দেবাঞ্জন দেব ফাইল চিত্র
মুম্বই, কলকাতা— এর পরে কোথায়? দেশের দুই মেট্রোপলিটন শহরে জাল প্রতিষেধকের ঘটনা সামনে আসার পরে এমন আশঙ্কাই দানা বাঁধছে অনেকের মনে। এর সঙ্গত কারণও রয়েছে। ধৃত দেবাঞ্জন দেব কসবার আগে একাধিক প্রতিষেধক শিবিরের আয়োজন করেছিল, আর সেটাও কোনও প্রত্যন্ত এলাকায় নয়, খাস কলকাতা ও সোনারপুরের মতো জায়গায়। পুলিশ-প্রশাসন তা ঘুণাক্ষরেও জানতে পারেনি। দেবাঞ্জনের কীর্তি ফাঁস হয় কসবায় এসে। এখানে ধরা না পড়লে সে এ রকম শিবির চালিয়ে যেতে পারত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, এখনই প্রতিষেধক প্রদান কর্মসূচির উপরে সার্বিক নিয়ন্ত্রণ জারি না হলে ভবিষ্যতেও এমন ঘটনা ঘটতে পারে।
‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ’-এর প্রাক্তন ডিরেক্টর জেনারেল নির্মল গঙ্গোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, একেই পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রতিষেধকের সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে করোনাভাইরাসের নতুন ডেল্টা প্লাস প্রজাতির সংক্রমণ। তাঁর কথায়, ‘‘এর ফলে করোনা নিয়ে আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ প্রতিষেধকের জন্য ছুটছে। আর তার সুযোগ নিচ্ছে প্রতারকেরা। প্রতিষেধক প্রদান কর্মসূচি নিয়ে একটি নির্দিষ্ট নীতি গ্রহণের পাশাপাশি দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। মানুষের জীবন নিয়ে এই ছেলেখেলা চলতে পারে না!’’ প্রসঙ্গত, ইতিমধ্যেই দেবাঞ্জনের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মাইক্রোবায়োলজিস্ট বিশ্বরূপ চট্টোপাধ্যায় আবার জানাচ্ছেন, এমনিতেই জনমানসে প্রতিষেধক নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। কোভ্যাক্সিন, কোভিশিল্ড না স্পুটনিক ভি— কোন প্রতিষেধক ভাল, তা নিয়ে নিরন্তর চর্চাও চলছে। তাঁর কথায়, ‘‘অর্থাৎ সার্বিক একটা বিভ্রান্তি রয়েছে প্রতিষেধক নিয়ে। আর সেটাকেই কাজে লাগাচ্ছে প্রতারকেরা। মুম্বই, কলকাতার ঘটনা জানতে পেরেছি। আরও কোথাও কী ঘটছে, সেটা কি আমরা জানি?’’ জাল প্রতিষেধক-কাণ্ডের সঙ্গে ভুল তথ্যের সংক্রমণ বা ‘ইনফোডেমিকস’-এরও মিল খুঁজে পাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। সংক্রমণের প্রথম পর্বে সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিকই যেখান থেকে করোনা সংক্রান্ত যা তথ্য পাচ্ছিলেন, তা-ই বিশ্বাস করছিলেন। প্রতিষেধকের ঘাটতির ক্ষেত্রেও সেই একই প্রবণতা কাজ করছে।
তবে তার পাশাপাশি এর সঙ্গে আরও কয়েকটি বিষয় জড়িয়ে রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। তাঁদের বক্তব্য, নিরাপত্তাহীনতা শুরু হলে মানুষের আর অত কিছু যাচাইয়ের মানসিকতা থাকে না। হাতের সামনে যা পায়, তখন সেটাকেই আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করে। এ ক্ষেত্রেও সেটাই হচ্ছে। করোনা সংক্রমণজনিত মানসিক অবসাদ, উদ্বেগ-সহ নানা সমস্যার কাউন্সেলিং-এর জন্য ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টস’ গঠিত ‘ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট টাস্ক ফোর্স’-এর সদস্য প্রশান্তকুমার রায় আবার বলছেন, ‘‘মানুষের বিপন্নতাকেই মূলধন করছে দেবাঞ্জনের মতো প্রতারকেরা! তা ছাড়া মুম্বই, কলকাতার আগে ভুয়ো প্রতিষেধক শিবিরের ঘটনা প্রকাশ্যে আসেনি। ফলে সাধারণ মানুষ এ ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়ার প্রয়োজনও তেমন বোধ করেননি। তবে মুম্বই, কলকাতার ঘটনার জেরে মানুষ এ বার সতর্ক হবে, আশা করা যায়।’’