প্রতীকী ছবি।
করোনা-কাল পার হলেও সম্পত্তিকর আদায়ে এখনও তেমন ভাবে গতি আনতে পারেনি কলকাতা পুরসভা। পুরসভা সূত্রের খবর, ২০২১-’২২ অর্থবর্ষে কলকাতা পুর এলাকা থেকে সম্পত্তিকর বাবদ আদায় হয়েছিল ৮৮৪ কোটি ৮৯ লক্ষ টাকা। ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর সময়কালে আদায় হওয়া সম্পত্তিকরের সঙ্গে চলতি বছরের ওই সময়ের তুলনা টানলে তা বেড়েছে মাত্র ৩০ শতাংশ।
পুরসভার তথ্য বলছে, বকেয়া সম্পত্তিকরের পরিমাণ তিন হাজার কোটি টাকা। যাঁরা মোটা অঙ্কের কর ফাঁকি দিচ্ছেন, সেই করখেলাপিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে চান পুর কর্তৃপক্ষ। বিপুল অঙ্কের সম্পত্তিকর বকেয়া থাকার পরিপ্রেক্ষিতে পুরসভার এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত সম্পত্তিকর বাবদ যত টাকা আদায় হয়েছে, তা একেবারেই আশানুরূপ নয়। পুজোর ছুটির পর পুরসভা চালু হলে সম্পত্তিকর আদায়ে একাধিক পদক্ষেপ করতে হবে।’’
সম্পত্তিকর আদায়ের পরিমাণ বাড়াতে এ বার বেশ কিছু নতুন পদক্ষেপ করতে চলেছে পুরসভা। উল্লেখ্য, কর রাজস্ব আদায়ের বড় অংশ পুরসভার বিল্ডিং দফতরের উপরে নির্ভরশীল। কিন্তু শহরে নিত্যনতুন আবাসন গড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সম্পত্তিকর আদায়ে ফাঁক থেকে যাচ্ছে বলেই মত পুরসভার। সম্পত্তিকর বিভাগের আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, নতুন নতুন আবাসন তৈরি হলেও লালফিতের ফাঁসে তাদের অ্যাসেসমেন্টের আওতায় আনা যাচ্ছে না। কর রাজস্ব বিভাগের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘অনেক ক্ষেত্রে ফ্ল্যাট তৈরির দু’বছর পরে তাদের অ্যাসেসমেন্টের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে। ফলে দু’বছরের বকেয়া বিল একসঙ্গে মেটাতে নাগরিকেরা নাস্তানাবুদ হচ্ছেন। পাশাপাশি, পুরসভাও নিয়মিত সম্পত্তিকরের টাকা পাচ্ছে না। তাই পুরসভার কর রাজস্ব বিভাগ ও বিল্ডিং বিভাগ এখন থেকে একসঙ্গে কাজ করবে।’’
পুরসভার কর রাজস্ব দফতর সূত্রের খবর, ২০১৯-’২০ অর্থবর্ষে কলকাতা পুর এলাকায় সম্পত্তিকর বাবদ আদায় হয়েছিল ৮৫৮ কোটি ৪১ লক্ষ টাকা। ২০২০-’২১ সালে কোভিডের জন্য সম্পত্তিকর আদায় বেশ কমেছিল। তাই কর আদায়ের ক্ষেত্রে ওই অর্থবর্ষকে তুলনায় আনতে চান না পুরকর্তারা। ফের ২০২১-’২২ অর্থবর্ষে সম্পত্তিকর আদায়ের পরিমাণ বাড়লেও (৮৮৪ কোটি ৮৯ লক্ষ টাকা) তাতে সন্তুষ্ট নন পুর কর্তৃপক্ষ। কর রাজস্ব বিভাগ সূত্রের খবর, চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সম্পত্তিকর বাবদ আদায় হয়েছে প্রায় পাঁচশো কোটি টাকা।
পুজোর ছুটিতে দশ দিন পুরসভা বন্ধ ছিল। ডেঙ্গি মোকাবিলায় স্বাস্থ্য বিভাগ খোলা থাকলেও কর রাজস্ব বিভাগ ছিল বন্ধ। কিন্তু পুজোর ছুটির আগেই অ্যাসেসমেন্ট বিভাগের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। উদ্দেশ্য ছিল, সম্পত্তিকর থেকে আয় বাড়ানোর প্রসঙ্গ আলোচনা। কাল, মঙ্গলবার থেকে পুরসভার সব দফতর পুনরায় চালু হবে। পুর আয়ের একটা বড় অংশ আসে সম্পত্তিকর থেকে। সেই দিক থেকে দেখলে গত দশ দিন পুরসভার রাজস্ব আদায় ছিল শূন্য।
বহু ক্ষেত্রে প্রোমোটারেরা ফ্ল্যাট তৈরি করতে পুরসভার থেকে অনুমোদন পেলেও ফ্ল্যাট তৈরির পরে সিসি (কমপ্লিশন সার্টিফিকেট) নেন না বলেই দাবি পুরসভার। ফলে দিনের পর দিন ওই সমস্ত ফ্ল্যাটের অ্যাসেসমেন্ট থেকে পুরসভা বঞ্চিত হচ্ছে। এই প্রবণতা শহরের কলোনি এবং সংযুক্ত এলাকার প্রোমোটারদের মধ্যে বেশি। পুরসভা চায়, এ বার থেকে কোনও ফ্ল্যাটের নির্মাণ শুরুর পর থেকেই বিল্ডিং বিভাগ সংশ্লিষ্ট প্রোমোটারের মাধ্যমে যাবতীয় তথ্য কর রাজস্ব বিভাগকে সরবরাহ করবে। পুরসভার কর রাজস্ব বিভাগের আধিকারিকেরা মনে করছেন, বিল্ডিং বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করলে এক শ্রেণির প্রোমোটারের কর ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা রোখা যাবে।
‘টক টু মেয়র’ অনুষ্ঠানে একাধিক বার শহরের নাগরিকেরা মেয়রের কাছে অভিযোগে জানিয়েছেন, বাড়ি বা ফ্ল্যাট তৈরি হওয়ার পরে পুরসভার থেকে কমপ্লিশন সার্টিফিকেট পেতে বা ফ্ল্যাটের মিউটেশন করাতে নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তাঁদের। যা শুনে মেয়র অ্যাসেসমেন্ট বিভাগকে ইতিমধ্যেই সতর্ক করেছেন।