বিমানবন্দরের অন্তর্দেশীয় টার্মিনালের বাইরে সম্প্রতি সব যাত্রীই মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়েছেন। নিজস্ব চিত্র।
কলকাতা বিমানবন্দরে নেমে বাইরে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন দুই বিদেশি নাগরিক। কিন্তু নতুন শহরে পা রাখা মাত্র যে অভিজ্ঞতা তাঁদের হল, তা আক্ষরিক অর্থেই বেদনাদায়ক। বাইরে আসতেই ঝাঁকে ঝাঁকে মশা ঘিরে ধরে তাঁদের। বিমানবন্দরের অন্তর্দেশীয় টার্মিনালের বাইরে সম্প্রতি সব যাত্রীই মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়েছেন। এমনকি, ভিতরে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত জায়গায় যেখানে সিআইএসএফ জওয়ানেরা বসেন, সেখানেও ঢুকে পড়ছে মশার ঝাঁক।
একই পরিস্থিতি বিমানবন্দরের লাগোয়া বিধাননগর পুরসভার অধীন বিভিন্ন এলাকারও। তার মধ্যে রয়েছে সল্টলেকও। বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, সন্ধ্যা হলেই মশার উৎপাত বাড়ছে। এই অভিজ্ঞতা দু’-এক জন পুর প্রতিনিধিরও হয়েছে। মশার উপদ্রবের অভিযোগ এসেছে সল্টলেকের কেষ্টপুর ও ইস্টার্ন ড্রেনেজ খালের লাগোয়া ব্লকগুলি থেকেও। বাসিন্দারা জানান, ঘরে মশা তাড়ানোর তরল কিংবা কয়েল থাকলেও তাতে তেমন কাজ হচ্ছে না। ছোট ছোট মশার কামড় শরীরে জ্বালা ধরিয়ে দিচ্ছে নিমেষের মধ্যে।
ক্যাব কিংবা ট্যাক্সিচালকদের অনেকেরই অভিজ্ঞতা,সল্টলেক বা রাজারহাটের বিভিন্ন জায়গায় সন্ধ্যার পরে গাড়ি নিয়ে গিয়ে রাস্তায় অপেক্ষা করতে হলে মশার কামড়ে হাত-পা ফুলে যায়। রাজা সাহা নামে একট্যাক্সিচালকের কথায়, ‘‘দু’দিন আগে বৈশাখী আবাসনের বাইরে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছিলাম। মশার কামড়ে দু’-তিন মিনিটের বেশি দাঁড়াতেই পারিনি।’’সল্টলেক, বাগুইআটি, জ্যাংড়া, দশদ্রোণ, নারায়ণপুর-সহ বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে গত কয়েক দিন ধরে মশার উৎপাতের খবরপাওয়া গিয়েছে।
মশার উৎপাত ঠেকাতে বিমানবন্দরের বাইরে যেখানে যাত্রীরা অপেক্ষা করেন,বিকেল সাড়ে চারটের পর থেকে সেখানে প্রতি ঘণ্টায় মশার তেল স্প্রে করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এক উচ্চপদস্থ কর্তার কথায়, ‘‘এক বার স্প্রে করার আধ ঘণ্টারমধ্যে ফের মশা ফিরে আসছে। বিমানবন্দরের আশপাশে বিধাননগর, দমদম-সহ কয়েকটি পুরসভা রয়েছে। আমরা ওদের সঙ্গে দ্রুত বৈঠক করে পদক্ষেপ করার অনুরোধ জানাব।’’
বিধাননগর পুর কর্তৃপক্ষের একাংশের মতে, শীত শুরুর পরেই আচমকা আবহাওয়ায়পরিবর্তনের কারণে মশা বেড়েছে। পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের মেয়র পারিষদ বাণীব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘তেলের কোনওঅভাব নেই। প্রচুর তেল দেওয়া হচ্ছে। আমরা হাইপোক্লোরাইট দেওয়া নিয়েও চিন্তাভাবনা করছি। মনে হয়, আচমকা একটা গরম ভাব চলে আসাতেই মশা বেড়েছে।’’
আবহাওয়ার পরিবর্তনের তত্ত্বে সায় দিলেও মশারবাড়বাড়ন্তের পিছনে এলাকার পরিচ্ছন্নতাকেই দায়ী করছেন চিকিৎসকেরা।সংক্রামক রোগের চিকিৎসক অমিতাভ নন্দীর কথায়, ‘‘নাতিশীতোষ্ণ পরিবেশে মশার জীবনচক্র গতি পায় ঠিকই। কিন্তু মশার জন্মের কারণ অবশ্যই জমা জল। তাই আবহাওয়ার উপরে নির্ভর না করে এলাকায় মশার জন্মের জায়গাগুলি আগে নষ্ট করতে হবে। তা না হলে মশা বাড়বেই। আর মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্লিচিং দিয়ে কিছুইহয় না।’’
যদিও মশার উৎপাতের প্রসঙ্গে বিধাননগর পুরসভার নিকাশি বিভাগের মেয়রপারিষদ দেবরাজ চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘আমাকে কেউ তেমন ভাবে অভিযোগ জানাননি। মশা কোথায় জন্মাচ্ছে, তার ঠিক খবর স্থানীয় কাউন্সিলরেরা দিতে পারবেন। তাঁরা আমাকে তেমন কিছু জানাননি।’’