ফাইল চিত্র।
লকডাউনে কলকারখানা-সহ একাধিক শিল্প বন্ধ থাকায় গঙ্গার জলের মানের উন্নতি হয়েছে বলে জনমানসের একাংশে ধারণা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে হয়েছে তার উল্টোটা। লকডাউন-পর্বে আরও দূষিত হয়েছে গঙ্গাজল। ‘সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’-এর (সিএসই) রিপোর্ট থেকে এমনটাই জানা যাচ্ছে।
কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্য বিশ্লেষণ করে সিএসই-র ওই রিপোর্ট জানাচ্ছে, এই দূষণের অন্যতম কারণ হল অপরিশোধিত এবং আংশিক পরিশোধিত তরল বর্জ্যের সরাসরি গঙ্গায় মেশা। তার সঙ্গে রয়েছে জলের মধ্যে দূষকের (পলিউট্যান্ট) ঘনত্বের মাত্রা বেড়ে যাওয়া-সহ একাধিক কারণ। যার পরিপ্রেক্ষিতে পরিবেশবিজ্ঞানী, নদী-বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, কোভিড আক্রান্তের দেহের সম্মানজনক অন্ত্যেষ্টি পর্ব সম্পন্ন না করে গঙ্গায় ভাসিয়ে দেওয়ার অভিযোগ সত্যি হলে তা মানবিক, সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে দুর্ভাগ্যজনক তো বটেই। একই সঙ্গে এটা সংলগ্ন এলাকার সামগ্রিক পরিকাঠামোর খামতির দিকেই আঙুল তোলে। এক গবেষকের কথায়, ‘‘তবে গঙ্গাদূষণের অন্যতম প্রধান কারণ সেই নোংরা, অপরিশোধিত তরল বর্জ্য। যার থেকে লকডাউন-পর্বেও নিস্তার পায়নি গঙ্গা।’’
সিএসই-র রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৪-’১৫ সাল থেকে ২০২০-’২১ সালের মধ্যে দেশে তরল বর্জ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে ১৭ শতাংশ। পরিশোধনের ক্ষমতা বেড়েছে ৩৭ শতাংশ। তবে সব থেকে উল্লেখযোগ্য, ২০২০-’২১ সালে উৎপন্ন মোট তরল বর্জ্যের ৭২ শতাংশই সরাসরি গিয়ে মিশেছে নদীতে। এমনিতে রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির মধ্যে দিনপিছু তরল নিকাশি বর্জ্যের উৎপাদনের নিরিখে পশ্চিমবঙ্গ রয়েছে চতুর্থ স্থানে (দৈনিক ৫৪৭.৭০ কোটি লিটার)। মহারাষ্ট্র (দৈনিক ৯১০.৭০ কোটি লিটার), উত্তরপ্রদেশ (দৈনিক ৮২৬.৩০ কোটি লিটার) এবং তামিলনাড়ুর (দৈনিক ৬৪২.১০ কোটি লিটার) পরেই। কিন্তু এ রাজ্যে মোট উৎপন্ন তরল বর্জ্যের ২০ শতাংশেরও কম বর্জ্য পরিশোধিত হয়!
কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সূত্র আবার জানাচ্ছে, এর আগে ২০১৪-’১৫ সালে দেশের নিকাশি পরিশোধন প্লান্ট (সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট বা এসটিপি) নিয়ে করা একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল যে, দেশে মোট ৮১৬টি এসটিপি থাকলেও তার মধ্যে ৫২২টি কাজ করছিল। তার ছ’বছর পরে দেশে এসটিপি সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ১৬৩১টি হলেও তার মধ্যে কাজ করছে ১০৯৩টি। পর্ষদের এক কর্তার কথায়, ‘‘বাকি ১০২টি বন্ধ বা অকেজো অবস্থায়, ২৭৪টি নির্মীয়মাণ অবস্থায় এবং ১৬২টি প্রস্তাবিত অবস্থায় রয়েছে। তার ফলে তরল নিকাশি বর্জ্যের সিংহভাগই সরাসরি গিয়ে মিশছে গঙ্গায়।’’ যার ব্যতিক্রম নয় পশ্চিমবঙ্গও।
যার পরিপ্রেক্ষিতে এক নদী-গবেষকের বক্তব্য, ‘‘আসলে এসটিপি চালানো খুবই ব্যয়বহুল। তাই অনেক ক্ষেত্রে এসটিপি তৈরি হলেও ধারাবাহিক ভাবে চালু রাখা যাচ্ছে না। তা বন্ধ করে দিতে হচ্ছে বা অকেজো অবস্থায় পড়ে থাকছে।’’ আর এক নদী-বিশেষজ্ঞ সুপ্রতিম কর্মকার বলছেন, ‘‘শুধু গঙ্গাই নয়, তার উপনদীগুলিতেও প্রতিদিন মিশছে অপরিশোধিত, তরল বর্জ্য। গঙ্গা দূষণ রোধ করতে গেলে তার উপনদীগুলিকেও দূষণমুক্ত করতে হবে।’’