রীদের এই প্রশ্নের কোনও উত্তর না-পাওয়াটাই স্বাভাবিক ঘটনা ছিল।
এই বদলের কারণ কী? পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, বছর দুয়েক আগেও সরকারি এসি বাসের ভাড়া থেকে আয়ের ৬০ শতাংশ উঠে আসত। কিন্তু ডিজ়েলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এবং বাস ভাড়া না বাড়ার কারণে তেলের খরচ তুলতে হিমশিম খাচ্ছে সরকারি পরিবহণ নিগমগুলি। প্রাক্-অতিমারি পরিস্থিতিতে রাজ্য পরিবহণ নিগম প্রায় ৪৫টি রুট এসি বাসের জন্য ধার্য করেছিল। কমবেশি ৪০টি রুটে নিয়মিত বাস চলত। কিন্তু এখন সেই সংখ্যা ৩০-৩১টি। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য টাকা না আসায় সমস্যা আগেই রয়েছে। তার মধ্যে এসি বাসের বিপুল তেল খরচ নিগমকে কার্যত পথে বসাতে চলেছিল। লিটারে গড়ে দুই থেকে আড়াই কিলোমিটার চলা এসি বাস এক বার ছুটলেই তিন-সাড়ে তিন হাজার টাকার তেল পুড়ছিল। ফলে তেলের খরচ তুলতে বাস কন্ডাক্টর ও চালকদের ভাড়া আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছে একাধিক ডিপো। তেলের খরচ নিয়ে শিবির করে চালক এবং কন্ডাক্টরদের বুঝিয়েছেন রাজ্য পরিবহণ নিগমের গুরুত্বপূর্ণ বাস ডিপোগুলির দায়িত্বে থাকা আধিকারিকেরা। দফতর সূত্রের খবর, ফল মিলছে তাতেই।
এ প্রসঙ্গে এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ডিজ়েলের দাম ৪৮ শতাংশ বেড়েছে। বাধ্য হয়েই তাই যাত্রী তোলায় যত্নবান হতে বলা হয়েছে বাসকর্মীদের।’’
নিত্যযাত্রীদের কেউ কেউ নতুন এই প্রবণতায় কিছুটা ক্ষুব্ধ হলেও অনেকেই এতে পেশাদারিত্বের লক্ষণ দেখছেন। একই রুটে বাস চালিয়ে বেসরকারি বাস আয় করতে পারলে সরকারি বাস কেন পিছিয়ে থাকবে, এমনটাই মনে করছেন তাঁরা।
আগে যাত্রী সংখ্যা কম হওয়ায় অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ এসি বাসের রুট বাতিল করতে হয়েছে নিগমকে। এর মধ্যে রয়েছে গড়িয়া, দক্ষিণেশ্বর, বেলুড় মঠ হয়ে চলা এসি-৫০, পাটুলি-সাঁতরাগাছি, খড়দহ-সল্টলেকের মতো একাধিক রুট। বাস কন্ডাক্টরদের চুরি ঠেকাতে অহরহ চেকিংও চলছে। কোথাও গরমিল থাকলে ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। এ হেন তৎপরতার ফলে গুরুত্বপূর্ণ রুটগুলিতে তুলনায় আয় বেড়েছে। একই তৎপরতা দেখানো হচ্ছে বাতানুকূল ইলেক্ট্রিক বাসের ক্ষেত্রেও।