Hindu-Muslim

বিভেদ ভুলে ইদে মিশে গেল নাদিয়ালের দু’পাড়া

বিগত কয়েক বছরে একাধিক বার অশান্ত হয়েছে নাদিয়াল থানা এলাকা। বিশেষত, উভয় সম্প্রদায়ের বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব ঘিরে গোলমাল হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। তার থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বার হিন্দু-মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের মানুষই অশান্তি রুখতে একজোট হন।

Advertisement

মেহবুব কাদের চৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০২০ ০১:৩৯
Share:

প্রতীকী ছবি

ইদের দিনে মুসলিম মহল্লায় শান্তি বজায় রাখতে এগিয়ে এলেন হিন্দু সম্প্রদায়ের বাসিন্দারা। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি ঠেকাতে বন্দর এলাকার নাদিয়াল থানার বদরতলায় দিনভর মোটরবাইক নিয়ে টহল দিলেন হিন্দু স্বেছাসেবকেরা। উভয় সম্প্রদায়ের মানুষের এমন জোট বাঁধাকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন সকলেই।

Advertisement

বিগত কয়েক বছরে একাধিক বার অশান্ত হয়েছে নাদিয়াল থানা এলাকা। বিশেষত, উভয় সম্প্রদায়ের বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব ঘিরে গোলমাল হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। তার থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বার হিন্দু-মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের মানুষই অশান্তি রুখতে একজোট হন। ইদের কয়েক দিন আগেই বদরতলার মুসলিম পাড়ার একটি ক্লাবের সদস্যেরা পাশের হিন্দু পাড়ার ক্লাব-সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা সারেন। সকলে মিলে গড়ে তোলেন ‘বদরতলা পিস কমিটি’। কমিটির সদস্য, পেশায় শিক্ষক মহম্মদ

ওয়ারিস বলেন, ‘‘আমাদের এখানে কয়েক যুগ ধরে হিন্দু-মুসলিমদের বাস। কিন্তু গত পাঁচ-ছ’বছর ধরে কোথাও যেন সেই সম্পর্কে ফাটল ধরানোর চেষ্টা চলছিল। সম্প্রতি হিন্দু পাড়ার ক্লাবের সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করে আমরা সিদ্ধান্ত নিই, নিজেরা ঐক্যবদ্ধ হলে কেউ সেই সম্প্রীতিতে ভাঙন ধরাতে পারবে না।’’

Advertisement

বকরি ইদের সপ্তাহখানেক আগে বৈঠকে হিন্দু পাড়ার ক্লাবের সদস্যেরা নিজেরাই জানান, এ বার ইদের দিনে এলাকার চারটি মসজিদে নমাজিদের খেজুর, জল পৌঁছে দিয়ে সম্প্রীতির বার্তা দিতে চান তাঁরা। সেই মতো গত শনিবার বদরতলার মসজিদে সকাল থেকে হাজির হয়ে নমাজিদের হাতে খেজুর ও জল তুলে দিয়েছেন তাঁরা। আবার ওবাইদুর রহমান, মনসুর মোল্লা বা মহম্মদ ওয়ারিসরা যখন নিজের নিজের এলাকায় পশু উৎসর্গ করতে ব্যস্ত, সেই সময়েই এলাকায় শান্তি বজায় রাখতে দিনভর টহল দিয়েছেন রমেন ঘোষ, বাবুল প্রধান, রাম সর্দারেরা। নাদিয়াল হাইস্কুলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শচীন্দ্রনাথ কামিলাও ‘পিস কমিটি’র সদস্য। তাঁর কথায়, ‘‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করতে এলাকার উভয় সম্প্রদায়ের মানুষকেই সক্রিয় হতে হবে।’’

একই কথা বলছেন বদরতলা-পঞ্চাননতলা বারোয়ারি পুজো কমিটির সদস্য তথা পেশায় মৃৎশিল্পী অসিতরঞ্জন জোয়ারদার। তাঁর কথায়, ‘‘ধর্ম যে যার নিজের। কিন্তু উৎসব সকলের। ছোটবেলায় মুসলিমদের উৎসবে আমরা যেতাম। আমাদের উৎসবেও ওঁরা আসতেন। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে দেখছি, এই যাওয়া-আসার পালা তো চুকেই গিয়েছে। উল্টে কেবল অশান্তি। আগের জমানায় ফিরে যেতেই আমাদের এই যৌথ প্রয়াস।’’

পাড়ার হিন্দু ভাইদের এই স্বতঃস্ফূর্ত উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন মহম্মদ ওয়ারিস, মনসুর মোল্লারা। ওয়ারিস বলেন, ‘‘আসন্ন দুর্গাপুজোতেও একই ভাবে আমরা বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে এলাকার নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব নেব।’’ বদরতলা পিস কমিটির সদস্যেরা মানছেন, এই উদ্যোগের পিছনে নাদিয়াল থানার ওসি-র অবদান অনেক। তবে সাধারণ মানুষ এগিয়ে না-এলে পুলিশের একার পক্ষে এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা অসম্ভব। স্থানীয় বিধায়ক আব্দুল খালেক মোল্লা বলেন, ‘‘বদরতলার দুই সম্প্রদায়ের মানুষের উদ্যোগে যে ভাবে এলাকায় শান্তি ফিরেছে, তা বাংলার মডেল হওয়া উচিত।’’ আর কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) শুভঙ্কর সিংহ সরকার বলেন, ‘‘নিঃসন্দেহে বদরতলার দুই সম্প্রদায়ের মানুষের ধন্যবাদ প্রাপ্য।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement