—প্রতীকী চিত্র।
বার্ষিক সম্পত্তিকরের শংসাপত্র না পেয়ে সোমবার গড়িয়াহাটের টলিট্যাক্স বিভাগের অফিসে গিয়েছিলেন এক করদাতা। তখন জানতে পারেন, তাঁর মালিকানাধীন একটি ফাঁকা জমিতে দীর্ঘদিন ধরে আবর্জনা জমা নিয়ে পুরসভা নোটিস ধরালেও তা পরিষ্কার করেননি তিনি। পরে পুরসভার জঞ্জাল অপসারণ বিভাগ সেই জমি আবর্জনা-মুক্ত করে। সেই সাফাই ফি বাবদ নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা যুক্ত করা হয়েছে ওই ব্যক্তির সম্পত্তিকরের সঙ্গে। কিন্তু তিনি তা না মেটানোর জন্যই সম্পত্তিকরের বার্ষিক শংসাপত্র পাচ্ছেন না।
এটি শুধুমাত্র একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ডেঙ্গি রুখতে এ ভাবেই এক শ্রেণির মানুষের কাছে কঠোর বার্তা দিতে চাইছেন কলকাতা পুর কর্তৃপক্ষ। পরিসংখ্যান বলছে, গত বছরে দক্ষিণ কলকাতায় ডেঙ্গির দাপট ছিল বেশি। পুর তথ্য অনুযায়ী,উত্তরের তুলনায় দক্ষিণে ফাঁকা জমির সংখ্যাও বেশি। কিন্তু ওই সমস্ত ফাঁকা জমির অনেকাংশের এখনও মূল্যায়ন না হওয়ায় সেখানে যত্রতত্র আবর্জনা জমে মশার বংশবিস্তার হয় বলে অভিযোগ। ‘টক টু মেয়র’ অনুষ্ঠানে এ নিয়ে মেয়র ফিরহাদ হাকিমের কাছে ভূরি ভূরি অভিযোগ এসেছে। তাই এ বার ডেঙ্গি ঠেকাতে ওই সব জমির আবর্জনা সাফাই ফি বাবদ একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা সম্পত্তিকরের সঙ্গে যুক্ত করে কড়া বার্তা দিচ্ছে পুরসভা।
মেয়রের নির্দেশ অনুয়ায়ী, কোনও জমিতে দীর্ঘদিন ধরে আবর্জনা পড়ে থাকলে পুরসভা তা পরিষ্কার করার জন্য জমির মালিককে প্রথমে নোটিস দিচ্ছে। তাতে কাজ না হলে পুরসভার জঞ্জাল অপসারণ বিভাগ গিয়ে জমি সাফ করে আসছে। একই সঙ্গে, জঞ্জাল সাফাই বাবদ নির্ধারিত ফি সংশ্লিষ্ট জমির মালিকেরসম্পত্তিকরের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। কলকাতা পুরসভার এক শীর্ষ আধিকারিকের কথায়, ‘‘শহরের অনেক ফাঁকা জমিতে দিনের পর দিন আবর্জনা পড়ে থাকছে। ফলে সেখানে বর্ষায় জল জমে মশার লার্ভা জন্মাচ্ছে। গত বছর দক্ষিণ কলকাতায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ ছিল ফাঁকা জমিতে ময়লা ফেলা। তাই পুরসভা এমন পরিত্যক্ত ফাঁকা জমির মালিককে প্রথমে নোটিস পাঠাচ্ছে। তাতেও কাজ না হলে পুরসভাই সেই আবর্জনা পরিষ্কার করছে এবং সেই সংক্রান্ত ফি সম্পত্তিকরের সঙ্গে যোগ হচ্ছে।’’ ওই কর্তা সাফ জানান, মশাবাহিত রোগ দূরীকরণে পুরসভা বছরভর কাজ করছে। কিন্তু এক শ্রেণির নাগরিকের অসচেতনতার জন্য অনেককে ভুগতে হচ্ছে। এই অব্যবস্থা চলতে পারে না। শহর পরিচ্ছন্ন রাখার পাশাপাশি ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে পুরসভা এ বার থেকে কঠোর ভূমিকা পালন করবে।
মেয়রের নির্দেশ মতো মশাবাহিত রোগ রুখতে এখন পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের পাশাপাশি কর মূল্যায়ন বিভাগও পরস্পরের সঙ্গে সমন্বয়রেখে কাজ করছে। মূলত শহরের যে সমস্ত ফাঁকা জমি, পুকুরের মূল্যায়ন হয়নি, সেই সমস্ত সম্পত্তিকে মূল্যায়নের আওতায় আনতে কাজ করছে এই বিভাগ।
স্বাস্থ্য বিভাগের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘ফাঁকা জমি, পুকুরের পাড়ে ময়লা পড়ে থাকায় সেখানে বৃষ্টির জল জমে মশা জন্মায়। গত বছর থেকে শিক্ষা নিয়ে এই সমস্ত জায়গা পরিচ্ছন্ন রাখার উপরে বেশি জোর দিচ্ছি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ওই সমস্ত ফাঁকা জমি বা পুকুরের মূল্যায়ন না হওয়ায় সেগুলির মালিককে নোটিস দিতে পারি না। মেয়রের হস্তক্ষেপে এ বার থেকে সেটা করা সম্ভব হচ্ছে।’’
পুরসভা সূত্রের খবর, ফাঁকা জমি বা পরিত্যক্ত বাড়িকে মূল্যায়নের আওতায় আনতে যথেষ্ট বেগও পোহাতে হচ্ছে কর রাজস্ববিভাগকে। এক আধিকারিক জানান, সংখ্যায় কম হলেও বেশ কিছু বাড়ি বা ফাঁকা জমির মালিককে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে পুরসভা নতুন একটি অ্যাসেসি নম্বর যুক্ত করে তার মালিকানা উদ্বাস্তু ওপুনর্বাসন দফতরের নামে লেখা হচ্ছে। আপাতত সেই সমস্ত মালিকহীন জমি, বাড়ি পরিচ্ছন্ন রাখার কাজ করছে পুরসভা। পরে এই সমস্ত জমিকোনও ব্যক্তিগত মালিকানার অধীন হলে তাঁর নামে জঞ্জাল সাফাইয়ের ফি কাটা হবে।