গোরাবাজারে চলছে সাফাইয়ের কাজ। ফাইল চিত্র।
পুড়ে যাওয়ার ৪৮ ঘণ্টা পরে বুধবার, গোরাবাজারে গেল ফরেন্সিক দল।
ঘটনার পরের দিন মঙ্গলবার থেকেই ধ্বংসাবশেষ সরানোর কাজ শুরু হয়েছে। বাজারের মাছ ব্যবসায়ীরা কেনাবেচাও শুরু করে দিয়েছেন। স্থানীয় মানুষই শুধু নন, আশপাশ থেকে বহু মানুষও পোড়া বাজার ঘুরে গিয়েছেন। এই অবস্থায় ফরেন্সিক দলের জন্য কোনও যথাযথ নমুনা পড়ে রয়েছে কি না তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
ফরেন্সিক দল ঘুরে যাওয়ার আগেই কেন ধ্বংসস্তূপ সরানো হল, তা নিয়ে বাজারের ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ প্রশ্নও তুলেছেন। অনেকে আবার এর পিছনে চক্রান্তের গন্ধ পাচ্ছেন। কারও অভিযোগ, এই অগ্নিকাণ্ডের পিছনে অন্তর্ঘাত রয়েছে। তা চাপা দিতেই ধ্বংসস্তূপ সরানোর পরে ফরেন্সিক দল পাঠানো হয়েছে। ব্যবসায়ীদের অনেকেরই সন্দেহ, ২০০৬ সালের অগ্নিকাণ্ডের মতো এ বারের আগুন লাগার কারণও হয়ত শেষ পর্যন্ত জানা যাবে না। দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান হরীন্দ্র সিংহ অবশ্য জানিয়েছেন, ‘‘অন্তর্ঘাতের অভিযোগ ভিত্তিহীন।’’ তাঁর মন্তব্য, বাজারে অগ্নি নির্বাপণের ব্যবস্থা নিয়ে ভাবতে হবে। ব্যবসায়ীদেরও এগিয়ে আসতে হবে।
এ দিন দুপুর বারোটা নাগাদ সিনিয়র ফরেন্সিক অফিসার দেবাশিস রায়ের নেতৃত্বে চার সদস্যের দল গোরাবাজারে যায়। তদন্তকারীরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পরে বাজারের চাল-মুড়ি পট্টিতে যান। সেখান থেকেই আগুন লেগেছে বলে ব্যবসায়ীরা ফরেন্সিক দলের সদস্যদের জানান। দোকান ও বাজারের মধ্যে থেকে ধ্বংসাবশেষের কিছু জিনিস নমুনা হিসেবে সংগ্রহ করেন। পাশাপাশি কেব্ল ও বিদ্যুতের পোড়া তারও সংগ্রহ করেন তাঁরা। এর পরে বাজারের সেই অংশে যান, যেখানে লোহার বিম আগুনের তাপে বেঁকে গিয়েছে, কোথাও ভেঙে গিয়েছে। কোন দোকানে কী ধরনের জিনিস রাখা ছিল তার-ও খোঁজ নেন তাঁরা। দোকানগুলিতে কী ধরনের আলো ব্যবহার করা হত, কত ক্ষণ ধরে আলো জ্বলত, সে সব নিয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করেন তাঁরা। একটি মিটারবক্স তাঁরা পরীক্ষা করেও দেখেন। যদিও ফরেন্সিক দলের সদস্যেরা দেরিতে তদন্ত করতে আসা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে ফেলায় দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ জানতে সমস্যা হবে কি না, তা নিয়েও মুখ খুলতে চাননি তাঁরা।
কিন্তু রাজ্যের অবসরপ্রাপ্ত এক ফরেন্সিক কর্তা মনে করেন, ওই বাজারে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পরপরই সেখানে তদন্তকারী দল পাঠানো উচিত ছিল। ঘটনাস্থলে যত তাড়াতাড়ি ফরেন্সিক দল যাবে, ততই তদন্তে ভুলভ্রান্তি হওয়ার আশঙ্কা দূর হয়। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, সোমবার এবং মঙ্গলবার সরকারি ছুটি থাকায় ফরেন্সিক বিভাগের কাছে চিঠি দ্রুত না পৌঁছনো দেরির একটা কারণ হতে পারে। দমদম পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, এই অগ্নিকাণ্ড নিয়ে সোমবারই পুলিশের কাছে সাধারণ অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। এ দিনও দুই ব্যবসায়ী আলাদা ভাবে অভিযোগ দায়ের করেছেন। যদিও এমন কোনও অভিযোগ হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ফরেন্সিক দল আসার আগেই ধ্বংসস্তূপ কেন সরানো হল,— এ নিয়ে দমদম পুর কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, ব্যবসায়ীদের কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তাই দ্রুত বাজার পুনর্গঠনের কাজ শুরু করার প্রয়োজন ছিল। যত দ্রুত সম্ভব ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে অস্থায়ী ভাবে হলেও বাজার চালু করার দাবি ছিল ব্যবসায়ীদেরই। তাঁদের স্বার্থেই দ্রুত বাজার পরিষ্কারের কাজে হাত দিয়েছে দমদম পুরসভা। এমনটাই দাবি কর্তৃপক্ষের। এ দিনও চলেছে বাজার থেকে ধ্বংসাবশেষ সরানোর কাজ। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, বেশির ভাগ ব্যবসায়ী কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বাজার পরিষ্কারের কাজে হাত লাগিয়েছেন। এ দিন মাছ এবং মাংসের কয়েকটি দোকান খুলেছে। কয়েক দিনের মধ্যেই অস্থায়ীভাবে বাজার চালু করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুরসভা কর্তৃপক্ষ।
এ দিন দুপুরেও বাজারের একটি অংশে ছোট আগুন দেখা দিয়েছিল, তবে দ্রুত তা নিভিয়ে ফেলা হয়।