উদ্ধার হওয়া সোনা। বুধবার, বিমানবন্দরে। —নিজস্ব চিত্র।
দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে বিমানবন্দরের পণ্য বিভাগে পড়ে ছিল বাজেয়াপ্ত হওয়া বেশ কিছু সামগ্রী। সেই তালিকায় ছিল কম্পিউটারের দু’টি ইউপিএস। বুধবার সেই দু’টি ইউপিএস-এর ভিতর থেকে ১০ কিলোগ্রাম সোনা পেলেন শুল্ক অফিসারেরা! যার বাজারদর প্রায় ৩ কোটি টাকা বলে মনে করা হচ্ছে।
শুল্ক দফতর সূত্রের খবর, অন্য সামগ্রীর সঙ্গে ওই দু’টি ইউপিএস-ও দুবাই থেকে কলকাতায় এসেছিল। সে সময়ে বেশ কিছু বিদেশি পণ্য শুল্ক ফাঁকি দিয়ে বিমানবন্দরের বাইরে পাচার করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠায় ইউপিএস-সহ কিছু সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করে শুল্ক দফতর। এক শুল্ক কর্তার কথায়, ‘‘সম্প্রতি আমরা জানতে পারি, বিদেশ থেকে পাঠানো ইউপিএস-এ সোনা পাচার করা হচ্ছে। আমাদের কাছেও আগে থেকে বাজেয়াপ্ত করা ওই দু’টি ইউপিএস পড়ে ছিল। তখনই সন্দেহ হয়, ওই ইউপিএস-এর মধ্যেও সোনা পাচার হচ্ছিল না তো! বুধবার সেই দু’টি ইউপিএস খুলে দেখা যায়, তার ব্যাটারির জায়গায় পাঁচটি করে সোনার বার রাখা।’’
শুল্ক দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ইউপিএস দু’টি বাজেয়াপ্ত করার সময়ে স্ক্যান করা হলেও সোনা থাকার কথা জানা যায়নি। এ দিন খুলে দেখা যায়, সোনার বারগুলি কার্বন পেপার এবং এমন কাগজে মোড়া ছিল, যেগুলি স্ক্যানে ধরাই পড়ে না।
শুল্ক দফতরের অফিসারেরা জানিয়েছেন, বিদেশ থেকে আসা মালপত্র কলকাতা বিমানবন্দর থেকে লুকিয়ে বাইরে পাচার করার অভিযোগ ওঠে কয়েক মাস আগে। অভিযোগ, কিছু ব্যক্তি বিদেশ থেকে আসা সামগ্রী শুল্ক না দিয়েই লুকিয়ে বিমানবন্দরের অন্য গেট দিয়ে বার করে নিচ্ছিলেন। বিমানবন্দরের এক শ্রেণির কর্মীদের সঙ্গে যোগসাজশ থাকায় সহজেই ওই গেট ব্যবহার করা হচ্ছিল বলে অভিযোগ। এ ভাবে পাচার হওয়া প্রচুর সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করে শুল্ক দফতর। যদিও অভিযোগ, ওই মাল বাজেয়াপ্ত হওয়ার আগেই প্রচুর জিনিস বিমানবন্দর থেকে বেরিয়েও যায়।
এ দিন ইউপিএস থেকে সোনা উদ্ধারের পরে শুল্ক অফিসারদের আশঙ্কা, আগেও এ ভাবে বিদেশি সামগ্রীর ভিতরে করে কয়েক কোটি টাকার সোনা পাচার হয়ে থাকতে পারে। বাজেয়াপ্ত করা সামগ্রীর মধ্যে ইউপিএস ছাড়াও রয়েছে বিদেশি সিগারেট, কম্পিউটার ও মোবাইলের যন্ত্রাংশ। এমন কিছু জিনিসও মিলেছে যা বিস্ফোরণের ডিটোনেটর হিসেবেও কাজ করতে পারে বলে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে। সেগুলি সল্টলেকে সেন্ট্রাল ইলেকট্রনিক টেস্ট ল্যাবে পাঠানোও হয়েছে।
এই পাচারের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ১২ অক্টোবর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের সুপারিন্টেন্ডেন্ট সম্পদনারায়ণ মুখোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করেছিলেন শুল্ক দফতরের স্পেশ্যাল ইনভেস্টিগেশন ব্রাঞ্চের অফিসারেরা। সম্পদবাবু এখন জেল হেফাজতে। এর পরে গত ২৪ অক্টোবর গ্রেফতার করা হয় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের যুগ্ম জেনারেল ম্যানেজার গিরিশ শর্মাকে। দিল্লি থেকে ডেকে পাঠিয়ে তাঁকে ধরা হয়। অভিযোগ, যে সময়ে এই পাচার চলছিল, তখন কলকাতা বিমানবন্দরের পণ্য বিভাগে কর্মরত ছিলেন গিরিশ। জুনে বদলি হয়ে চলে যান দিল্লি। সেই গিরিশও এখন জেলে রয়েছেন। শুল্ক অফিসারদের অনুমান, এই ধরনের ঘটনার সঙ্গে উপরমহলের বেশ কয়েক জন জড়িত। তাঁরা আরও অভিযোগ করছেন, তদন্ত লঘু করার জন্য ক্রমাগত উপর থেকে তাঁদের উপরে চাপ আসছে।