প্রতীকী ছবি
আমপানের ক্ষতিপূরণ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে বেশ কিছু দিন ধরেই। এ বার বাড়ি ভাঙার নামে সেই ক্ষতিপূরণের টাকা নিজে নিয়েছেন ও ঘনিষ্ঠদের পাইয় দিয়েছেন, এই অভিযোগ তুলে এক পঞ্চায়েত সদস্যা এবং তাঁর স্বামীকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ চলল দত্তপুকুর থানার বামনগাছিতে। সোমবার ওই ঘটনার জেরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এলাকা। যদিও ওই পঞ্চায়েত সদস্যার দাবি, ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রাপ্ত টাকা ফেরত দিয়ে দিয়েছেন তাঁর পরিবারের সদস্যেরা।
এ দিন সকালে ক্ষতিপূরণ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তপতী মজুমদার নামে ওই পঞ্চায়েত সদস্যা ও তাঁর স্বামী শ্রীবাস মজুমদারকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় বাসিন্দারা। দম্পতিকে হেনস্থা করা হয় বলেও অভিযোগ। আরও অভিযোগ, ওই পঞ্চায়েত সদস্যার দু’জন ঘনিষ্ঠ, যাঁরা ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়েছেন, তাঁদের গাড়িও ভাঙচুর করা হয়।
পরে পুলিশ গিয়ে ক্ষিপ্ত জনতাকে বুঝিয়ে তপতীদেবী ও অন্যদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। তবে পুলিশ সূত্রের খবর, পঞ্চায়েত সদস্যার
বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি। বারাসত পুলিশ জেলার সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, দম্পতিকে হেনস্থা ও ভাঙচুরের অভিযোগে চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত চলছে।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বামনগাছির বড়পোল এলাকার ওই পঞ্চায়েত সদস্যার কাজ বকলমে দেখভাল করেন তাঁর স্বামী শ্রীবাসবাবু। পরিমল দাস নামে স্থানীয় এক বাসিন্দার অভিযোগ, ‘‘ওই পঞ্চায়েত সদস্যা প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের বঞ্চিত করে পরিবারের চার জন এবং কাছের মানুষদের ক্ষতিপূরণের টাকা পাইয়ে দিয়েছেন।’’ আরও অভিযোগ, ক্ষতিপূরণের টাকা চাইতে গেলে তপতীদেবীর ঘনিষ্ঠেরা মারধরের হুমকি দেন। এ দিন স্থানীয় বাসিন্দা রমা পাল বলেন, ‘‘বারবার ক্ষতিপূরণের দাবি জানানো সত্ত্বেও ওঁরা কানে নেননি। এমনকি বাড়াবাড়ি করলে ফল ভাল হবে না বলেও হুমকি দেওয়া হয়েছে।’’ সেই সঙ্গে কাটমানি নেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। মিতা সাউ নামে আর এক বাসিন্দার অভিযোগ, ক্ষতিপূরণের টাকা পেলেও কাটমানি বাবদ তা থেকে আড়াই হাজার টাকা দিতে বাধ্য করা হয়েছে তাঁকে।
এই সব অভিযোগ ঘিরেই এ দিন সকালে বামনগাছি স্টেশন সংলগ্ন বড়পোল এলাকায় ভিড় জমতে শুরু করে। মুখে মাস্ক পরে প্রথমে শ্রীবাসবাবুকে ঘিরে ফেলে জনতা। খবর পেয়ে কিছু লোক সঙ্গে নিয়ে তপতীদেবী সেখানে প্রতিবাদ করলে মারমুখী হয়ে ওঠে ক্ষিপ্ত জনতা। ওই পঞ্চায়েত সদস্যা ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের ধাক্কাধাক্কি ও হেনস্থা করা হয় বলে অভিযোগ। বিক্ষোভকারীদের পাল্টা অভিযোগ, এ দিন তাঁদেরও হুমকি দিয়েছেন শ্রীবাসবাবু ও তাঁর ঘনিষ্ঠেরা। সে কারণেই রেগে গিয়ে গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
যদিও এ দিন তপতীদেবী দাবি করেছেন, তাঁর পরিবারের সদস্যেরা ক্ষতিপূরণ বাবদ যে টাকা পেয়েছিলেন, তা ইতিমধ্যেই ফেরত দেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য অভিযোগ প্রসঙ্গে তাঁর স্বামী শ্রীবাসবাবু বলেন, ‘‘টাকা ফেরত দেওয়ার পরেও মিথ্যা অভিযোগে আমাদের ফাঁসানোর চক্রান্ত হচ্ছে।’’
ছোট জাগুলিয়া পঞ্চায়েতের প্রধান নুরুল হক বলেন, ‘‘ওই সদস্যা ও তাঁর পরিবার বাড়ি ভাঙার টাকা নিয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু তা ফেরত দিয়ে দিয়েছেন। আমপানের দু’মাস পরেও যাঁরা ওঁদের হেনস্থা করেছেন তাঁরা ভুল করেছেন। যাঁরা প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত, তাঁরা যাতে টাকা পান, সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’