এসএসকেএমের ট্রমা কেয়ারে চিকিৎসাধীন বাসুদেবের মরণোত্তর অঙ্গদানের প্রক্রিয়া শুরু হয়। ফাইল চিত্র।
সাইকেল নিয়ে বাজারে গিয়েছিলেন পেশায় কৃষক, ছাপান্ন বছরের প্রৌঢ়। বিক্রিবাটা সেরে স্ত্রীকে ফোন করে জানিয়েছিলেন, কিছু ক্ষণের মধ্যেই বাড়ি ফিরছেন। কিন্তু কিছু ক্ষণ পরে বাড়িতে খবর যায়, রাস্তায় পড়ে রয়েছেন ওই প্রৌঢ়। গাড়ির ধাক্কায় রাস্তায় ছিটকে পড়ে মাথায় গুরুতর চোট পেয়েছেন তিনি।
হুগলির গুপ্তিপাড়ার বাসিন্দা, বাসুদেব খাঁড়া নামে ওই ব্যক্তির ‘ব্রেন ডেথ’ হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার রাতে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। এর পরে চিকিৎসকদের কথা মতো পরিজনেরা অঙ্গদানে সম্মতি দেন। তার পরেই শুক্রবার সকাল থেকে এসএসকেএমের ট্রমা কেয়ারে চিকিৎসাধীন বাসুদেবের মরণোত্তর অঙ্গদানের প্রক্রিয়া শুরু হয়। তাঁর অঙ্গদানে নতুন প্রাণ পাচ্ছেন চার জন। প্রৌঢ়ের ভাগ্নে তুষার দাস জানান, গত ৩ ডিসেম্বর বাজারে গিয়েছিলেন তাঁর মামা। বাড়ি ফেরার পথে পিছন থেকে একটি গাড়ি ধাক্কা মারে তাঁকে। প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখান থেকে পিজির ট্রমা কেয়ারে স্থানান্তরিত করা হয়। ওই রাতেই সেখানে নিয়ে আসা হয় বাসুদেবকে।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, ট্রমা কেয়ার সেন্টারের রেড জ়োনে চিকিৎসা চলছিল। সিটি স্ক্যানে দেখা যায়, মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বেঁধেছে। কিন্তু অবস্থার তেমন কোনও উন্নতি হচ্ছিল না। বৃহস্পতিবার সকালেই চিকিৎসকেরা বুঝতে পারেন, ওই প্রৌঢ়ের ব্রেন ডেথ হচ্ছে। রাতে তা ঘোষণা করা হয়। তুষারের কথায়, ‘‘মামার দু’টি কিডনি, হৃৎপিণ্ড আর লিভার যে হেতু ঠিক আছে, তাই সেগুলি দিয়ে অন্য কোনও মুমূর্ষু রোগী নতুন জীবন পেতে পারেন। তাই আমরাও দান করতে রাজি হয়েছি।’’
‘রিজিয়োন্যাল অর্গ্যান অ্যান্ড টিসু ট্রান্সপ্লান্ট অর্গানাইজ়েশন’ (রোটো)-এর মাধ্যমে খোঁজ মেলে চার গ্রহীতার। জানা যাচ্ছে, হৃৎপিণ্ড পেয়েছেন মেডিকা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৫৫ বছরের এক ব্যক্তি। রানিগঞ্জের বাসিন্দা ওই ব্যক্তির হার্ট ফেলিওরের শেষ পর্যায় চলছে। অন্য দিকে, কিডনি পেয়েছেন এসএসকেএমেরই ২৮ ও ৩৯ বছরের দুই যুবক। আর যকৃৎ পেয়েছেন ওই হাসপাতালেরই ৬৫ বছরের এক বৃদ্ধ।