পুলিশকর্তার নামে ভুয়ো অ্যাকাউন্ট। প্রতীকী ছবি
কখনও ব্ল্যাকমেল করে টাকা হাতানোর জন্য। কখনও সমস্যার কথা জানিয়ে পরিচিত বা আত্মীয়ের থেকে টাকা নেওয়ার জন্য। কখনও বা শুধুই প্রভাব খাটানোর চেষ্টায়! গত কয়েক বছরে এমনই সব কারণে পুলিশকর্তা, প্রশাসনিক কর্তা বা প্রতিষ্ঠিত কারও তথ্য ব্যবহার করে ভুয়ো সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট খোলার ঘটনা সামনে এসেছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই সমস্ত কাজ করে সাইবার প্রতারকেরা। যত ক্ষণে নজরে আসে বিষয়টি, তত ক্ষণে জাল ছড়িয়ে যায় বহু দূর।
এমনই আরও একটি ঘটনা সামনে এসেছে মঙ্গলবার। আইপিএস অফিসার সুপ্রতিম সরকার নিজের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে জানিয়েছেন, তাঁর তথ্য ব্যবহার করে ভুয়ো অ্যাকাউন্ট তৈরি হয়েছে। তিনি এখন রয়েছেন রাজ্যের ট্র্যাফিক ও রোড সেফটির এডিজি ও আইজিপি পদে। তিনি এমন ভুয়ো অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে সতর্ক করার পাশাপাশি যথাযথ আইনি পদক্ষেপ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই পোস্টে।
২০২১ সালের নভেম্বরে এমনটাই ঘটে কলকাতার তৎকালীন নগরপাল সৌমেন মিত্রের সঙ্গে। তাঁর ছবি ব্যবহার করে ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে বলে হেয়ার স্ট্রিট থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। গ্রেফতারও করা হয় অভিযুক্তকে। কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের এক শীর্ষ কর্তা এবং এক সহকারী নগরপালের নাম করে অ্যাকাউন্ট খুলে আর্থিক তছরুপের অভিযোগও সামনে এসেছে। বাদ যাননি আলিপুরদুয়ার জেলার পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবংশীও। এমন ঘটনায় বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে হাওড়া কমিশনারেটের উপ-নগরপাল দ্যুতিমান ভট্টাচার্য, হাওড়া সিটি পুলিশের নগরপাল কুণাল আগারওয়াল, বসিরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সৌতম বন্দ্য়োপাধ্যায় বা জলপাইগুড়ির ডেপুটি পুলিশ সুপার সমীর পালদের। ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খুলতে পুলিশ হিসাবে থাকা তাঁদের ছবি ব্যবহার করা হয়েছিল। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের স্ত্রী ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়ও এমন অভিযোগ দায়ের করেছিলেন।
কলকাতা পুলিশের সাইবার শাখার এক কর্তা জানান, মূলত ভরতপুর গ্যাংয়ের মতো কিছু গোষ্ঠী এতে জড়িত। আসল কোনও পুলিশকর্মীর ভুয়ো অ্যাকাউন্ট হাতে থাকলে সুবিধা হয় প্রতারকদের। ওই পুলিশ আধিকারিকের কথায়, ‘‘পুলিশ হলে কাউকে চাপ দিতে বা ভয় পাওয়াতে বাড়তি সুবিধা হয়।’’ রাজ্য পুলিশের সাইবার শাখার এক কর্তা জানান, এর পরেই তালিকায় রয়েছেন ব্যাঙ্কের আধিকারিকেরা। তাঁর কথায়, ‘‘এমনও হয়, লাগাতার ইমেল করে প্রতিষ্ঠিত কারও ব্যক্তিগত তথ্য জেনে নেওয়া হয়। এর পরে শুধু ভুয়ো অ্যাকাউন্ট তৈরি করাই নয়, টেলি অপারেটিং সংস্থায় আবেদন করে ভুয়ো সিম কার্ডও তুলে নেওয়া হয়। তখন শুরু হয় ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তোলা বা আর্থিক সাহায্য চেয়ে মেসেজ করা।’’
লালবাজারের সাইবার শাখার এক কর্তা এ দিন বলেন, ‘‘আসল ব্যক্তির সঙ্গেই কথা হচ্ছে কি না, তা ভাল করে জেনে নিয়ে তবেই যে কোনও লেনদেনের পথে এগোনো ভাল। সতর্ক থাকাই প্রথম কর্তব্য।’’