Garia

Garia Live-in Couple death: ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই, পাশে ছিল না পরিবার, আত্মঘাতী যুগল উইল করে সম্পত্তি দিলেন বন্ধুকে

পেশায় গাড়ির সার্ভিস সেন্টারের কর্মী তাপসকে উইল করে নিজের সব কিছু দিয়ে গিয়েছেন গড়িয়া ব্রহ্মপুরের আত্মঘাতী যুগল হৃষীকেশ এবং রিয়া সরকার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০২২ ০৫:৩৬
Share:

হৃষীকেশ পাল ও রিয়া সরকার। ফাইল চিত্র।

ক্যানসারকে হারানো সম্ভব হয়নি বন্ধু হৃষীকেশের পক্ষে। উল্টে ক্যানসারের চিকিৎসা করাতেই সর্বস্বান্ত হতে হয়েছে তাঁকে। এমন রোগাক্রান্ত কারও সঙ্গে নিজেদের মেয়ের সম্পর্ক মেনেও নিতে পারেননি বন্ধুর স্ত্রীর পরিবার। ফলে তাঁরা আর যোগাযোগই রাখেননি। এমন বহুমুখী ক্ষত তৈরি করা মারণ রোগের সঙ্গে যাঁরা এখনও লড়াই চালাচ্ছেন, বছর তিরিশের হৃষীকেশ পালের শেষ সম্বলটুকু বিক্রি করে তাঁদের পাশেই দাঁড়াতে চাইছেন তাঁর বন্ধু, ডায়মন্ড হারবারের তাপস দাস। পেশায় গাড়ির সার্ভিস সেন্টারের কর্মী তাপসকেই উইল করে নিজের সব কিছু দিয়ে গিয়েছেন গড়িয়া ব্রহ্মপুরের আত্মঘাতী যুগল হৃষীকেশ এবং রিয়া সরকার। এমনকি, তাঁদের মৃতদেহও তাপসের হাতেই তুলে দেওয়ার জন্য বলে গিয়েছেন তাঁরা।

Advertisement

বুধবারের পরে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত অবশ্য তাঁদের মরদেহ হাতে পাননি তাপস। এর জন্য এ দিনও উইল মেনে সৎকার করা যায়নি। তাপস বলছেন, ‘‘ক্যানসারের সঙ্গে ওরা লড়াই করে চলেছিল। চিকিৎসা করাতেই প্রচুর দেনা হয়ে যায়। রিয়ার পরিবারও পাশে দাঁড়ায়নি। তাই বন্ধুর শেষ সম্পত্তি টুকু ক্যানসারের লড়াইয়েই কাজে লাগাতে চাই।’’ তাপস জানান, হৃষীকেশ-রিয়ার ফ্ল্যাটে থাকা আসবাবপত্র ছাড়াও সোফা, ফ্রিজ এবং এসি রয়েছে। আছে একটি স্কুটার এবং সামান্য কিছু সোনার গয়না, যা তাঁদের পরনেই থাকত। আগে একটি গাড়িও ছিল, সেটি কোথায় সেই খোঁজ নেওয়া হবে। এর পরে পুলিশের অনুমতি নিয়ে এ সব কিছু বিক্রি করে সেই টাকা তাপস তুলে দিতে চান ক্যানসার আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে কাজ করা কোনও সংস্থার হাতে। তাঁর কথায়, ‘‘যাঁরা ক্যানসারকে হারাতে পারল না, তাঁদের শেষটুকু দিয়ে অন্তত ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াইটা জারি থাকুক।’’

মঙ্গলবার সকালে ব্রহ্মপুরের একটি ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয় হৃষীকেশ এবং রিয়ার মৃতদেহ। আত্মহত্যার আগে তাঁরা থানায় ইমেল করে সে কথা জানান বলে পুলিশ সূত্রের খবর। কিন্তু যতক্ষণে পুলিশ গিয়ে পৌঁছয়, ততক্ষণে দেরি হয়ে গিয়েছে। এর পরে তদন্তে জানা যায়, আগে একটি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থায় কাজ করলেও পথ দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হওয়ার পরে হৃষীকেশের কাজ চলে যায়। পরবর্তী কালে তাঁর রক্তের ক্যানসার ধরা পড়ে। রিয়া একটি পার্লারে কাজ করতেন। বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে এসে পরিবারের অমতেই তিনি হৃষীকেশের সঙ্গে থাকতে শুরু করেন ও পরে বিয়েও করেন। কিন্তু ক্যানসারের চিকিৎসায় জলের মতো টাকা খরচ হতে থাকে। বাজারে প্রায় ২৫ লক্ষ টাকার দেনা হয়ে যায়। শেষে ব্রহ্মপুরের ভাড়া নেওয়া ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয়তাঁদের মৃতদেহ।

Advertisement

আর্থিক অনটনের কারণেই কি ওই যুগল আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন? ক্যানসার চিকিৎসক থেকে মনোরোগ চিকিৎসকদের বড় অংশ অবশ্য তাঁদের আত্মহত্যার পিছনে একা হয়ে পড়া এবং ঠিক সময়ে ঠিক পরামর্শ না পাওয়ার বিষয়টিকেই বেশি দায়ী করছেন। মনোরোগ চিকিৎসক রিমা মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘‘আর্থিক অনটনের একটা চাপ তো ছিলই, তার সঙ্গে একা হয়ে যাওয়াটাও বড় প্রভাব ফেলেছে। মেয়েটিও হয়তো ভেবেছেন, নিজের পরিবারই যখন মানেনি, তখন তাঁরও আর বেঁচে থেকে কী লাভ! এখানেই যে সবটা শেষ হয়ে যায় না, সেটা বুঝিয়ে মানসিক জোরটুকু দেওয়ার মতো হয়তো কেউই ছিলেন না।’’ ক্যানসার চিকিৎসক সুবীর গঙ্গোপাধ্যায়ও বলেছেন, ‘‘পাশে দাঁড়ানো মানে সব সময়ে টাকাপয়সা দেওয়াই নয়। হয়তো কেমোর দিনে হাসপাতালে নিয়ে গেলেন বা ওষুধ এনে দিলেন। অন্য অনেক ভাবেও সাহায্য করা যায়। এমন রোগের চিকিৎসায় সত্যিই পাশে থাকার লোক লাগে। নিজের কেউ নেই, এই ভাবটা এই সময়ে মারাত্মক ক্ষতি করে।’’

রিয়ার বন্ধু দেবী ঘোষ যদিও বললেন, ‘‘রিয়ার সঙ্গে এক পার্লারে কাজ করতাম। মঙ্গলবারের ওই ঘটনাটা গত মে মাসেই হতে পারত। দিল্লি থেকে ফেরার পরে তখন ওদের প্রায় খাওয়ার টাকাও নেই। দিল্লিতে যতটা খরচ হবে ভেবে চিকিৎসা করাতে গিয়েছিল, আদতে তার চেয়ে অনেক বেশি লেগেছিল। আমরা বন্ধুরা মিলে যে যেমন পেরেছি, সাহায্য করেছি। তখন থেকে প্রায়ই বলত, সময় শেষ হয়ে এসেছে। নিজেদের সন্তানের মতো করে রাখা দু’টো কুকুরকেও ওরা আর নিজেদের কাছে রাখেনি। একটা দিয়েছিল এক পরিচিতকে। অন্যটি দিয়েছিল পুলিশের কুকুর বাহিনীতে। সময় শেষ হয়ে আসছে, এই ভাবনা থেকেই হয়তো..!’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement