অস্বাস্থ্যকর: বাগুইআটিতে ভিআইপি রোডের সার্ভিস রোডের পাশে এ ভাবেই ফেলা হয় আবর্জনা। বৃহস্পতিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
একটি খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত বছর অর্জুনপুরের শিবতলার একটি বাড়িতে শাসকদলের বড় নেতারা এসেছিলেন। তাঁদের নাকে যাতে দুর্গন্ধ না পৌঁছয়, তাই পরিত্যক্ত জমির আবর্জনার স্তূপ সেই সময়ে পরিষ্কার করা হয়েছিল। তার পরে এক বছর আর সেখান থেকে নোংরা তোলা হয়নি, এমনই অভিযোগ বাসিন্দাদের। ফলে, দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ তাঁরা। মশার উপদ্রবের চোটে সন্ধ্যায় গরমেও বাড়ির দরজা-জানলা বন্ধ রাখতে হয়। এমনই পরিস্থিতি বিধাননগর পুরসভার আট নম্বর ওয়ার্ডের অর্জুনপুরের শিবতলা এলাকার।
অথচ, বরাবরই ডেঙ্গিপ্রবণ এলাকা বলে পরিচিত বাগুইআটি। চলতি মরসুমে বাগুইআটি ও আশপাশের এলাকার বহু মানুষ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। স্থানীয়দের দাবি, গত বছর শাসকদলের অনেক নেতাই এলাকার একটি বাড়িতে এসেছিলেন বলে ওই আবর্জনা পরিষ্কার হয়েছিল। গত এক বছরে সেই ফাঁকা জমি ফের জঞ্জালে ভরে গিয়েছে। আবর্জনা তুলতে আসে না পুরসভা। এমনকি, ডেঙ্গির মরসুমেও পরিস্থিতি বদলায়নি। মশার উপদ্রব এলাকায় সাংঘাতিক। তা সত্ত্বেও পুর প্রশাসনের হেলদোল নেই বলে অভিযোগ।
শুধু শিবতলা নয়, রাজারহাট-গোপালপুরের অধীন বাগুইআটি অঞ্চলের অনেক জায়গা থেকে এমন অভিযোগ এসেছে। নাগরিকদের অভিযোগ, এলাকার মানুষ তো বটেই, কোথাও কোথাও পুরকর্মীরাই বাড়ি বাড়ি থেকে সংগৃহীত আবর্জনা রাস্তায় ফেলে যাচ্ছেন।
ভিআইপি রোডের বাগুইআটি এলাকায় ঘুরতে ঘুরতেই চোখে পড়ল, জোড়ামন্দির থেকে তেঘরিয়ার দিকে যেতে সার্ভিস রোডের ধারে অনেকটা অংশ জুড়ে জমে আছে আবর্জনা। জঞ্জাল পড়ে রয়েছে ওই জায়গার পার্শ্ববর্তী খালের পাড়েও। প্লাস্টিক-সহ বিভিন্ন ধরনের পরিত্যক্ত জিনিস পড়ে রয়েছে সেখানে। প্লাস্টিক, ভাঙা কমোড, থার্মোকলের পাত্র, কাগজের কাপ, চায়ের ভাঁড়-সহ মশা জন্মানোর সহায়ক যা যা প্রয়োজন, সবই রয়েছে। আরও দেখা গেল, সাইকেল ভ্যানে চাপিয়ে আবর্জনা ফেলে যাচ্ছেন লোকজন! সেই গাড়ি অবশ্য পুরসভার নয়। সার্ভিস রোডের গা-ঘেঁষে থাকা চায়ের দোকানে আসা ক্রেতাদের অনেকেরই অভিযোগ, একটু হাওয়া দিলেই দুর্গন্ধ ভেসে আসে।
প্রায় একই ছবি ৪৪ নম্বর বাসস্ট্যান্ডের কাছে। সেখানেও দেখা গেল, সার্ভিস রোড জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে আবর্জনা। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বাড়ি থেকে নিয়ে এসে আবর্জনা ওই জায়গাতেই ফেলে দেওয়া হচ্ছে। চিনার পার্ক থেকে ভিআইপি রোডের দিকে যাওয়ার পথে রাস্তার বাঁ দিকের ফাঁকা জমি ভ্যাটে পরিণত হতে দেখা গিয়েছে। জ্যাংড়া বাজারের কাছেও রাস্তার উপরে আবর্জনা পড়ে থাকার অভিযোগ করেছেন সেখানকার লোকজন।
সম্প্রতি বারাসত পুর এলাকায় ধরা পড়েছিল এমন ঘটনা, যেখানে আবাসনগুলি থেকে আবর্জনা সংগ্রহ করে বেসরকারি সংস্থা রাস্তার পাশে ঢেলে দিয়ে চলে যেত। ফলে দীর্ঘ সময় রাস্তায় আবর্জনা জমে থাকত।
বিধাননগর পুরসভার মেয়র পারিষদ (জঞ্জাল অপসারণ) দেবরাজ চক্রবর্তী জানান, দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে আবর্জনা তোলা হয়। তাঁর কথায়, ‘‘অনেক ক্ষেত্রে আবাসনগুলির জঞ্জাল ফেলে যাওয়া হয়। ফাঁকা জমির আবর্জনাও যথাসম্ভব তুলে নেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে কী হয়েছে, খোঁজ নিচ্ছি। উৎসবের সময়ে শহর যাতে অপরিচ্ছন্ন না থাকে, সে দিকে খেয়াল রাখা হবে।’’