KC Nag

KC Nag: অঙ্কের অলিগলি চেনাতে স্মরণে কেশবচন্দ্র

বেঁচে থাকলে তিনি হয়তো আজও এমন অঙ্ক কষতে দিতেন, যার সমাধান করতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খেতে হত গণিত বিশারদদেরও।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০২১ ০৪:৪১
Share:

প্রবাদপ্রতিম: কে সি নাগ।

বেঁচে থাকলে তিনি হয়তো আজও এমন অঙ্ক কষতে দিতেন, যার সমাধান করতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খেতে হত গণিত বিশারদদেরও। আজ, শনিবার অঙ্কের সেই প্রবাদপ্রতিম মাস্টারমশাইয়ের ১২৮তম জন্মদিন পালন করছেন তাঁর অনুগামীরা।

Advertisement

নাম কেশবচন্দ্র নাগ হলেও কে সি নাগ হিসেবেই তিনি বেশি পরিচিত। মৃত্যুর ৩৪ বছর পরে এখনও তাঁর অঙ্ক স্কুলের পাঠ্যক্রমে জায়গা করে নেয় নিয়মিত। আজ তাঁর জন্মদিনে একটি ওয়েবিনারের আয়োজন করেছেন কেশবচন্দ্রের গুণমুগ্ধ ও অনুগামীরা। এই প্রজন্মের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কেশবচন্দ্র ও তাঁর অঙ্কের পরিচয় ঘটানোই যে উদ্যোগের প্রধান লক্ষ্য।

তেল মাখানো বাঁশ বেয়ে হনুমানের ওঠার চেষ্টা, ফুটো বালতিতে জল ভরা অথবা পিতা-পুত্রের বয়সের হিসেবের নানা জটিল অঙ্কের জন্যই বিখ্যাত কেশবচন্দ্র। প্রজন্মের পর প্রজন্ম বড় হয়েছে তাঁর অঙ্ক কষে। তাঁর পৌত্র ত্রিদিবেশ নাগের মতে, খুব জটিল অঙ্কও জলের মতো সহজ করে বুঝিয়ে দিতে পারতেন কেশবচন্দ্র। তাঁর কথায়, ‘‘অঙ্ক বইয়ের যে কোনও অধ্যায়ের অনুশীলনীর সব ক’টি অঙ্কই দাদু শিখিয়ে দিতেন খুব প্রাঞ্জল ভাবে।’’ তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে ওয়েবিনারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন ত্রিদিবেশবাবু। পেশায় ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ত্রিদিবেশবাবু জানালেন, ভয় পেয়ে নয়, অঙ্ককে ভালবেসে কী ভাবে তার সমাধান করা যায়, সেটাই ছোটবেলায় শিখিয়েছিলেন কেশবচন্দ্র। তিনি বলেন, ‘‘দাদুর কাছে অঙ্ক শিখেছি বলে চাপও ছিল। স্কুলে কেউ অঙ্ক না পারলে শিক্ষকেরা বলতেন, তুই সমাধান করে দে। তুই তো কে সি নাগের নাতি। এমন একটা ভাব যেন, দাদুর কাছে অঙ্ক করেছি বলে সব অঙ্কই আমি পারব।’’ ত্রিদিবেশবাবু জানালেন, কেশবচন্দ্রের বইগুলির মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ পড়ুয়া অঙ্ক শিখেছে। তাঁর কথায়, ‘‘দাদু যদি এ সময়ে থাকতেন এবং অনলাইনে অঙ্ক শেখাতেন, তা হলে হয়তো সারা বিশ্বের পড়ুয়ারা তাঁর কাছে শিখতে আসত।’’

Advertisement

কেশবচন্দ্রকে নিয়ে আয়োজিত ওই ওয়েবিনারে অংশ নেবেন কমিশনার অব স্কুল এডুকেশন অনিন্দ্যনারায়ণ বিশ্বাস, ওয়েস্ট বেঙ্গল সেন্ট্রাল স্কুল সার্ভিস কমিশনের উপদেষ্টা পার্থ কর্মকার, ভবানীপুরের মিত্র ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক রাজা দে ও পৌত্র ত্রিদিবেশবাবু। যাঁরা ওই ওয়েবিনারে অংশ নিতে পারবেন না, তাঁরা পরে ইউটিউবে তা দেখতে পারবেন।

পার্থবাবুর মতে, ভীতি দূর করে অঙ্ককে কী ভাবে প্রাঞ্জল করে শেখানো যায়, কেশবচন্দ্র জীবনভর সেটাই শিখিয়েছেন। বর্তমান প্রজন্মকে কেশবচন্দ্রের সেই শিক্ষার সঙ্গেই পরিচয় করাতে চান তাঁরা ওই ওয়েবিনারের মাধ্যমে। পার্থবাবুও নিজের পেশাগত ব্যস্ততার বাইরে সময় পেলে অঙ্ক শেখান স্কুলপড়ুয়াদের।

মিত্র ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক রাজা দে জানালেন, ওই স্কুলেই ১৯৫৬ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত প্রধান শিক্ষক ছিলেন কেশবচন্দ্র। তার আগে ৩০ বছর ওই স্কুলেই কাজ করেছেন সহকারী শিক্ষক হিসেবে। রাজাবাবু বললেন, ‘‘শুনেছি, এক বার তৎকালীন রাজ্যপাল এসেছিলেন আমাদের স্কুলে। এসে স্বাভাবিক ভাবেই শিক্ষকদের সকলের সঙ্গে আলাপ করেন। শুধু বাকি থেকে যান কে সি নাগ। কারণ, তখন কেশবচন্দ্র স্যর অঙ্কের ক্লাস নিচ্ছিলেন। রাজ্যপাল এসেছেন শুনেও তিনি ক্লাস থামাননি। রাজ্যপালও অপেক্ষা করেন তাঁর ক্লাস শেষ হওয়ার জন্য। অঙ্কের প্রতি এতটাই ছিল স্যরের ভালবাসা ও নিষ্ঠা।’’ কেশবচন্দ্রের জন্মদিনে তাঁর জীবনী বিষয়ক একটি সিডি-ও প্রকাশ করা হবে বলে জানালেন মিত্র ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement