ঘটনাস্থল: এই ক্লাবের বেসমেন্ট থেকেই উদ্ধার হয় সাওয়ারমল ভীমসারিয়ার (ইনসেটে) দেহ। বুধবার। নিজস্ব চিত্র
সাতসকালে ক্লাবের বেসমেন্টে ভারী কিছু পড়ার আওয়াজ শুনে চমকে উঠেছিলেন নিরাপত্তারক্ষীরা। তাঁরা গিয়ে দেখেন, রক্তাক্ত অবস্থায় উপুড় হয়ে পড়ে আছেন ওই ক্লাবেরই এক বৃদ্ধ সদস্য। যিনি কিছু ক্ষণ আগেই ক্লাবে এসেছিলেন শারীরচর্চা করতে।
বুধবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে বালিগঞ্জ থানার শরৎ বসু রোডের একটি অভিজাত ক্লাবে। পুলিশ জানায়, ওই বৃদ্ধের নাম সাওয়ারমল ভীমসারিয়া (৭৫)। তিনি ১৯৮৫ থেকে ’৯০ সাল পর্যন্ত কলকাতা পুরসভার কংগ্রেস কাউন্সিলর ছিলেন। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, ওই বৃদ্ধ আত্মহত্যা করেছেন। পুলিশের দাবি, বৃদ্ধের পকেট থেকে যে সুইসাইড নোট উদ্ধার হয়েছে তাতে তিনি ‘মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়’ বলেই লিখে গিয়েছেন।
পুলিশ সূত্রের খবর, বড়বাজারের তারাচাঁদ দত্ত স্ট্রিটের বাসিন্দা সাওয়ারমল রোজ সকালে বাড়ি থেকে গাড়ি করে ভিক্টোরিয়া চত্বরে আসতেন। সেখানে প্রাতর্ভ্রমণ সেরে মাঝেমধ্যে যেতেন শরৎ বসু রোডের ওই ক্লাবে শারীরচর্চা করতে। এ দিনও তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে সকাল ৬টা নাগাদ পৌঁছন ওই ক্লাবে। সাড়ে ৬টা নাগাদ দশতলা বাড়িটির ছাদ থেকে বেসমেন্টে ভারী কিছু আছড়ে পড়ার আওয়াজ শুনতে পান রক্ষীরা। খবর পেয়ে আসে বালিগঞ্জ থানার পুলিশ। লালবাজারের হোমিসাইড বিভাগের আধিকারিকেরাও ক্লাবে পৌঁছন। সকলে মিলে ঘটনাস্থল পরীক্ষা করে প্রাথমিক ভাবে নিশ্চিত হন, ওই বৃদ্ধ নিজেই ঝাঁপ দিয়েছেন। বৃদ্ধের পকেট থেকে সুইসাইড নোট ছাড়াও একটি ভিজিটিং কার্ড মিলেছে। সেটি থেকে তাঁর পরিচয় আর বাড়ির ঠিকানা জানা যায়। সেই সময়ে সাওয়ারমলের গাড়িটিও ওই বেসমেন্টের পার্কিং লটে কিছুটা দূরে ছিল। তাতে চালকও ছিলেন।
ক্লাবের সভাপতি শরৎ কেডিয়া জানান, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে দেখা গিয়েছে, এ দিন ক্লাবে এসে প্রথমে শারীরচর্চা করতে ঢুকেছিলেন সাওয়ারমল। আচমকাই তিনি বেরিয়ে সোজা ছাদে উঠে যান। ‘‘আগুনের মোকাবিলায় আপৎকালীন পরিষেবার জন্য ছাদের দরজা লক করা থাকে না। তাই সহজেই ছাদে উঠে যেতে পেরেছিলেন ওই বৃদ্ধ। তিনি হাঁটতে যাচ্ছেন ভেবে কেউ কিছু সন্দেহও করেননি,’’— বলেন শরৎবাবু। সব ফুটেজই পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
বড়বাজার এলাকার ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর সাওয়ারমলের দুই ছেলে ও এক মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। তাঁর নিজস্ব ব্যবসাও রয়েছে। প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারীদের অনুমান, পারিবারিক সমস্যার জেরেই এমন ঘটিয়েছেন ওই প্রাক্তন কাউন্সিলর। এ দিন দেহ উদ্ধারের পরে এসএসকেএম হাসপাতালে তা ময়না-তদন্তের জন্য পাঠায় পুলিশ।