প্রতীকী ছবি।
কাটমানির খেলা? ভাঁড়ারে টানের কারণে টাকা পেতে দেরি? নাকি মুষ্টিমেয় কিছু ঠিকাদারি সংস্থার ‘অতি সক্রিয়তা’, যা নির্ধারণ করে দিচ্ছে দরপত্রে কারা অংশগ্রহণ করবে আর কারা করবে না? চলতি মাসে সমস্ত দফতরের উদ্দেশে কলকাতা পুর কর্তৃপক্ষের এক নির্দেশের পরে এমন একাধিক প্রশ্ন উঠে আসছে।
লিখিত ওই নির্দেশে কর্তৃপক্ষ স্বীকার করে নিয়েছেন, পুরসভার ডাকা দরপত্রে যথেষ্ট সংখ্যক সংস্থা অংশগ্রহণ করছে না। ফলে ওই প্রক্রিয়া বাতিল করে দিতে হচ্ছে! এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে একাধিক বার। তাই সিদ্ধান্ত হয়েছে, দরপত্র ডাকার আগে সংশ্লিষ্ট দফতরকে সমস্ত ‘স্টেকহোল্ডার’-এর সঙ্গে বৈঠক করতে হবে। বৈঠকে আলোচনার মাধ্যমে বুঝতে হবে ওই দরপত্রে উল্লিখিত শর্তে কোনও পরিবর্তন প্রয়োজন কি না। অথবা কী ভাবে দরপত্রটিকে আরও আকর্ষণীয় করে বেশি সংখ্যক সংস্থার অংশগ্রহণ সুনিশ্চিত করা যায়। শর্ত শিথিলের পরেও যদি দরপত্রে প্রত্যাশিত সাড়া পাওয়া না যায়, তা হলে সেটা পুর কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে। ঠিক কী কারণে দরপত্র বাতিল করা হল, জানাতে হবে তা-ও।
এমনিতে দরপত্র ডাকার আগে ‘স্টেকহোল্ডার’-দের সঙ্গে বৈঠক নতুন কিছু নয়। বরাবরই ‘প্রি-বিড মিটিং’ হয়ে এসেছে। কিন্তু তার পরেও পুরসভার তরফে নতুন ভাবে জারি করা এই নির্দেশকে কেন্দ্র করে কিছু প্রশ্ন উঠে এসেছে। যার মূল নির্যাস হল— বিভিন্ন ‘অনিয়ম’-এর কারণে কি পুরসভার কাজ পেতেই আর আগ্রহী নয় বিভিন্ন সংস্থা? প্রশ্নটি আরও দৃঢ় হয়েছে লিখিত নির্দেশের শব্দচয়নের কারণে। ওই নির্দেশে বলা হচ্ছে— ‘নিজেদের টার্নওভার ও মুনাফা বৃদ্ধির কারণে সংস্থারা নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবে, এটাই প্রত্যাশিত। ব্যবসার স্বাভাবিক নিয়মও সেটাই। কিন্তু একাধিক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, পর্যাপ্ত সংখ্যক অংশগ্রহণকারী সংস্থার অভাবে কলকাতা পুরসভার ডাকা দরপত্র একাধিক ক্ষেত্রে বাতিল করে দিতে হচ্ছে।’
যার পরিপ্রেক্ষিতে কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন মেয়র বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের দাবি, দরপত্রে সাড়া না পাওয়ার এই ‘অসুখ’ তৃণমূল জমানাতেই হয়েছে। প্রাক্তন মেয়রের দাবি, ‘‘আমাদের সময়ে এত সংস্থা অংশগ্রহণ করত যে, ঠিক সংস্থাকে নির্বাচন করতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খেতে হত। কাটমানি, নিজের পছন্দের লোককে বরাত পাইয়ে দেওয়া, কয়েকটি ঠিকাদারি সংস্থাকে অগ্রাধিকার-সহ একাধিক বিষয় বর্তমান পরিস্থিতির জন্য দায়ী।’’
প্রাক্তন মেয়রের এই বক্তব্যকে অস্বীকার করে পুর প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা অবশ্য জানাচ্ছেন, বাম আমলে শহরে কত প্রকল্পের কাজ হয়েছে আর রাজ্যের বর্তমান শাসক দলের সময়ে কত হয়েছে, সেটা পরিসংখ্যানই বলবে। তা ছাড়া, বাম আমলে দরপত্র আহ্বানে স্বচ্ছতা কোথায় ছিল? ওই শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘বর্তমান শাসকদলের জমানাতেই দরপত্রে স্বচ্ছতা এসেছে। অনলাইনের মাধ্যমে দরপত্রে এখন যে কোনও সংস্থাই অংশগ্রহণ করতে পারে। দরপত্রে অংশগ্রহণকারী সংস্থাও জানতে পারে না অন্য কে কে এই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করেছে। ফলে দরপত্রে কারচুপি বা মুষ্টিমেয় ঠিকাদারি সংস্থাকে বরাত দেওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন।’’
তা হলে দরপত্র বাতিলের ঘটনা ঘটছে কেন? পুর প্রশাসনের একাংশের বক্তব্য, সংক্রমণের কারণে ভাঁড়ারে টান পড়েছে। তাই ঠিক সময়ে টাকা পাচ্ছে না ঠিকাদারি সংস্থা। অন্য সময়ে টাকা পেতে দেরি হলেও খুব একটা অসুবিধা হয়নি। কিন্তু সাম্প্রতিক পরিস্থিতি যে ভাবে সার্বিক অর্থনীতির
উপরেই প্রভাব ফেলেছে, তাতে কাজ করে টাকা আটকে থাকুক, সেটা চাইছে না অনেক ঠিকাদারি সংস্থাই। এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘প্রকল্পে বিনিয়োগ করলে সব সংস্থাই চায় টাকা যেন ঠিক সময়ে পাওয়া যায়। কিন্তু সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে সেটা হচ্ছে না। ফলে ঝুঁকি নিতে চাইছেন না অনেকেই। আর্থিক সমস্যা বাদ দিলে দরপত্রে সাড়া না পাওয়ার অন্য কোনও কারণ রয়েছে বলে
মনে হয় না।’’